উদ্যোক্তা নাসিমা আক্তার নিশা। যিনি উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমান সময়ের আলোচিত এক গ্রুপের নাম উই।
ঢাকার আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা নিশার। ব্যবসায়ী বাবার সন্তান তিনি। পৈতৃকভাবেই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। দাদা ছিলেন ঢাকার লালবাগের অধিবাসী। আট ভাইবোনের মধ্যে ষষ্ঠ । ছোটবেলা থেকেই একটু সৌখিন মনের অধিকারী নিশা।
যেভাবে নিশার উদ্যোক্তা হওয়া
২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বরের কথা। বাবার অসুস্থতার কারণে কিছুদিন ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্যবসা নিজের কাঁধে তুলে নেন। কাজ করতে করতে কাজের প্রতি মায়ায় পড়ে যান। কাজকে তখন আপন মনে হতে লাগে। ইচ্ছে ছিলো বাবার ব্যবসা বাবার হাতে তুলে দিয়েই ছুটি নিবেন। নিজের ঘর সংসার সামলাবেন। স্বামী সংসার নিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে যাবেন তিনি। কিন্তু কাজের প্রতি ভালোবাসা আর মায়ায় জড়িয়ে সেভাবে আর ফেরা হলো না। শুধু ঘরকন্যার কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত না রেখে ব্যবসার বিশাল রাজ্যে প্রবেশ করলেন।
ভিডিও গেমসের নেশা থেকে হয়ে উঠলেন উদ্যোক্তা
সৌখিন মনের অধিকারী নিশার নেশা ছিলো গেমস খেলা। গেম খেলতে তিনি প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। ঘণ্টার ঘণ্টা গেম খেলেই কাটতো সময়। গেম খেলার সময় তিনি শিশু হয়ে যেতেন। এই নেশা থেকেই গেমের প্রতি তার দুর্বলতা। ভাবতে লাগলেন গেম নিয়ে কিছু একটা করা যায় কী না।বেশিরভাগ গেমসই তো বিদেশি। যদি দেশেই গেমস বানানো যায় তাহলে কেমন হয়! গেমস খেলতে খেলতে পেয়ে যান আইডিয়া।
মাঝরাতে ঘুম না এলে গেম খেলবেন। কিন্তু কম্পিউটার, ল্যাপটপে বসে গেম খেলাটা ঝক্কি ঝামেলার ব্যাপার। কিন্তু যদি মোবাইল গেমস বানানো যায়! তাহলে তো আরামে শুয়ে শুয়েই গেম খেলা যাবে। সেই ভাবনা থেকেই গেমিং প্লানিং করলেন। বাবা বিখ্যাত ব্যবসায়ী দানবীর হাজী শাহাবুদ্দিন। বাবার এই ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ব্যবসা কেন জানি তাকে টানতে পারেনি।
২০১০ সালে ১৫ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে নাসিমা আক্তার নিশা যাত্রা শুরু করলেন।গড়ে তুললেন গেইমিং এবং সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট কোম্পানি, রেভ্যারি কর্পোরেশন লিমিটেড। প্রথমে তেমন সাড়া পাননি। হাল ছাড়েননি। তিনি দমে যাননি। নিজের ওপর প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস ছিলো তার। তিনি পারবেন। পেরেছেনও। কারণ তিনি যখন ব্যবসা শুরু করেছেন তখন অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইল এতটা বাজারজাত হয়নি। তবে তার বিশ্বাস ছিলো প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতায় দ্রুতই পৃথিবী বদলে যাবে। আরও গতিশীল হবে পৃথিবীর মানুষ।
তারপর কিছুদিন যেতেই দেশের বাইরের ক্লাইন্টদের কাজ পেতে শুরু করেন। শুরু হলো নানান ধরনের গেমস তৈরি কাজ। তাছাড়াও ইনহাউজের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ করেতেন, ছোট ছোট গেমস তৈরি করতেন। শুরুতে উদ্যোক্তা নিশার পথচলায় নানান প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখিও হতে হয়েছে। অনেকেই এই অ্যাপস সম্পর্কে বুঝতে পারেননি।পরিবেশও নারী বান্ধব ছিলো না ।
যেভাবে গড়ে তুললেন উই
কাজ করতে গিয়ে ২০১৫ সালের শেষের দিকে ই কমার্সের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ই কমার্সে যুক্ত হয়ে ভাবলেন নারীদের জন্য কিছু একটা করা প্রয়োজন। তার জন্য প্রয়োজন প্লাটফর্ম । নারী বান্ধব পরিবেশ না হলে অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্বেও কাজ করতে পারছেন না। ২০১৭ সালে সেই ভাবনার প্রতিফলন ঘটান। নিজেই গড়ে তোলেন ওম্যান্স ই কমার্স ফোরাম (উই)। সারাদেশের বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করেন এই ফোরামে।
করোনাকালীন সময়ে যেমন চলছে ‘উই’
২০২০ সালের মার্চ মাস নাগাদ সদস্য সংখ্যা ছিলো মাত্র ৩০ হাজার। যখন করোনাকালীন সময়ে সব স্তব্ধ হয়ে গেল তখন অনলাইনে সবাই যার যার প্রোডাক্ট বিক্রি শুরু করল। সেপ্টেম্বরে গিয়ে সেই সংখ্যা পৌঁছে যায় ৯ লাখে। বর্তমানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ সদস্য। এই গ্রুপ থেকে মাসে ৩ থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা সেল হচ্ছে। বিশষে করে ইদের সময় সেলটা বেশি হয়েছে বলে জানান তিনি। গত ইদুল ফিতরে একরাতে সেল হয়েছে দেড় কোটি টাকা।
ইদুল আযহায়ও প্রায় ৫৬ জন নারী উদ্যোক্তা গরু নিয়ে কাজ করেছেন। সেখানেও ভালো সেল হয়েছে বলে জানান নিশা।এই সংগঠনের মাধ্যমে দেশিয় পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। সারাদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে পণ্য। উই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অনেক নারী এখন স্বাবলম্বী।
দেশের বাইরে উই এর শাখাও তিনি করেছেন । জাপানে ও মালয়েশিয়াতে গড়ে তুলেছেন শাখা। দেশের পণ্য বিদেশে যাবে। আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে তারা।
কাজের প্রতি প্যাশন থাকা জরুরী
উদ্যোক্তা হিসেবে যদি আত্মপ্রকাশ করেন তাহলে প্যাশনের সাথে কাজ করুন, ফ্যাশনের সাথে নয় এমনটাই বললেন নিশা। কাজের প্রতি ভালোবাসা, মায়া থাকতে হবে। অতিদ্রুত লাভবান হওয়ার চেয়ে ধীরে ধীরে মায়া লাগিয়ে কাজ করতে হবে।
ইমরান পরশ
উদ্যোক্তা বার্তা, ঢাকা
অনেক ভালো উদ্যোগ । কিন্তু এই করোনা কালীন সময়ে উনি অনেক জন সমাগম এ কোন কিছু না মেনে উপস্থিত হইছেন । অন্যরা উনাকে ফলো করে । একজন লিডার হিসাবে উনার অবিবেচক এর মতো এই আচরন ঠিক হই নাই । বিভিন্ন জেলায় উনি সমাগম এর আয়োজন করছেন , উনার মত মানুষের কাছে এটা কাম্য নয় । এইসব জনসমাগমের জন্য আজকের এই কঠিন লক ডাউন । উনার শারীরিক সুস্থতা কামনা করছি ।