দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ডিএসই)তে ছয়টি কোম্পানি নিয়ে এসএমই প্রতিষ্ঠানের লেনদেন চালু করা হয়েছে।
এর ফলে পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান আসার পথ যেমন সুগম হলো, তেমনি বিনিয়োগকারীদের জন্যও নতুন বিনিয়োগের জায়গা তৈরি হলো।
বৃহস্পতিবার ৩০ সেপ্টেম্বর নিকুঞ্জে ডিএসই’র ভবনে আয়োজিত ‘ইনআগুরাল ট্রেডিং অ্যাট এসএমই প্ল্যাটফর্ম’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুছুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান, ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারেক আমিন ভূঁইয়া।
প্রাথমিকভাবে ৬টি কোম্পানি নিয়ে ডিএসইর এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেন শুরু হয়েছে। এ ছয় কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- বেঙ্গল বিস্কুট, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়, অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিং মিলস, মাস্টার ফিড এগ্রো, অরিজা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এবং হিমাদ্রী লিমিটেড।
এর মধ্যে হিমাদ্রী লিমিটেড বাদে বাকি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান প্রথমদিনের লেনদেনে অংশ নেয়। লেনদেনে অংশ নেওয়া পাঁচটি প্রতিষ্ঠানেরই শেয়ার দাম বেড়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতির আকার গত দশ বছরে ৬৩% বেড়েছে, যাতে সবচেয়ে বেশি অবদান এসএমই খাতের। তবে এসএমই খাতকে এগিয়ে নিতে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক বিবরণীর স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করারও আহবান জানান তিনি। সেই সাথে যত দ্রুত সম্ভব ডিএসই-এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের রিয়েলটাইম ড্যাশবোর্ড তৈরিরও পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহে উদ্ধুদ্ধ করতে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে একসাথে কাজ করারও আহবান জানান তিনি।
ডিএসই’র চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, দীর্ঘমেয়াদী মূলধনের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক।
তাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এ সুবিধা কাজে লাগাতে আরো বেশি এসএমই উদ্যোক্তাদেরকে তালিকাভুক্ত হওয়ার আহবান জানান তিনি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া বলেন, অর্থায়নের অভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানসমূহ দেশের অর্থনীতিতে কাঙ্খিত অবদান রাখতে পারেন না। এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের যৌথ উদ্যোগের ফলে দেশের এসএমই খাতের ইতিহাসে নতুন মাত্রা সূচিত হলো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ৬ সেপ্টেম্বর এসএমই ফাউন্ডেশন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই’র মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষরের ৩ সপ্তাহের মাথায় পুঁজিবাজারে এসএমই প্রতিষ্ঠানের লেনদেন শুরু করতে পারা দেশের পুঁজিবাজারের ঐতিহাসিক ঘটনা।
তিনি আরও বলেন, এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মত ঋণ পেলেও প্রকৃত চাহিদা ৪ গুণ বেশি। ফলে তাদেরকে বেশি ব্যয়ে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করতে হয়, যা ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দেয়।
তাই কম খরচে দীর্ঘমেয়াদী মূলধন সংগ্রহের লক্ষ্যে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র তৈরি, হিসাব ঠিক রাখা, ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদেরকে পুঁজিবাজারের জন্য করতে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহবান জানান তিনি।
মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের নানা উদ্যোগের ফলে এসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গীর ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে।
এর আগে গত ১০ জুন অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দেশের ইতিহাসে এসএমই প্লাটফর্মে প্রথম লেনদেন করার ইতিহাস গড়া হয়।
অন্যদিকে বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় এমন স্বল্প মূলধনী কোম্পানির জন্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ‘স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্ম’ নামে আলাদা বাজার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। নিয়ালকো অ্যালয় এর লেনদেনের মাধ্যমে সিএসইতে এসএমই প্লাটফর্মের যাত্রা শুরু হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্প মূলধনের কোম্পনির জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপ কোম্পানিজ) রুলস-২০১৬ প্রনয়ন করে। তবে ২০১৮ সালে এর কিছু বিধির সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরপর ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) স্মল ক্যাপ মার্কেট (এসএমই) প্লাটফর্ম উদ্বোধন করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্লাটফর্মটি উদ্বোধনের আড়াই বছর পর আজ লেনদেন শুরু হলো।
‘স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্ম’ নামের আলাদা বাজারে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির জন্য কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) মাধ্যমে পুঁজি উত্তোলন করতে হবে। এসএমই উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজারের মাধ্যমে ৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করতে পারবেন। এ বাজারে শুধু কোয়ালিফাইড ইনভেস্টররা লেনদেন করতে পারবেন।
কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর বলতে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত সম্যক ধারণা রয়েছে এমন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ নিট সম্পদধারী ব্যক্তিকে বোঝায়। কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর চিহ্নিত করতে সিডিবিএল ভিন্ন ধরনের বিও হিসাব প্রণয়ন করবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এ বাজার উন্মুক্ত থাকবে না। বিদ্যমান স্টক ব্রোকারদের মাধ্যমে বাজারে লেনদেন পরিচালিত হবে।
এ বাজারে ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে পারবে না এবং শেয়ারধারীদের শেয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত লক-ইন থাকবে। বাজারে লেনদেনের তারল্য বজায় রাখার জন্য ইস্যুয়ার কোম্পানিকে কমপক্ষে ৩ বছরের জন্য মার্কেট মেকার নিয়োগ করতে হবে।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা