‘‘ডিজাইন আমার শখ, আমার নেশা। খুব ছোটবেলা থেকেই নিজের জামা নিজেই ডিজাইন করতাম। আশেপাশের সবাই খুব পছন্দ করতো আর আমাকে দিয়ে ওদের ড্রেসগুলো করিয়ে নিত। ছোট ছিলাম তো এত বেশি প্রশংসা শুনে কখন যেন মাথায় ঢুকে গিয়েছিল ডিজাইনের ব্যাপারটা।’’-বলছিলেন আঁখি’স কালেকশনের স্বত্বাধিকারী সালমা রহমান আঁখি।
আঁখি কালেকশনের শুরুটা হয় উদ্যোক্তার কলেজে পড়াকালীন সময়ে। এর আগে থেকেই শখ করে নিজের এবং পরিচিত জনদের জামা ডিজাইন করতেন আঁখি। ইসলামপুরের সরু গলি থেকে মিরপুর, মিরপুর থেকে মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্প এমনকি ইন্ডিয়া থেকে যা আনতাম সেগুলোর হাতের কাজ নিজেই করতেন। কারণ উদ্যোক্তা নিজে খুব সুন্দর হাতের কাজ করতে পারতেন। এর মাঝেই উদ্যোক্তা মানসিক তৃপ্তি খুঁজে পেতেন।
গ্র্যাজুয়েশন শেষে বিয়ে করে দেশের বাইরে চলে যান উদ্যোক্তা আঁখি। হঠাৎই জানতে পারেন নিজের ব্রেইন টিউমারের কথা। পিছু পা হন নি আঁখি। অদম্য সাহসিকতা দিয়ে ব্রেইন টিউমারের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন।
ব্রেইন টিউমারের অপারেশনের পরও বেড রেস্ট ছাড়া কিছুই করার ছিল না দেখে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ডিজাইন করতেন উদ্যোক্তা।
সালমা রহমান আঁখি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, সুস্থ্য হয়ে আবার কাজের পেছনে লাগি। ২০০১ সাল থেকে পুনরায় শুরু করি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত লেগে আছি। সে সময় সারা রাত বাসায় সহকারীবে নিয়ে কাপড় কাটতাম ভোরে কারখানায় নিয়ে যেতাম। আবার বাসায় এসে সুই সুতার কাজ করতাম। এমনও হয়েছে কাজ করতে করতে খাওয়ার কথা ভুলেই যেতাম। একটা ব্লকের ড্রেস সেল করে সেটার লাভের টাকা দিয়ে আরো দুইটা ড্রেস বানিয়ে আস্তে আস্তে আজকে আমি এতদুর এসেছি।
তিনি বলেন, অনেক বাঁধা এসেছে কিন্তু আমি থমকে যাইনি ভয় পাইনি। মনে সাহস রেখে কাজ করে গেছি, প্রচন্ড পরিশ্রমী একজন মানুষ আমি।
ইসলামপুরের সরু গলি থেকে শুরু করে এখন লন্ডন সহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই সুনাম কুড়িয়েছে আঁখি’স কালেকশন।
আঁখি বললেন, বর্তমানে রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি ছোট্ট শোরুম আছে। যেখানে লেডিস থ্রিপিছ, কুর্তি, শাড়ি, সেলোয়ার, কামিজ, ওড়না, ছেলেদের পাঞ্জাবি ও ফতুয়া আছে। দেশের বাইরেই আমার বেশি প্রোডাক্ট যায়। কাপল সেট থেকে শুরু করে বেবিদের ড্রেসও আমি করে থাকি। চেষ্টা করে যাচ্ছি কোয়ান্টিটি না বাড়িয়ে কোয়ালিটিফুল কিছু করতে।
‘‘খুব ভালো লাগে যখন দেখি কোন ক্লাইন্টকে নিজের ডিজাইন করা ড্রেস পরতে।’’
আঁখি জানালেন, এখনতো বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের সব দেশেই আমার ডিজাইন করা বৈশাখি শাড়ীর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন আমার ক্লাইন্টরা।গত বৈশাখে একটা ডিজাইনের শাড়ীর হাজার হাজার পিস সেল হওয়ার রের্কড এখন পর্যন্ত আঁখিস কালেকশানেরই।আমার কাষ্টমাররা যদি আমার উপর ভরসা না রাখতেন তাহলে এটা কখনই সম্ভব হতো না। তারাই আমার ব্লেসিং।সব সময় আমাকে সাহস দেন পাশে থাকেন।
‘যেখানে শপিং মল গুলোতে যেয়ে মানুষ পছন্দ করতে কনফিউসড হয়ে যায় সেখানে অন-লাইনের মত একটি কঠিন সেক্টরে না দেখে চোখ বন্ধ করে আঁখিস কালেকশানে অর্ডার করে দেয় তখন সত্যিই মনে হয় হ্যা আমি আমার কাষ্টমারদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি এবং হয়তোবা একটু হলেও কিছু করতে পেরেছি’-বলছিলেন উদ্যোক্তা আঁখি।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা