তুরিন আফরোজ ইভা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিউবিটি) থেকে বিএসসি করেছেন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। প্রকৌশলী হওয়ার কথা কিন্তু হয়ে উঠলেন উদ্যোক্তা। কেমন ছিল তুরিনের সে সময়ের ভাবনাগুলো, চলুন জেনে নেই।
পড়াশোনা চলাকালীন থেকেই চাকরির চেষ্টা করছিলেন তুরিন। এমবিএ শেষ করে একটা ব্যাংকে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ শুরু করেন। অনেকটা আশা নিয়েই ইন্টার্ন করছিল তুরিন; এবার একটা চাকরি নিশ্চয়ই হবে এই ভেবে কিন্তু সেটা হল না।
তুরিন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, আমি নিজের জন্য গহনা বানাতাম, কাজটা ভাল লাগা থেকে শুরু, হঠাৎ মাথায় এলো শখটাকে পেশা হিশেবে নিলে ভালোই তো হবে! আমি আগে মেটেরিয়ালগুলো কিনতে শুরু করলাম। পুঁজি সেই রকম ছিল না। তবে আশা করেছিলাম ভাল কিছু দিতে পারব। অনলাইনের নাম দিলাম পঞ্চমা, কারণ আমরা পাঁচ ভাই বোন তাই পঞ্চ সঙ্গে মা কে যোগ করায় হয়ে গেল পঞ্চমা।
পঞ্চমা একটি দেশীয় হাতের তৈরী গয়নার পেইজ। ২০১৭ সালের ১৩ জুন ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে পঞ্চমার আবির্ভাব। এরপর অনলাইন পেজও খুলেছে পঞ্চমা নামে। পঞ্চমাতে পাওয়া যায় মেয়েদের হিজাব পিন, নেকলেস, কানের দুল, চুড়ি, আংটি, ব্রেসলেট, পায়েল, টিকলি, খোপার কাঁটা ইত্যাদি । বাচ্চাদের জন্য আছে ছোট ক্লিপ, হেয়ার ব্যান্ড, ব্রেসলেট ইত্যাদি। ছেলেদের জন্যও আছে ব্রেসলেট। মূল্য হাতের নাগালের মধ্যেই রাখার চেষ্টা করেন তুরিন যার সর্বনিম্ন মূল্য ১৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মূল্য ১৫০০ টাকা।
শুরুটা ২০১৭ তে করলেও ৬/৭ মাস কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে বাবার মৃত্যুর জন্য। এই অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, সাভার, কুমিল্লা এমনকি দেশের বাইরে থেকেও পঞ্চমার পণ্য কাস্টমারের হাতে পৌঁছায়।
তুরিন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, আল্লাহর রহমতে আমার পেইজটা দিন দিন বড় হচ্ছে। বড় হতে সহযোগিতা করেছে আমার ভাইবোন এবং মনির ভাই। তার অক্লান্ত পরিশ্রম আমাকে অনুপ্রেরণা দেই। বড় আপু নিজেই এক প্রতিভা। আপুর তৈরি করা গহনাও পঞ্চমাতে শোভা বর্ধন করে। বুদ্ধি পরামর্শ পাই মেঝ আপুর কাছ থেকে। যে সুন্দর সুন্দর ছবিগুলো আমার পেইজে আপনারা দেখেন সব সেঝ আপুর তোলা। ছোট ভাইয়ের বর্ণিল হ্যান্ড মেড বাহারি বক্সগুলো সত্যি নজর কাড়া’।
নিজের ব্যবসায় মায়ের অবদান উল্লেখ করে তুরিন বলেন, মায়ের কথা বললে শেষ হবে না, মায়ের জন্যই আজ আমি এখানে।
তিনি আরো বলেন, সবার কাছে আমি ঋণী, সেই সাথে তারাও যুক্ত, যারা আমাদের পেইজ থেকে পণ্য কিনে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
সাথে থেকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তুরিনের কিছু বন্ধুরা এবং স্যার ম্যাডামরা। কিছু মানুষ কটু কথাও বলেছে কিন্তু তুরিন আমলে নেই নি। কাজের মাধ্যমে তাদের কথার জবাব দিতে চান তুরিন।
বাধার কথা বলতে গিয়ে তুরিন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘পুঁজির টানাপোড়েন তো আছেই। ব্যবসা কিভাবে করলে এগিয়ে যাওয়া যাবে, মূল্য কিভাবে হিসাব করতে হবে, কিভাবে হ্যান্ডমেইড পণ্যের মার্কেট বুঝতে হবে, ভারতীয় রেডিমেড গয়নার চাহিদার সাথে রীতিমতো বেগ পেতে হয় এমন অনেক ধরণের বাধা সামনে আসতেই থাকে। ফিক্সড প্রাইস জানার পরও কেউ কেউ আবার মূল্য নিয়ে দর কষাকষি করে। এমন অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হয়।
তুরিন নিজের একটা অবস্থান গড়ার জন্য এমন একটা উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। নিজের হাতের বানানো গয়না দিয়ে পরিচিত হতে চান। হ্যান্ডমেইড গয়নার প্রতি কাস্টমারের বিশ্বাস স্থাপন করাতে চান। ‘
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান, অনলাইন থেকে অফলাইনে পঞ্চমা কে দাঁড় করাতে চান। যেন একটা ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরতে পারেন। এখনও ব্যবসায় নতুন হিসেবে অনেক কিছুই শেখার বাকি আছে সেই জন্য বেশ কিছু মেলাতে অংশগ্রহণ করেছেন, সরাসরি কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করছেন।
তুরিন বলেন ‘বেশ কিছু সংস্থা যেমন উইবিডি, বিইয়া, উই, চাকরি করবো না চাকরি দেবো এর সাথে যুক্ত হতে পেরেছি, বেশ কিছু ট্রেইনিং নিয়েছি ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যার কারণে বেশ কিছু সার্টিফিকেট পেয়েছি।’
তুরিন আফরোজ মনে করেন বাধা বিঘ্ন সামনে আসবেই, এর মাঝেই টিকে থাকতে হবে চেষ্টা আর ধৈর্য্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে ।
খাদিজা ইসলাম স্বপ্না