ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.ফার্ম ও এম.ফার্ম করেছেন রাবেয়া মারুফ। এম.ফার্ম শেষ করার আগেই দেশের স্বনামধন্য ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইন্সেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল-এ চাকরি পেয়ে যান। চাকরি-বিয়ে-সংসার, একরকম ভালোই চলছিলো জীবন। কিন্তু প্রথম বাচ্চা হওয়ার পর চাকরি নামের সোনার হরিণটা ছেড়ে দেন রাবেয়া।
তারপর থেকেই চিন্তা ছিল কিছু একটা করবেন। প্রচণ্ড আত্মপ্রত্যয়ী রাবেয়া ঘরে বসেই বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে নিজেকে মেলে ধরার প্রতিজ্ঞা নিলেন। আগ্রহ হলো হাতে তৈরি গহনার প্রতি। শুরু করলেন অনলাইনে হাতে গহনা তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ। প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হতেই রপ্ত করে ফেললেন হাতে গহনা তৈরির সূক্ষ্ম কলা-কৌশল।
জগৎ-সংসারের নানা প্রতিকূলতা ও বৈরী পরিবেশের মধ্যে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে ‘সুলতানা’স ড্রিম’ নামে অনলাইনে একটি পেইজ খুললেন। একটি গহনা বানানোর কাজ সম্পন্ন করে ছবি তুলে নিজের ফেইসবুক পেইজে আপলোড দিলেন। প্রথম পোস্টেই খুব ভালো রেসপন্স পেয়ে গেলেন উদ্যোক্তা রাবেয়া। সবার উৎসাহ ও উদ্দীপনায় বুকে সাহস বেড়ে গেলো। সিদ্ধান্ত নিলেন বানিজ্যিক ভাবে হাতে তৈরি গহনা উৎপাদন করবেন।
এখন হাতের তৈরি মেটালের গহনা ছাড়াও আমাদের দেশে চাষ করা রিয়েল মুক্তা নিয়েও কাজ করছেন। যেটা তার সিগনেচার প্রডাক্ট। এছাড়াও রাখছেন আমাদের ঐতিহ্য রাজশাহীর মসলিন সিল্কের শাড়ি ও ড্রেস। দেশের বাজার ছাড়িয়ে তার পণ্য পৌঁছে গেছে আমেরিকা, কানাডা, সৌদি আরব, ইংলান্ড, ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এছাড়া বাংলাদেশের সবগুলো জেলাতেই তার পণ্য গিয়েছে।
উদ্যোক্তা রাবেয়া মাত্র ১০ হাজার টাকার ম্যাটেরিয়াল কিনে প্রথম শুরু করেছিলেন আনুষ্ঠানিক গহনা তৈরির কাজ। এখন প্রতিমাসে ৩০-৪০ সেট গহনা তৈরি করছেন। যা থেকে মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার উপরে আয় করছেন।
উদ্যোক্তা বার্তার সাথে নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে উদ্যোক্তা রাবেয়া মারুফ জানান, ‘উদ্যোক্তাকে আমি সবসময়ই খুব সম্মান করি। তবে কখনও ভাবিনি আমি নিজে উদ্যোক্তা হতে পারবো। যখন চিন্তা ও সুযোগ এসেছে নিজে কিছু করার, যেটা সম্পূর্ণ আমারই; তখন খুব আনন্দের সাথে শুরু করে ফেলেছি। আমার মনে হয়েছে এই কাজের মধ্যে আমি আমার নিজের ক্রিয়েটিভিটি তুলে ধরতে পারবো।
উদ্দোক্তা হওয়াটা একটা সপ্ন, একটা চ্যালেঞ্জ; যেটা করাটা খুব সহজ না। আমি মনে করি অন্যের প্রতিষ্ঠানে কাজ করার চেয়ে নিজে প্রতিষ্ঠান দেওয়াটা অনেক ভালো’।
উদ্যোক্তা রাবেয়া মারুফের বাবা মুন্সি আব্দুর রউফ একটি বেসরকারি ঔষধ কোম্পানিতে চাকুরিরত, মা নাজমা খাতুন, গৃহিনী। ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় রাবেয়ার জন্ম ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানায়। এখানেই তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া শেষ করেছেন। ভবিষ্যতে নিজের একটা শো-রুম দেয়ার আর মিনিমাম ৫ জন মেয়ের কর্মসংস্থান করার স্বপ্ন দেখেন ‘সুলতানা’স ড্রিমের’ এই উদ্যোক্তা।
সাইদ হাফিজ,
উদ্যোক্তা বার্তা