পঞ্চমালা, বাবার দেওয়া নাম। বাড়ি পটুয়াখালী হলেও বেড়ে উঠেছেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে নানা বাড়িতে। পুরো নাম কানিজ ফাতেমা জ্যোতি। ৬ বোনের মধ্যে জ্যোতি ৫ম। বাবা কর্মসূত্রে দেশের বাইরে থাকায় সংসারের সবকিছু একাই সামলাতো মা।
রং নিয়ে খেলা করতে পছন্দ করতেন জ্যোতি। ছোট্ট জ্যোতির রঙ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা। রং নিয়ে খেলতে বসলে পৃথিবীর আর কোন কিছুরই খেয়াল থাকতো না তার। ছবি আঁকার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেয়ার সুযোগ না হলেও বিটিভির “মনের কথা” অনুষ্ঠানটি তাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। সেখান থেকেই কৌশল রপ্ত করেন। বাবা দেশের বাইরে থাকায় রং পেন্সিল পাওয়াটা খুব সহজ ছিলো।
জ্যোতির কাছে জীবনটা সবসময়ই একটা স্বপ্নের মতো। স্বপ্নে যেমন অনেক রঙ থাকে জীবনটাও তেমনই কিছু রঙের ছটা। কখনও রংধনুর সাত রঙ, কখনোবা সাদাকালো। জ্যোতি সবসময়ই চেয়েছেন জীবনটা অন্যভাবে সাজাতে। কখনোই সাধারন ভাবে কিছু ভাবতে ভালো লাগতোনা তার।
ইউবি প্রেসকে সেই গল্প বলেছেন জ্যোতি। তিনি বলেন, “যখন কলেজে পড়ি মেজো আপুর কাছ থেকে প্রথম কাপড়ে পেইন্ট করা শিখি। এইচএসসি শেষ করার পর চারুকলায় পড়ার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আশেপাশের পরিবেশ বিপক্ষে ছিলো কিন্তু আব্বা-আম্মার উৎসাহ ছিলো বলেই সেই যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলাম”।
২০০৬ সালে চারুকলায় ভর্তি হন। ২০১৪তে পড়ার পাঠ চুকিয়ে কারণবশত আর কাগজে ছবি আঁকা হলোনা জ্যোতির। একটি বেসরকারি ইন্সটিটিউট এ কিছুদিন ফ্যাশন ডিজাইনে শিক্ষকতা করেছেন। ২০১৬ সালে বাবাকে হারান। খুব মানসিক কষ্টে কাটছিলো দিন। তখন হঠাৎ করেই কষ্ট থেকে দূরে থাকতে আর সময় কাটানোর জন্য কিছু গহনার জিনিসপত্র কিনে গহনা বানানো শুর করলেন। কিছু সিম্পল মালা বানালেন। হাজবেন্ড একটা পেইজ ওপেন করে দিলো এবং উৎসাহ দিলো এটা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। পুঁতি দিয়ে ছোটবেলা থেকেই টুকটাক মালাও বানাত জ্যোতি। বিশেষ করে ঈদের সময় যে মালা কিনে দিতো ওটা ছিঁড়ে আবার নিজের মত করে বানাত।
ওপেন হওয়া পেইজটার কি নাম দেয়া যায়?এটা নিয়ে ভাবনা শরু হলো।।তারপর বাবার কথা ভেবে নিজের নাম ‘পঞ্চমালা’ দিয়েই নামকরন করলেন। এরপর আস্তে আস্তে গহনাতে নতুন নতুন কনসেপ্ট বাস্তবায়ন শুরু। কাঠের বেজ এর ওপর পেইন্ট করা, পুঁতি, কাপর, সুতা,দড়ি দিয়ে গহনা বানাতে খুব ভালো লাগে তাই সেগুলোই তৈরি করেন নতুন উদ্যোক্তা জ্যোতি। পেইজে গহনা ছাড়াও আছে নঁকশি টিপ।
এর মধ্যে ৫টি মেলায় অংশ নিয়েছেন। অনেক সারাও পেয়েছেন। জ্যোতি একায় গহনা গুলো তৈরি করেন যখন কাজের বেশি চাপ থাকে বিশেষ করে মেলার আগে, তখন ছোটো বোন সাহায্য করেন। এসব কাজে সময় দিতে হয় অনেক তাই পরিবারের সাপোর্ট টাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কথা প্রসঙ্গে জ্যোতি আবারও বলেন, ” পঞ্চমালা হাওলাদার নামেই একজন প্রতিষ্ঠিত গহনা ডিজাইনার হতে চাই। একটা গহনা ডিজাইন করতে অনেকটা সময় লাগে, ডিজাইন, রং,সাথে ম্যাচিং মেটারিয়ালস। সবসময় বেস্ট জিনিসটাই আমার প্রিয় ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। অনেক সময় গহনার ডিজাইন করার সময় জটিলতা দেখা দেয়। তবুও বলবো এই কাজটি করতে ভীশন ভালোবাসি। আরো সামনে এগিয়ে যেতে চাই, স্বপ্ন দেখি একটি অফলাইন শোরুমের, নিজের একটা ফ্যাক্টরী যেখানে নারী-পুরুষ সবাই মিলেমিশে কাজ করবে। যে কোনো অনুষ্ঠানে সবাই দেশী হ্যান্ডমেইড গহনা ব্যবহার করবে। সকলের ভালোবাসা আর দোয়া নিয়ে আরো সামনে এগিয়ে যেতে চাই,সবার জন্য শুভকামনা।”
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা