বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সাইন্স পড়েছেন কামরুন নেসা পলি৷ তারপর ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপার হিসেবে বেইজ আইটিতে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১৮ সালে এক কন্যা সন্তানের মা হন পলি। তখন চাকরি ছেড়ে দিতে হয় সন্তানকে সময় দেওয়ার জন্য। ঠিক তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন ঘরে থেকেই নিজে কিছু একটা করবেন।
পলির জন্ম চাঁদপুরে হলেও বাবার কর্মসুত্রে ঢাকার আগারগাঁওতে থাকতেন। বাবা আবুল হাশেম ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক। চার ভাইবোন নিয়ে তাদের সংসার বেশ ভালই যাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎ পলির বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। পুরো পরিবারে নেমে আসে বিপর্যয়। বাবার মৃত্যুর পর সিদ্ধেশ্বরীতে তার নানীর সাথে থাকতে শুরু করে পলির পরিবার। পলির নানী একজন মহিয়সী নারী ছিলেন। তার সহযোগিতাতেই পলির পরিবার খুঁজে পেয়েছে এক আপন ঠিকানা।
মা রেহানা বেগম ছিলেন গৃহিনী। তার কাছ থেকেই রান্নার প্রথম হাতেখড়ি হয় পলির। রান্না করতে বেশ পছন্দ করতেন, তাই সিদ্ধান্ত নেন, এই রান্নাকেই তিনি কাজে লাগাবেন। প্রথমে অনলাইনে একটি পেইজ খোলেন। শুরুতে তেমন সাড়া না পেলেও কম সময়ের মধ্যে ভালো সাড়া পেতে শুরু করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি৷ জমানো মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন পলি। কিছু ফ্রোজেন আইটেম, লাঞ্চ আইটেম আর আচার নিয়ে উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা তার। মনের মতো মজাদার খাবার নিয়ে হাজির হয় রঙিন হাড়ি। তাই উদ্যোক্তা পলি তার উদ্যোগের নামও দিয়েছেন ‘রঙিন হাড়ি’। এই রঙিন হাড়িতে ভোক্তাদের জন্য রয়েছে- হোম মেইড খাবার, আচার, লাঞ্চবক্স আর আঞ্চলিক খাবার।
তিনি বলেন, “হোমমেইড হেলদি খাবার কাস্টমারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমার মুল লক্ষ্য। মানুষকে ভালোবেসে কাজ করি। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই আমার মূল লক্ষ্য।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পলি বলেন: ভবিষ্যতে আমি আরও মজার সব নতুন খাবার আইটেম অ্যাড করতে চাই। এছাড়া আমি কিছু ফিউশন নিয়ে কাজ করবো। যেমনঃ নারকেল ইলিশ, ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে নারকেল দুধ দিয়ে ভর্তা, ইলিশের আচার, ইত্যাদি। মাটির হাড়িতে রান্না করা সব মজাদার খাবার নিয়ে কাজ করতে চাই।
“অনেক ভালো লাগে একজন উদ্যোক্তা হতে পেরে। সেই সাথে রয়েছে কাস্টমারদের ভালোবাসা। তবে আমার বাচ্চারা একটু বড় হলে রান্নার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও কাজ করতে চাই,” বলে জানালেন পলি।
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সব সময় ভালো মন-মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করার চিন্তা থাকতে হবে। তাহলে ভালো করার পাশাপাশি ভালোবাসাও পাওয়া যায়।”
সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা