উদ্যোক্তা- ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট

প্রতি পাঁচ বছর পর আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে পালাবদল চলে এবং আমেরিকানদের সাদা বাড়ির নতুন অভিভাবক নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে তোলপাড় সৃষ্টি হয় তা পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে এক কৌতূহলের বিষয়। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এই বছর ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারী গৃহে প্রবেশ ঘটেছে জো বাইডেনের। পাঁচ বছর পর নতুন সরকার প্রধান নির্বাচিত হলে বর্তমান সরকার প্রধানকে সাদা বাড়ির মালিকানা হস্তান্তর করে সকল কিছু বুজিয়ে দিতে হয়।

সেক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের শাসনামলের সব সরকারি কাগজপত্র, দলিল-দস্তাবেজ, তথ্য-উপাত্ত, প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রমসহ যাবতীয় কিছু সংরক্ষণ করার দায়িত্ব পাবে নব নির্বাচিত ১৫তম প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার সম্পর্কে জানতে পারে।

প্রেসিডেন্টের পছন্দ অনুযায়ী জায়গায়ই সাধারণত প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়। এর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হবে এবং সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হলে, তা ‘ন্যাশনাল আর্কাইভস অ্যান্ড রেকর্ডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নারা) কর্তৃক পরিচালিত হবে এবং ট্রাম্প লাইব্রেরিটি আমেরিকান প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরির নিয়মানুযায়ী অন্য ১৪টি প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরির সঙ্গে যুক্ত হবে।

আমেরিকার ক্ষমতার মসনদ থেকে বিদায় নেওয়ার পর অনলাইনে চলে এসেছে ‘দ্য ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি’।

সাইটটিতে এখন আর্কাইভে থাকা হোয়াইট হাউজের ওয়েবসাইটগুলো ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্টগুলোর সংকলন রাখা হয়েছে। মূলত বিদায়ী প্রশাসন সম্পর্কিত নানা তথ্য এখানে থাকবে, যা সাধারণ মানুষ দেখতে পাবে।

১৪টি প্রেসিডেন্সিয়াল লাইবেরির মধ্যে সবগুলোই নারা কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে। শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের লাইব্রেরি দুটি ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত হয়।

আমেরিকান প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি তৈরির উদ্যোক্তা ছিলেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম রাষ্ট্রপতি। তিনি চার মেয়াদে ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত ১২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি জাতিসংঘের প্রস্তাবক ছিলেন। ১৯৩৯ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এর গোড়াপত্তন করেন।

ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট ১৯৮২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। ছোট বেলা থেকেই ধনী পরিবারে বেড়ে উঠেছেন রুজভেল্ট। তার পিতা জেমস রুজভেল্ট প্রথম ১৮৫১ সালে হার্ভার্ড আইন স্কুল থেকে স্নাতক পাস করেন। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ডেমক্রাট সদস্য এবং ছোট থাকতেই তিনি একদিন ফ্রাঙ্কলিনকে হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট গ্রেভার ক্লেভার‌্যান্ডের সঙ্গে দেখা করিয়ে ছিলেন।

শৈশবেই অনেক বিদেশ ভ্রমন করার ফলে তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সেই জার্মান, ফরাসিসহ বেশ কিছু ভাষা শিখে ফেলেন। হার্ভার্ড কলেজে পড়াকালীন তিনি সাধারণ মানের ছাত্র ছিলেন। পরে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, “আমি কলেজে চার বছরের জন্য অর্থনীতি পাঠ্যক্রম নিয়েছি এবং আমার যা কিছু শেখানো হয়েছিল তা ভুল ছিল’।

শৈশবেই রুজভেল্ট রাইডিং, শুটিং, সারি, পোলো এবং লন টেনিস খেলতে শিখেছিলেন। এ সময় তিনি গলফ খেলাও শিখেছিলেন।

রুজভেল্ট তার ব্যক্তিগত ও প্রেসিডেন্সিয়াল দলিলপত্র সমূহ ফেডারেল গভর্নমেন্টকে দান করেন এবং হাইড পার্কে তার নিজস্ব সম্পত্তিতে লাইব্রেরি এবং মিউজিয়াম ভবনটি প্রতিষ্ঠিত করেন।

প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট মনে করতেন, ‘একজন প্রেসিডেন্টের সরকারি দলিলপত্রসমূহ হলো জাতীয় ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যৎ ব্যবহারকারীদের জন্য এসব দলিলপত্রসমূহ অক্ষত এবং মূল অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত’।

সেই থেকেই প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরির যাত্রা শুরু। ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি অ্যান্ড মিউজিয়ামে আনুমানিক ১৬ মিলিয়ন পৃষ্ঠা ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক কাগজপত্র এবং ৪৫ টনেরও বেশি দলিলপত্রসমূহ সংরক্ষণ করা আছে।

১৯৫০ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনিও প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি গঠন করবেন। এরপরই ১৯৫৫ সালে কংগ্রেস কর্তৃক ‘প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি অ্যাক্ট ১৯৫৫’ পাস হয়।

এ অ্যাক্টের মাধ্যমেই নারাকে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত সব দলিলপত্রসমূহ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, বিভিন্ন সময়ের প্রচার-প্রচারণা, ভিডিও ডকুমেন্টসসহ যাবতীয় কাজের অনুমতি প্রদান করা হয় এবং প্রেসিডেন্টদেরও উৎসাহিত করা হয়, তাদের ঐতিহাসিক ডকুমেন্টসমূহকে সরকারের কাছে দান করার ব্যাপারে।

১৯৭৮ সালে কংগ্রেস ‘প্রেসিডেন্সিয়াল রেকর্ডস অ্যাক্ট ১৯৭৮’ পাস করে। এতে সব প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টদের রেকর্ডসমূহ ফেডারেল সরকারের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের রেকর্ডসমূহ প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি আপনার সাধারণ লাইব্রেরি নয় যেখানে আপনি সর্বশেষতম সেরা বিক্রেতাদের পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এটি একটি বিল্ডিং যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিদের কাগজপত্র, রেকর্ডস এবং অন্যান্য historicalতিহাসিক উপকরণ সংরক্ষণ এবং উপলব্ধ করার জন্য তৈরি।

বেশিরভাগ রাষ্ট্রপতি গ্রন্থাগারগুলিও পর্যটকদের আকর্ষণ এবং পর্যটকদের রাষ্ট্রপতির মেয়াদকালীন মেয়াদ এবং তাদের কর্মজীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে শিক্ষিত করার চেষ্টা করে। হারবার্ট হুভারের পর থেকে প্রতিটি রাষ্ট্রপতির একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। প্রতিটি রাষ্ট্রপতি লাইব্রেরিতে একটি সংগ্রহশালা থাকে এবং পাবলিক প্রোগ্রামগুলির একটি সক্রিয় সিরিজ সরবরাহ করে।

(তথ্যসূত্র ও ছবি ইন্টারনেট থেকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here