নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তরুণ টিনা চেনকে কম কষ্ট পোহাতে হয়নি। নারী হয়ে নতুন একটি দেশে নিজের ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য অসম্ভব দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগোতে হয়েছে টিনাকে। যুক্তরাজ্যের ‘হিউম্যানি টি’ নামক একটি পানীয়র প্রতিষ্ঠাতা টিনা চেন। মাত্র ২৮ বছর বয়স তাঁর। তবে এখনই অন্য তরুণদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন তিনি।
২০১৮ সালে লন্ডনে যাত্রা শুরু করে টিনা চেনের চায়ের উদ্যোগ। করোনার মধ্যেও বেশ স্থিতিশীল ছিল তাঁর ব্যবসা। এ বছর বেশ এগিয়েছে তাঁর ব্যবসা। টিনা চেন বলেন, যখন কেউ একদম একা নতুন কিছু শুরু করতে চান, তাঁর জন্য পথটা খুব সহজ নয়। প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য বাছাই, এরপর তা তৈরি ও বাজারজাত করা। প্রতিটি ধাপই কঠিন। পণ্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে টিনাকে সাহায্য করেছে তাঁর ঐতিহ্য।
সেটা কী রকম? টিনার জন্ম তাইওয়ানে। যখন তার চার বছর বয়স, পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে আসেন তিনি। তাইওয়ানে তাঁর পরিবার ‘বাবল টি’ খেত। এটা দুধ, ফ্লেভারড চা ও টেপিয়োকা পার্লের তৈরি একধরনের মিষ্টি পানীয়। উপাদানগুলো তাইওয়ানেই বেশি পাওয়া যায়। সে কারণে এ চা তাইওয়ানিদের কাছেই বেশি জনপ্রিয়। খেতে হয় মোটা স্ট্র দিয়ে।
টিনা অবশ্য একসময় এমবিএ করতে লন্ডনে যান। ইমপেরিয়াল কলেজে পড়ালেখা শুরু করেন। সে সময় বাসায় খুব ‘বাবল টি’ বানাতেন তিনি। কারণ লন্ডনের সুপারমার্কেটগুলোয় বিভিন্ন ধরনের কফির সুব্যবস্থা থাকলেও চা তেমন ছিল না।
একসময়, এই চিন্তাই তাঁর মাথায় আটকাল। তাঁর মনে হলো, তিনি যদি ছোটবেলার পছন্দের এই পানীয়কে আরেকটু পরিবর্তন করে এখানে চালু করেন, তাহলে কেমন হয়? অল্প চিনি ও উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আসা দুধের মিশ্রণে এই চা তৈরির কথা ভাবলেন তিনি। তবে কঠিন পরিস্থিতিটা এল পরে। যেহেতু আগে কখনো এই খাতে কাজ করেননি, আবার পরিবারের কেউই এই খাতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তাই কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না টিনার। এ কারণে খুব ছোট পরিসরেই কাজ শুরু করেন টিনা। অনলাইন থেকে রেসিপি নিয়ে বাসায় বসেই শুরু হলো তাঁর কাজ।
লন্ডনের মতো জায়গায় তিনি ছিলেন একা। পরিবারের কোনো সদস্য ছিল না। টিনা একজন অংশীদার খুঁজতে থাকলেন। তবে এমন কাউকেই পেলেন না, যে কিনা তাঁর মতো পুরোটা ঢেলে দেবেন। তাই পণ্য বানানো, বিক্রি সবই একাই করতেন টিনা। সেন্ট্রাল লন্ডনে একটি মার্কেটের সামনে নিজে স্টল খোলেন। রাতে তিনি অন্য একটি বাণিজ্যিক কিচেনে তাঁর পণ্য বানাতেন, বোতলজাত করতেন, সবই হতো হাতে। পরে সকালে স্টলে নিয়ে বিক্রি করতেন এই চা।
টিনার তখন ঘুম হতো খুব কম। তিনি বুঝতে পারছিলেন, নিজের ওপর অবিচার করছেন, যা একজন নতুন উদ্যোক্তার জন্য মোটেও ঠিক নয় বলে মনে করেন টিনা। তাই নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য টিনার পরামর্শ হলো, সুস্থ থাকতে হবে, নিজের যত্ন নিয়ে কাজ করতে হবে। পথচলায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় টিনাকে। কোম্পানির নাম নিয়ে কপিরাইট সমস্যায় পড়েন। এসব প্রতিবন্ধকতায় খুব কান্না পেত টিনার। কান্না থামাতে যে কত কিছু করতেন!
তবে একসময় বুঝতে পারেন, কান্না তাঁর আবেগ প্রকাশে সাহায্য করছে। কান্না করার পর ভালো অনুভব করতেন তিনি। কান্নার কারণে তাঁর ভেতর আবেগ জমে থাকত না। এ কারণে টিনা মনে করেন, ব্যবসায় সফলতার জন্য কান্নাও জরুরি। এ বছর একটি সফল ক্রাউড ফান্ডিং ক্যাম্পেইনের পর তিনি তাঁর ‘হিউম্যানি টি’ উৎপাদনকে নিয়ে গেছেন কারখানা পর্যায়ে। এরই মধ্যে দুজন কর্মীও নিয়োগ দিয়েছেন।
(তথ্যসূত্র ও ছবি ইন্টারনেট থেকে)