মানুষটি যেনো পাখির ভাষা বুঝতে পারে! ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ উড়াউড়ি বা ডাকাডাকির শব্দ শুনে দিব্যি বলে দিতে পারেন পাখিটির কি প্রয়োজন। পারবেই না কেন! সেই ছোট্ট বেলা থেকে যে তার পাখিদের সাথে গভীর মিতালী। আপনিও কি পশু-পাখি পালতে খুব পছন্দ করেন? অথবা আপনার বন্ধু, প্রতিবেশী বা পাড়ার ওই ছেলেটা? যে সারাদিন তার শখের পশু-পাখি নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত।
পাখি অনুরাগী আব্দুল্লাহ আল মামুন যার সকাল থেকে সন্ধ্যাও এভাবেই ব্যস্ততায় কাটতো। ছুটে বেড়াতেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বিভিন্ন জঙ্গলে, খুঁজে খুঁজে বেড় করতেন পাখির বাসা-বাচ্চা। যার গল্পগাথায় এখন চোখ বোলাচ্ছেন সেই উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের গ্রামের বাড়ী কুমিল্লা হলেও ঢাকার নাখালপাড়ায় বেড়ে উঠেছেন।
খুব ছোটবেলায় বাবা একজোড়া কবুতর কিনে দিয়েছিলেন, কিন্তু এলাকায় কোনো পাখির দোকান না থাকায় খাবার সংগ্রহের জন্য তাকে যেতে হতো অনেক দূরে। চিকিৎসার জন্য পেতেন না কোন ঔষধ। ভালবাসার পাখি গুলোর এই দৈন্যদশা দেখে তখন থেকেই ভাবনা আসে এমন একটা ব্যাবস্থা যেখানে পাখি এবং পাখির যাবতীয় সব পাওয়া যাবে। লালিত স্বপ্ন সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায়, অপেক্ষা শুধু সময়ের।
তিতুমীর কলেজে স্নাতক পড়া অবস্থায় মিডিয়ায় কাজ শুরু করেন। চীফ এসিস্ট্যান্ট হিসেবে প্রায় সাত বছর কাজ করলেও পাশাপাশি সুপ্ত সেই স্বপ্ন, শখের পেশাকে চালিয়ে গেলেন। মিডিয়া এখনও সম্পূর্ণভাবে ছাড়েননি তবে শখকেই প্রধান পেশা হিসেবে নিয়ে নাখালপাড়াতেই সাজিয়েছেন “সুখ পাখি মেলা”। কি নেই তার এই উদ্যোগে? আর কোন ছোট বা বড় মামুনকে যেনো ফিরে যেতে না হয় তার দোকান থেকে। তাই দোকানে রেখেছেন শত শত প্রজাতির পাখি,মাছসহ পাখির বাসা, খাদ্য, ঔষধ এবং একিউরিয়ামের সকল যন্ত্রাংশ, সাজসরঞ্জাম।
কবুতরের মধ্যে রয়েছে শাটিং, লক্ষা, নান, কিং, শটপিস, সিরাজি, মুক্ষিসহ আরো বাহারী জাত। সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে দেড় লক্ষ টাকা। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে রয়েছে বাজরিকা, লাভবার্ড, ককাটেল, ফিন্স, জাবা ইত্যাদি। যেগুলোর মূল্য ৫০০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এদের খাবারের জন্য কেজিপ্রতি গুনতে হবে ৩০-৩০০টাকা। আর মাছের মধ্যে রয়েছে এঞ্জেল, গোল্ডফিশ, সোর্ডটেল, মলি, গাপ্পি, ব্লু-গোরাইমিন ইত্যাদি। পাইকারি ও খুচরা দরে বিক্রয় করেন এসব উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মাছ ও পাখি রোগাক্রান্ত হলে বাসায় নিয়ে নিজেই চিকিৎসা করেন তিনি। শুধু দোকান নয় তার বাসাও একটা পাখির অভয়ারণ্য। পাখিদের দৈনিক ২-৩ ঘন্টা পরিচর্যা করেন তিনি। উদ্যোক্তা বলেন ৭-৮ বছরের এই ব্যবসায় এগুলো করতে এখনও ভালো লাগে তার, মোটেও বিরক্ত হন না। বর্তমানে ৩ জন কর্মী কর্মরত রয়েছে এছাড়াও চুক্তিভিত্তিক রয়েছে বেশ কয়েকজন।
“প্রতিটি মানুষ যেমন হয় একে অপরের থেকে আলাদা ঠিক তেমনি তাদের পছন্দ, শখ, রুচিরও থাকে পার্থক্য। কেও বই পড়তে পছন্দ করেন, তো কেও ছবি আঁকতে, কেওবা বৃক্ষরাজি ভালবাসেন, কেও পশু-পাখি, যেমন আমি পাখি ভালবাসি এবং এই ব্যবসাকেই ধরে রাখতে চাই। যা আয়-রোজগার হয় ভালোই হয়। বেকারত্বের দোহাই দিয়ে বসে না থাকে, আমাদের নিজেদের উদ্যোগী হতে হবে। আর বাবা-মা’দের সন্তানের ওপর নির্দিষ্ট কোন পেশা চাপিয়ে দেয়া উচিৎ নয়”। -এমনটায় বলেন পাখির উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা