রাজশাহীর বায়াতে জন্ম, সেখানেই বেড়ে ওঠা মোঃ সালেক আহম্মেদ এবং সাহেদা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে মোঃ সোহেল আহমেদের। মাধ্যমিক দিয়েছেন বায়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে, রাজশাহী সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করার পর বিএসসি’র জন্য ভর্তি হলেন অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ট্রিপলিতে বিএসসি শেষ করলেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ নয় বছর চাকুরি করেছেন।
চাকুরিরত অবস্থায় যখন সোহেল আহমেদ দেখতেন অফিসের ‘বস’রা অনেক মানুষের কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে। তার চোখের সামনে অনেক বেকার, অসহায় মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়ার পর খুশির অশ্রুতে লোকগুলোর চোখ ছলছল করতো। সেই দৃশ্য সোহেল আহমেদকে প্রথম ভাবিয়ে তুলেছিলো এমন কিছু একটা করবো যাতে আমিও অনেক মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি।
পত্রিকাতে চোখে পড়ে রাজশাহীতে ট্যানারি শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনা। মনে ভাবনা এলো আমি তো চামড়াজাত পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করতে পারি। ভাবনা থেকে ২০১৯ সালে চাকরি থেকে বের হয়ে এলেন। ৬৪ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন নতুন উদ্যোগের। কিন্তু বাঁধা এলো চলার পথে, ভুল একটা চক্রে জড়িয়ে তিনি অপ্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতি ক্রয় করে ক্ষতির সম্মুখীন হলেন। কিন্তু থেমে গেলেন না, দৃঢ় মনোবল প্রবল ইচ্ছা নিয়ে আবারো কাজ শুরু করলেন। প্রথমে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হলেও আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা।
রাজশাহীর বায়াতে ‘স্যাম লেদার বিডি’ নামে তার প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় তার কারখানা রয়েছে। বর্তমানে তার কর্মী সংখ্যা ৭ জন। তবুও কাজের প্রতি ভালোবাসা থেকে এখনো নিজ হাতে পণ্যের ডিজাইন ও রং করে থাকেন। বাকি কর্মীদের সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে তাদের কাজে সহায়তা করেন। তার প্রতিষ্ঠানে লেডিস পার্স, বিভিন্ন সাইজের ব্যাগ, জেন্টস ওয়ালেট, বেল্ট, ঘড়ির বেল্ট আরো নানা রকম পণ্যের সমাহার রয়েছে। অনলাইনে “SAM LEATHER BD” নামে একটি পেজ রয়েছে যেখান থেকেও বেশ ভালো সাড়া পান।
বিসিক, বিডাতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কাজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য। এছাড়াও বর্তমানে তিনি চামড়াজাত পণ্যগুলো নিয়ে পড়াশোনা করেন নিয়মিত, যাতে নিত্য নতুন ডিজাইন, মানসম্মত পণ্য তৈরী করতে পারেন। চামড়াজাত পণ্য নিয়ে কাজ করে নিজ প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশে চামড়াজাতের মানসম্পন্ন পণ্যের ভিত্তি মজবুত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল আহমেদ। তার পণ্যের গুণগত মানের কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার পণ্য ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত।
তরুণদের উদ্দেশ্যে সফল উদ্যোক্তা সোহেল বলেন, ‘শুয়ে-বসে না থেকে কাজ শুরু করে দাও। সব সময় মনে রাখতে হবে, একবার না পারিলে দেখ শতবার’।
তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা