ফ্যাশনের রানী কোকো শ্যানেল

0

ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির আইকন কোকো শ্যানেল। বিশ্বের প্রথম ফ্যাশন ডিজাইনের যিনি সুগন্ধি বাজারে ছাড়েন।

কিংবদন্তী ফরাসি ফ্যাশন ডিজাইনার কোকো শ্যানেল। তাঁর একটি কথা/ বাণী- ফ্যাশন পরিবর্তনশীল কিন্তু স্টাইল চিরন্তন- আজও ফ্যাশন জগ্তের মূলমন্ত্র।

কোকো নামে পরিচিত হলেও তাঁর আসল নাম গ্যাব্রিয়েল বনহুর শ্যানেল। জন্ম ১৮৮৩ সালে ফ্রান্সের সৌমুর শহরে এক দরিদ্র পরিবারে। মাত্র ১২ বছর বয়সে মায়ের মৃত্যু হলে অনাথ আশ্রমে জায়গা হয় তাঁর। আশ্রমে থাকার সময় সেলাই এবং পোশাক তৈরীর কাজ শিখেছিলেন কোকো।

১৮ বছর বয়সে আশ্রম ছাড়তে হলে একটি ক্যাফেতে গায়িকা হিসেবে কাজ পান। গান গাইতে গিয়ে গ্যাব্রিয়েল হয়ে ওঠেন কোকো।

ক্যাফের দর্শক ছিল মূলত সৈনিকেরা। গান গাইতে গিয়ে এতিয়েন বালসান নামে এক দক্ষ ঘোরসওয়ার এর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে শ্যানেলের। পরিচয় হয় এতিয়েনের বন্ধু আর্থার ক্যাপেল বয় এর সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রণয়।

ক্যাপেল এর অর্থ সহায়তায় ১৯১০ সালে একটি হ্যাটের দোকান খোলেন শ্যানেল নাম দেন শ্যানেল মোড। সফল হন হ্যাট ব্যবসায়ে। পরে আরও দু’টি বুটিক খোলেন যেখানে কোকো মেয়েদের পোশাক বিক্রি করতেন। হ্যাটের সঙ্গে মেয়েদের পোশাক ডিজাইনে এনেছিলেন নতুনত্ব। প্রচলিত ধারা এরিয়ে তিনিই প্রথম নিখুঁত শারীরিক মাপের করসেট বা বন্ধনীর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়ে নারীদের জন্য আরামদায়ক, মার্জিত ডিজাইনের পোশাক তৈরী করেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয় নি।
১৯১৯ সালে আকস্মিক মৃত্যু হয় ক্যাপেল বয় এর। কিন্তু শ্যানেল থেমে থাকেন না। নিজের প্রতিভা আর দক্ষতা দিয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যান দেশের সীমানা পেরিয়ে।

খ্যাতি ইউরোপের সীমা ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় আমেরিকায়। রাশিয়ার অভিজাত মহলেও পৌঁছে যায় “শ্যানেল মোড”, “গ্যাব্রিয়েল শ্যানেল এর পোশাক”, মেক আপ, টুপি, ফার, জুতোর সুনাম। বিশ্বজুড়ে গড়ে তোলেন নিজের বিশাল ফ্যাশন সাম্রাজ্য। ১৯২০ সালের মধ্যে শ্যানেল ইন্ডাস্ট্রিজের মূল্য কয়েক মিলিয়ন পৌঁছে যায়।

১৯২১ সাল। ফ্রান্সের মেধাবী সুগন্ধি প্রস্তুতকারক আর্ন বুও এর সাহায্যে শ্যানেল তৈরি করেন বিশ্বের সবচাইতে সফল সুগন্ধি শ্যানেল ই। এক জগদ্বিখ্যাত কিংবদন্তি সুগন্ধি।

১৯২৬ সালে ফ্যাশন সচেতন নারীদের জন্য আবিষ্কার করেন “লিটল ব্ল্যাক ড্রেস” এর। এর আগে কালো পোশাক শোকের অনুষ্ঠান ছাড়া কোথাও কল্পনা করা যেত না। তিনি মেয়েদের জন্য কলারবিহীন স্যুট ও হাঁটুর সামান্য নিচ পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের স্কার্টের প্রচলন করেন। এছাড়াও বেল বটম প্যান্টের প্রবর্তন করেন। ১৯২৪ সালে শ্যানেল টুইড ফেব্রিক ডিজাইন করেন। এসব পোশাক ছাড়াও নেইলপলিশ, সুগন্ধি ছাড়া লাল লিপ্সটিক, ও সানট্যান তেলের মাধ্যমে তিনি প্রসাধনশিল্পে বেশ পরিবর্তন নিয়ে আসেন।

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় শ্যানেল তাঁর সকল ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ রাখনে। ১৫ বছর পর ১৯৫৪ সালে নতুন করে মেয়েদের পোশাক ও স্পোর্টসওয়্যার এর কাজ করে শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে ফ্যাশনে নেইম্যান আর্কাস ফ্যাশন এওয়ার্ড অর্জন করেন।

১৯৭০ সালের ১০ জানুয়ারি প্যারিসের হোটেল রিটজ এ নিজ এপার্ট্মেন্টে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শত শত ভক্ত চার্চ অব ম্যাডেলিনে শ্যানেলর শ্যানেল স্যুট পরেই এই কিংবদন্তি ডিজাইনারকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছিলেন।

মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পরও হাউজ অব শ্যানেল বিশ্বে বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড। বিতর্কিত, বিদ্রোহী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, প্রভাবশালী, এক বিপ্লবীর নাম কোকো শ্যানেল। এক অনাথ শিশু থেকে ফ্যাশন জগতের নক্ষত্র। লিটল ব্ল্যাক ড্রেস, শ্যানেল স্যুট, গয়না, ব্যাগ আর বিশ্ব মাতানো শ্যানেল ফাইভ সুগন্ধির মাঝে চিরস্মরনীয় হয়ে আছেন গ্যাব্রিয়েল শ্যানেল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here