আর্ট এন্ড ক্রাফটসকে ভালোবাসা এবং এই সেক্টরে এগিয়ে চলা। ভালোবাসাটা ছোটবেলা থেকেই আর্ট এন্ড ক্রাফটসের প্রতি। ছোটবেলা থেকে ফেলে দেয়া পণ্য দিয়ে ঘরে শোভা পায় এমন কিছু বানাতে ভালেবাসতেন। বলছিলাম, উদ্যোক্তা সেলিমা আক্তার শর্মীর কথা। বাবা নজরুল ইসলাম সেলিম। পেশায় ব্যবসায়ী। মা এলিজা বেগম। পেশায় গৃহিনী। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনিই বড়।
ঢাবি অধিভুক্ত হোম ইকোনমিকস্ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন Art & Creative Studies Department এ। পড়াশুনা শেষ করে কোথাও জব করা হয়ে উঠেনি এই উদ্যোক্তার। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সময়ে এটাসেটা বানিয়ে ঘরের সাজ-সজ্জা বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করতে ভীষন ভালোবাসতেন। তাই আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব তাদের ছোটখাট ঘরোয়া পার্টিতে দায়িত্ব দিতেন সাজিয়ে দেবার।
একসময় বন্ধুদের অনুপ্রেরনায় এবং তার ভালোলাগা থেকে অনেকটা নেশায় পরিনত হল। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু। তখন তিনি ভাবলেন এইসব ফেলে দেওয়া প্রাকৃতিক উপাদানের তৈরি জিনিসগুলো সবার ঘরের একটি স্থান পেতে পারে। কিন্তু কীভাবে? আর এই ভাবনা থেকেই তিনি বিভিন্ন ধরনের কোলাজ পেইন্টিং শুরু করেন। ২০১৮ সাল থেকে উদ্যোক্তা হবার ভাবনাটা শুরু হয় তার। তার হাতের আশেপাশে ফেলে দেওয়া ব্যবহৃত জিনিস ও প্রাকৃতিক উপাদান গুলো দিয়ে তিনি যখন নতুন কিছু তৈরি করতেন সেগুলো আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠত। খুব সাধারণ জিনিসগুলো যখন কারো ঘরের প্রিয় একটি কোণে একটি বিশেষ স্থান করে নিতো তখন তা দেখে তার এক অন্যরকম ভালো লাগার সৃষ্টি হয় । সেগুলো দেখে যখন বন্ধু-বান্ধবীসহ অনেক সিনিয়র এবং গুণী মানুষজন প্রশংসা করতে শুরু করল তখন আগ্রহ আরও বেড়ে আত্মবিশ্বাস দ্বিগুন হয়ে যায়। তখন তার মনে হলো এর মাধ্যমে তিনি নিজে সাবলম্বী হতে পারেন ও দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধিতে বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারেন। সেই ভাবনা থেকেই তিনি তার কাজগুলো শুরু করলেন।
মাত্র ৮০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেছেন।
তিনি আর্ট ও ক্রাফট আইটেম নিয়ে কাজ করছেন। তার কাজগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কোলাজ পেইন্টিং, ক্যানভাস পেইন্টিং, কাঠের উপর পেইন্টিং, বোতলের উপর পেইন্টিং, পাথরের উপর পেইন্টিং, গাছের ডাল দিয়ে ক্যনভাস, ড্রাই বোতল ক্রাফট, ক্লে ওয়ার্ক, সি শেল ক্রাফট, সি কোলাজ ইত্যাদি।
যেহেতু তিনি আর্ট নিয়ে কাজ করেন তাই প্রায় সব কাজগুলো তাকেই নিজ হাতেই করতে হয়। দুইজন সহযোগী নিয়ে শুরু করেছেন।তবে সম্প্রতি আরও দুইজন পার্টটাইম কাজ করছেন। তার কাজগুলো এখনও নিজ বাসাতেই করেন।
তার বিজনেস এখনো অনলাইন বেইজড। বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৩৫-৪০ হাজার টাকার বিক্রয় হচ্ছে।
চাকুরির প্রতি বরাবরই উদ্যোক্তার আগ্রহ নেই।
উদ্যোক্তা শর্মী বলেন, “অধিনস্ত হয়ে কাজ করায় স্বাধীনভাবে কাজ করার তেমন সুযোগ থাকেনা। আমি মনে করি সার্টিফিকেট নিয়ে একটি নির্দিষ্ট বেতনে নিজেকে সীমাবদ্ধ করে ফেলার চেয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উদ্যোক্তা হবার মতো বিকল্প আর কিছুই নেই। তাতে করে নিজে স্বাবলম্বী হয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি কর্মহীন ব্যাক্তিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় আমি ঠিক করি চাকরি নিব না বরং চাকরি দিবো।আমি চাই গ্রামের অবহেলিত কর্মহীন নারীদের আমার কাজের দ্বারা একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্হা হোক। আর সেটা একটা চাকরির মাধ্যমে কখনও আমি করতে পারবোনা।”
তিনি মনে করেন, তার মতো এমন আর্ট ও ক্রাফট নিয়ে কাজ করে একজন ব্যক্তির সৃজনশীলতাকে শতভাগ কাজে লাগানো যায়। তাতে করে একজন ব্যক্তি যে শুধু সাবলম্বি হতে পারবে তা নয় বরং এতে একজন ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিক ভাবেও ভালো থাকতে পারে। তাছাড়া আর্ট ও ক্রাফটে যত বেশি নতুন নতুন ডিজাইন আর ধারণা নিয়ে আসতে পারবে ততবেশি চাহিদাও বাড়বে। এই পন্য নিয়ে কাজ করায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরে থাকা জিনিসগুলো যেমন সর্বোচ্চ ব্যবহার হবে তেমনে কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ সৃস্টি সম্ভব।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো এই কাজকে একটি ব্রান্ডিং এ পরিনত করা। আমার নিজের আলাদা একটি স্বীকৃতি থাকবে এই কাজের মাধ্যমে। আমার নিজস্ব অফিস থাকবে, কয়েকটি কারখানা থাকবে, সারাদেশে আউটলেট থাকবে, অনেক ব্যক্তি শিখবে ও কাজ করবে, পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পরিকল্পনা আছে।
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তার প্রথম পরামর্শ হলো উদ্যোক্তা হওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রমী, মনোযোগী এবং সৎ হতে হবে।পাশাপাশি যেই কাজে আপনার ভালো লাগা বেশি সেটি নিয়েই কাজ করার চেষ্টা করুন। তিনি মনে করেন শুরু তে অনেক বড় বড় উদ্যোগ নেয়া ঠিক না। কারণ এতে ব্যর্থতার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা থাকবে কিন্তু ছোটো ছোটো উদ্যোগ নিতে হবে, ছোটো উদ্যোগ বাস্তবায়ন সহজ । তাহলে হাটি হাটি পা করে কাংখিত লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব। এতে করে দক্ষতার দ্রুত বিকাশ ঘটানো সম্ভব এবং একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠা সম্ভব।
মাসুমা সুমি,
উদ্যোক্তা বার্তা।