প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারে জোর দিতে বলেছেন শিল্পমন্ত্রী

0

তিন বছর পর আবার শুরু হয়েছে ১৫তম ইন্টারন্যাশনাল প্লাস্টিক ফেয়ার (আইপিএফ) ২০২৩। বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ) চারদিনের এ মেলার অন্যতম আয়োজক।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে (আইসিসিবি) প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

উদ্বোধনীতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনসুরুল আলম, বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ এবং ইয়রকার্স ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিসেস কোম্পানি লি. এর সভাপতি জুডি ওয়াং।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, প্লাস্টিক খাত অনেক সম্ভাবনাময়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার লক্ষণীয়। টুথব্রাস থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী ঔষধের মোড়কেও প্লাস্টিকের ব্যবহার রয়েছে। বলা যায় আধুনিক জীবনের সাথে প্লাস্টিক জড়িয়ে রয়েছে। দিন দিন প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি প্লাস্টিক বর্জ্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে পরিবেশের ওপর প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনতে প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থাৎ রাসায়নিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা জিনিসকে আবার ব্যবহার উপযোগী করে তোলার উপর জোর দিতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, ২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে সামগ্রিক প্লাস্টিক রপ্তানি (প্রচ্ছন্ন ও সরাসরি) ছিল প্রায় ১০৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে সামগ্রিক প্লাস্টিক রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। বাংলাদেশে প্লাস্টিক শিল্প লিংকেজ শিল্প হিসাবে অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে। প্লাস্টিক শিল্প খাত রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনে ও প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্লাস্টিক সেক্টরে কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরি গড়ে তোলার জন্য বিসিক কেমিক্যাল পল্লীতে ৯০ একর জমিতে প্লাস্টিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে এবং তার পাশে ১৫৫ একর জমিতে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে।

শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্লাস্টিক পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার ও শপিং ব্যাগ, খেলনা (স্বল্প পরিসরে) সামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানির জন্য এ খাতে সংযোজিত হতে পারে প্লাস্টিক টয়েজ ও ক্রোকারিজ আইটেম। রপ্তানি বৃদ্ধিতে সরকারের নীতিগত সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। তিনি এ সেক্টরের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের বর্তমান বাজার পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে নতুন নতুন উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, সরকার থেকে প্লাস্টিক খাতে বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ বাজেটে ট্যাক্স ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং গ্রিন ফ্যাক্টরি হলে ১০ শতাংশ ট্যাক্স। একইসঙ্গে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের বিশ্বব্যাপী ৮০০ বিলিয়ন ডলারের যে আন্তর্জাতিক বাজার আছে, সেখানে যদি আমরা ১ শতাংশও বাজার নিতে পারি তাহলে ৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করা সম্ভব। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদেশে আইন-কানুন কড়াকড়ি থাকে, সেজন্য পণ্য উৎপাদনের সময় দূষণসহ সব কিছু মাথায় রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা আশা করব, আন্তর্জাতিকভাবে যে উল্লেখযোগ্য বাজার, সেটা আমরা নিতে পারব। আগামী দিনেও এ খাতে সরকারি সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের প্লাস্টিক শিল্পের বিকাশ এবং উন্নয়নে আয়োজিত মেলার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। প্রতি বছর প্লাস্টিক সেক্টরে একটা বড় প্রবৃদ্ধি আছে। এসডিজি বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে, একইসঙ্গে থাকবে অনেক সম্ভাবনাও। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। প্লাস্টিক খাতে বিশাল সম্ভাবনা আছে জানিয়ে এ খাতের ব্যবসায়ীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। একই সঙ্গে কমপ্লায়েন্স কারখানা গড়ে তোলারও আহ্বান জানান।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে আসার জন্য এনজিওগুলোকে আহ্বান জানিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে ২ মিলিয়ন টন প্লাস্টিকের চাহিদা আছে, পুরোটাই আমরা আমদানি করি। যদি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে রিসাইক্লিং একটি ফ্যাক্টরি গড়ে তোলা যায়, তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।

বিশ্বের ২১টি দেশ থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক এ ফেয়ারে অংশগ্রহণ করেছে। প্রদর্শনীতে যেসব দেশ অংশগ্রহণ করছে তার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও আছে চীন, তাইওয়ান, ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ইউএসএ, ফ্রান্স, হংকং, ইটালি, জাপান, মালয়েশিয়া, অস্ট্রিয়া, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

প্লাস্টিক মেলা ১৯৮৯ সাল থেকে বিপিজিএমইএ এবং বিসিক যৌথভাবে আয়োজন করে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার মেলা হচ্ছে তিন বছর পর।

১৫তম প্লাস্টিক মেলায় বাংলাদেশসহ মোট ২১টি দেশ থেকে ৪৯৪টি কোম্পানির ৭৫০টি স্টল অংশগ্রহণ করছে। এতে আছে মেশিনারিজ, মোল্ড, কাচাঁমাল উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসহ দেশে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।

প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here