ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করা সঙ্গীতা ওয়াহিদ ছোটবেলায় আর্কিটেক্ট হতে চাইতেন। বর্তমানে এসএসএল অয়্যারলেসে ডিজিটাল কমিউনিকেশনে মুখ্য অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার প্রথম উদ্দেশ্য নিজে বড় কিছু করা, দ্বিতীয়ত এমন কিছু করা যা শুধু তার নিজের হবে। তৃতীয়ত তার ভাবনা নতুন মাত্রার ডিজাইন ডিসপ্লে। দেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে একটু ভিন্ন এবং নতুন কিছু সংযোজন করতে চান তিনি।
২০১৩ সালে তার উদ্যোগের শুরু। বছর হিসাব করলে ৯ বছর ধরে তার উদ্যোক্তা জীবন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি শুরু করেন তার উদ্যোগ “তাসা”।
ছোটবেলা থেকেই তিনি তার কাপড়গুলো একটু ডিজাইন করে বানাতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে সবাই জানতে চাইতেন ডিজাইনটা কার? শুধু তাই নয়, অনেকে আবার বানিয়ে দিতেও বলতেন। তখন বন্ধুদের, আত্মীয়দের জন্য টুকটাক কাজ করতে করতেই তার মনে হলো যে এটা নিয়ে তার পড়ালেখা করা উচিত, আরো শিখে ভালোভাবে কাজটা করা উচিত এবং প্রফেশন হিসেবেও নেয়া উচিত। বন্ধুরা বেশ উৎসাহ দিতো তখন থেকেই, তখনই চট করে একদিন একটা পেইজ খুলে ফেলেন। ছোট ছোট করে বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে ফটো শুট করে পেজ এর কনটেন্ট রেডি করতেন। তার এই উদ্যোগের পেছনে তার বন্ধুদের এবং মায়ের অবদান অনেক। তারপর ২০১৮ সালে ইন্ডিয়ান প্রখ্যাত ডিজাইনার মনীষ মালহোত্রার বেসিক ফ্যাশন ডিজানিং কোর্স করেন। সব কাগজপত্র তৈরি করে খুব প্রফেশনালি ২০১৮ থেকেই অনলাইন বাজারে ভিসিবল হয় তার উদ্যোগ।’তাসা’য় আছে শাড়ি-জামা, চুরি, মালা।
শুরুর দিকে বাধা অনেক ছিল। এখনও আছে এবং থাকবেও হয়তো। তবে প্রথম বাধা বলতে উদ্যোক্তার বাবা একটু মন খারাপ করতেন , আইন পড়ে কেন জামা কাপড় বানাচ্ছেন! বাবার সাথে সম্পর্কটা যখন এসব নিয়ে একটু খারাপের দিকে যাচ্ছিল, তখন তিনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে বাবা আসলে খুব উদার, আধুনিক এবং বন্ধুসুলভ বলে শেষ পর্যন্ত তিনি তার জীবনে যেভাবে যা করতে চেয়েছেন, সেটা করতে পেরেছেন। কারণ পরে তার বাবাই তাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
উদ্যোক্তা সঙ্গীতা ওয়াহিদ জানান, “আর্থিক ঝামেলা এসেছে বহুবার, পেন্ডামিকে ‘তাসা’ সবচেয়ে বড় লসে পড়ে। তবে মুখ থুবড়ে পড়িনি কখনও। আমার সাথের মানুষগুলো আমার মতোই আমার উদ্যোগকে ভালোবাসেন, সাপোর্ট করেন। আমি অনেক ভাগ্যবান, কারণ আমার সহযোদ্ধা অনেক।”
তিনি জানান তার উদ্যোগে ৬ জন কর্মী অ্যাক্টিভলি কাজ করছেন এখন। পুরো বাংলাদেশেই তার পণ্য যায়। বিদেশেও তার অনেক প্রিয় ক্লায়েন্ট আছেন যারা নিয়মিত ‘তাসা’র প্রোডাক্ট অর্ডার করে থাকেন। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া, জার্মানি, কানাডায় তার পণ্য যাচ্ছে নিয়মিত।
‘তাসা’ প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা জানান: পেছনে আমার মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি হলেও আমার বাবা, বর, বৌ চাচী, নাদিয়া বিনতে আমিন আন্টি এবং বন্ধুদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই কৃতিত্ব একজনকে দেওয়া অসম্ভব। তাদের প্রয়াস, উৎসাহ, সাহায্য ছাড়া আমি এখানে আজ পৌঁছাতে পারতাম না। বন্ধু সাব্বির, তানহা, নিলান্তি, তৌফিক ভাইয়া, ছোট ভাই অতুল আর ফারহান সামিকে আমি আলাদাভাবে ধন্যবাদ দিয়ে যাবো। আমি খুবই ভাগ্যবতী যে আমাকে, আমার উদ্যোগকে সাপোর্ট করার জন্য আমি এতো মানুষকে সাথে পেয়েছি।”
ভবিষ্যতে পরিকল্পনায় তিনি চান: অনেক বড় হতে হবে ‘তাসা’কে। সুন্দর কাজ করে দেশের পণ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে।
মাসুমা শারমিন সুমি
উদ্যেক্তা বার্তা