১৯৭১ সাল, স্বাধীন বাংলাদেশের সূর্য উঠলো! তখন ঘরের বড় সন্তান একটি কিশোর। আট ভাই বোনের সংসারে উপার্জিত ব্যক্তি শুধুমাত্র কিশোরের বাবা! কিশোরটি তখন নবম শ্রেনির ছাত্র। কিশোরটি দেখতে পেল তার বাবা ১১ সদস্য বিশিষ্ট সংসারে পড়াশোনা ও খাওয়ার খরচ একা সামলাতে পারছেনা। কিশোরটি তার পড়াশোনা বন্ধ করে বাবাকে সহযোগিতা করতে শুরু করলেন। বাবার পাশে এসে দাঁড়ালেন বিনয় ভূষণ ব্যাপারী। বাবা বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি করেন।
শুরুতে বিনয় ভূষণ ব্যাপারী বাঁশ ও বেতের পণ্য তৈরি করে বাবার সাথে ফেরি করে বিক্রি করতে শুরু করেন। তারপর নিজেই গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে শহর বন্দরে গিয়ে তার পণ্য বিক্রি করতেন। এভাবে বেশ কিছুদিন ফেরি করতে থাকেন।
১৯৭৫ সালে আগৈলঝাড়া একটি ট্রেনিং সেন্টার গড়ে ওঠে। সেখানে বিনয় ভূষণ ব্যাপারী ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে নিয়োগ পান। সেখান থেকে সে সম্মানী পান এক হাজার সাতশত টাকা। চাকুরির বয়স যখন ছ’মাস তখন তপন বিশ্বাস নামে এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হয় যিনি বিদেশে সাপুড়ে ঝুড়ি রপ্তানি করেন। তপন বিশ্বাস, উদ্যোক্তাকে বলেন আপনি আমাকে ঝুড়ি তৈরি করে দিবেন এবং প্রতিটি ঝুড়িতে ২ টাকা করে পারিশ্রমিক পাবেন। রাজি হয়ে যান বিনয় ভূষণ। তিনি চিন্তা করেন আমি, আমার বাবা ও ভাই যদি ঝুড়ি তৈরি করি তবে প্রতিদিন ৫০ টি ঝুড়ি বানাতে পারব। চাকরি ছেড়ে দিলেন। এবারে সে অর্ডারের ঝুড়ি তৈরি করেন এবং পাশাপাশি অন্যান্য বাঁশ ও বেতের পণ্য তৈরি করে বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেন।
বছর দুয়েক পরের কথা, বরিশালে পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে, প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান নামে এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হয়, যিনি দেশের বাইরে পণ্য রপ্তানি করেন। তিনি ছিলেন বাংলা ক্রাফটের সদস্য। বাংলা ক্রাফটের সকল সদস্যগণ একত্রিত হয়ে ফিলিপাইন ও ভারত থেকে মাস্টার ট্রেনার এনে এক বছরের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। সারা বাংলাদেশে মাত্র সাতজন প্রশিক্ষনার্থীর মধ্যে ‘বিনয় ভূষণ ব্যাপারী’ বৃহত্তর খুলনা বিভাগের একজন হিসেবে সুযোগ পান।
এক বছর প্রশিক্ষণ করার পরে তিনি বাঁশ ও বেতের সকল ধরনের পণ্য দেশী ও বিদেশি চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করতে পারেন। ট্রেনিং শেষে তিনি গ্রামে ফিরে বিসিকের আওতায় প্রথমে ২০ জন যুবককে ৩ মাস প্রশিক্ষণ দেন। তারপর বিভিন্ন উপজেলায় আরও কিছু মানুষের প্রশিক্ষণ দেন।
১৯৮২ সাল থেকে তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্ডার আসতে থাকে। তার বাবা এবং ভাইয়ের সহযোগিতায় তারা দেশে ও দেশের বাইরে পণ্য তৈরি করে পৌঁছে দেন।
এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি। তার তৈরিকৃত পণ্যের মধ্যে ফলের ঝুড়ি, সাপুড়ে বাস্কেট, চায়ের ছাঁকনি সহ বেশ কিছু পণ্য ইটালি, আমেরিকা ও জাপানে চাহিদা অনুযায়ী পৌঁছে দেন।
বর্তমানে তিনি এবং তার ভাই বিপুল চন্দ্র ব্যাপারী ৫০জন মহিলা ও পুরুষ কর্মী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। তাই এই প্রতিষ্ঠানটি সবার কাছে ‘বাঘার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প’ নামে পরিচিত।
বিনয় ভূষণ বলেন আমি ফেরিওয়ালা থেকে উদ্যোক্তা হয়েছি। তখন আমার মাসিক আয় ছিল ৩০০০/টাকা এবং বর্তমানে আমরা দুই ভাই আলাদা ভাবে ৩৫/৪০ হাজার টাকা মাসে উপার্জন করছি।
কে.এম. সুলতান
সিনিয়র এসএমই প্রতিনিধি, গৌরনদী, বরিশাল