বাংলাদেশের সোনালী আঁশ-পাট। চালের বস্তা আর বাজার করা ব্যাগ ছাড়া পাট দিয়ে এক সময় তেমন কিছুই আর তৈরি হতো না। কিন্তু বর্তমানে পাট দিয়ে কি হয়না? পাটকে বিভিন্ন রূপে সারা বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন আমাদের উদ্যোক্তারা। পাটজাত দ্রব্য নিয়ে তেমনই কাজ করে যাচ্ছেন রাজশাহীর উম্মে হাজ্ব সিদ্দিকা।
জমিদার বংশের মেয়ে উম্মে হাজ্ব সিদ্দিকা। যুদ্ধের সময় ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তানী সেনারা। তারপরও স্বামী সন্তানকে নিয়ে চলছিলেন। তার দুই বছর পর হঠাৎ স্বামী মারা যান, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে উম্মে হাজ্ব সিদ্দিকার। স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা হাজ্ব সন্তানকে নিয়ে জীবনের তাগিদে নতুন করে শুরু করতে চাইলেন। তাই ছোট বেলার চিত্রাঙ্কন অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ১৯৮৪ সালে মাত্র ৭০০ টাকা দিয়ে নিজে ছোট বাচ্চাদের পোশাক বানানো শুরু করেন।
টুকটাক কাজ করা অবস্থায় পোশাক এর উপর প্রশিক্ষন নেন উদ্যোক্তা। হঠাৎ একটি স্কুলের ইউনিফর্ম তৈরির অর্ডার পেয়ে যান। প্রয়োজন পড়ে কর্মীর। তিন জন কর্মীকে নিয়ে শুরু করেন ইউনিফর্ম তৈরির কাজ। এর মধ্যে তিনি ছোট বাচ্চাদের পোশাকের সাথে মেয়েদের পোশাকও বানানো শুরু করেন। কাজ ভালই চলতে থাকে, সাথে কর্মীদের সংখ্যাও বেড়ে যায়। এভাবে কেটে গেলো বেশ কয়েক বছর।
২০০২ সালে উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (WEB) এর সাথে যুক্ত হয়ে কয়েকটি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ নেন।
এরপর ২০০৬ সালে ঢাকায় জুটের উপরে দশ দিনের প্রশিক্ষণ নিলেন তিনি। অন্যরকম ভাললাগা কাজ করলো, জুট দিয়ে এত কিছু তৈরি হয় জেনে অবাক হন উম্মে হাজ্ব। উদ্যোগ নিলেন তিনিও পাটপণ্য নিয়ে কাজ করবেন।
রাজশাহীতে ২০০৬ সালেই ১০ হাজার টাকা এবং দুজন কর্মীকে সাথে নিয়ে নিজের বাড়িতে “পাটবাজার” নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করেন উদ্যোক্তা উম্মে হাজ্ব সিদ্দিকা।
ঢাকা থেকে কাঁচামাল নিয়ে এসে ব্যাগ, শোপিস, পাখির বাসা সহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে শুরু করেন উদ্যোক্তা। সর্বপ্রথম ‘আশ্রয়’ নামে একটি সংস্থা থেকে ৬০০ টি পাটের তৈরি ব্যাগের অর্ডার পেলেন। উম্মে হাজ্বের স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দিলো। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজের অর্ডার আসতে থাকে।
২০১০ সালে জুট ট্রেইনার হিসেবে এসএমই ফাউন্ডেশনের সাথে সংযুক্ত হন এবং ঢাকা, রাজশাহী, দিনাজপুর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জুটের উপর প্রশিক্ষণ দেন।
তিনি পাট দিয়ে ব্যাগ, সিকা, পর্দা এবং ওড়না তৈরি করে যাচ্ছেন। ২০১১ সালে উদ্যোক্তা তার পণ্য প্রথম নেপালের একটি মেলায় প্রদর্শন করেন। পরবর্তীতে ভারত ও চীনের মেলায় অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন বহিঃবিশ্বে পাটের তৈরি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা।
বর্তমানে ৩৫জন কর্মীকে সাথে নিয়ে তার প্রতিষ্ঠানটি সফল ভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা উম্মে হাজ্ব সিদ্দিকা।
উম্মে হাজ্ব সিদ্দিকা ইউবি প্রেসকে বলেন, “আমি আশাবাদী, তরুণ প্রজন্মের যারা কাজ করতে চায় তারা পাট নিয়ে কাজ করলে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ভাবে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব”।
তিনি আরও বিশ্বাস করেন, পাটশিল্প ঘুরে দাঁড়াবে ঠিক যেভাবে তার নিজ আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
রাজশাহী থেকে রাইদুল ইসলাম শুভ
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা