তাহমিনা আমিন ইভা ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ব্যাংক জবের মাধ্যমে। সময়ের সাথে পরবর্তীতে হয়েছেন একজন উদ্যোক্তা।
সিটি কলেজ থেকে বি’কম কমপ্লিট করার পর একটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট অফিসার হিসেবে যোগদান করেন তিনি। কিন্তু প্রথম সন্তান হবার পরে সব কিছু নিয়ে সামলে ওঠা সম্ভব হচ্ছিল না তাহমিনা আমিন ইভার। বাচ্চার দেখাশোনা করা, নিজের অফিস, বাসা সবকিছু সামলে উঠতে হিমশিম খেতে হচ্ছিলো তাকে। বাচ্চার দেখাশোনা করার কেউ ছিল না বলে বাধ্য হয়েই চাকরিটা ছেড়ে দেন তিনি।
কিন্তু বিপত্তিটা ঘটলো অন্য জায়গায়। চাকরি ছেড়ে আরো বেশি হতাশ হয়ে পড়লেন তিনি। কিছু একটা করার তাগিদ মনের মধ্যে সবসময় নাড়া দিতে থাকল ইভাকে । সব সময় ভাবতেন নিজের কিছু একটা করা দরকার। সিদ্ধান্ত নিলেন উদ্যোক্তা হবেন তিনি।
উদ্যোক্তা হবার পথটা প্রথমে সহজ ছিল না। প্রাথমিকভাবে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেনিংও শুরু করে ফেললেন তিনি। জাতীয় মহিলা সংস্থা থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট সহ তিন মাসের একটি বিউটিফিকেশন কোর্স কমপ্লিট করলেন। এছাড়াও গৃহসুখন থেকে বিউটি পার্লার এবং ব্লক বাটিকের ট্রেনিংও নিয়েছিলেন তিনি। শুরুটা করেছিলেন বাসার মধ্যে একটা রুমে ব্লক বাটিকের কারখানার মাধ্যমে। প্রথম থেকেই অনেক বেশি অর্ডার আসতো উদ্যোক্তার কাছে। একদিকে ছোট বাচ্চা কোলে আরেকদিকে সারাদিন অর্ডার সাপ্লাই এভাবেই কাটতো উদ্যোক্তার দিন। এরপর উদ্যোক্তার তার সাথে একজন কর্মী নিয়োগ দিলেন।
২০০৮ সালে উদ্যোক্তার এসএমই ফাউন্ডেশন এর সাথে যাত্রা শুরু ওখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে নিলেন তিনি। এরপর বুটিকস এর পাশাপাশি বিউটি পার্লার খুলে ফেললেন তিনি। পার্লারটি খোলা হয়েছিল নিজেদের বাসারই নিচ তলাতে। ব্যবসায় প্রথম মূলধন ছিল ৩০ হাজার টাকা। পার্লারের কাজ ভালই চলছিল। ৫ বছর পার্লার চালানোর পর প্রোডাক্ট বানানো শুরু করলেন তরুণী এই উদ্যোক্তা। এরপর তিনি পুরোপুরি চলে আসলেন প্রোডাকশনে, ট্রেড লাইসেন্স করলেন, প্যাকেট করলেন। অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বাজারে নিয়ে আসলেন হারবাল উপটান। একে একে অংশগ্রহণ করলেন বিভিন্ন মেলাতেও।
জীবনের সাফল্য পেতে উদ্যোক্তাকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেক। মূলধন জোগার, সংসার সামলানো, বাচ্চাকে সামলে সারাদিন কাজ করা। অদম্য আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ় মনোবল রেখে এগিয়ে চলেছিলেন উদ্যোক্তা সামনের দিকে। ছায়ার মতো সার্বক্ষণিক পাশে ছিলেন তার স্বামী। তিনি কখনোই তার কোনো কাজে বাধা দিতেন না। তরুনী উদ্যোক্তা ইভা মনে করেন একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ধৈর্যের পাশাপাশি সততা এবং পরিশ্রম অনেকটা বেশি দরকার হয়। অনেক বেশি সাহসের দরকার হয় সমস্ত বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবার জন্য।
উদ্যোক্তা ইভা বর্তমানে পরিচালনা করছেন “ইভা এন্টারপ্রাইস”নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কাজ করছেন হারবাল প্রোডাক্ট যা ফুললি অর্গানিক। এছাড়াও উদ্যোক্তা কাজ করছেন ” ইভা’স কিচেন “নিয়ে, ডেলিভারি দিচ্ছেন ঢাকাতেই। কঠিন পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসের বলে উদ্যোক্তা জীবনে অর্জন করেছেন অনেক অ্যাওয়ার্ড আর সম্মাননা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। নিজের মেধা আর আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা।
মার্জিয়া মৌ,
উদ্যোক্তা বার্তা