উদ্যোক্তা - কোহিনূর আকতার কনা

চাকরি করার সুযোগ পেয়েও স্বামীর বিধিনিষেধের কারণে চাকরী করতে পারেননি। পত্রিকায়  বিজ্ঞাপন দেখে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। বোন এবং সন্তানদের সহযোগিতায় হয়ে উঠলেন সফল নারী উদ্যোক্তা। চলুন শুনি কহিনূরের সফলতার গল্পঃ  

কোহিনূর আকতার কনার বিয়ে হয়ে যায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরই কিন্তু তিনি লেখাপড়া বন্ধ না করে সন্তান, সংসার সব সামলিয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ইসলামের ইতিহাস নিয়ে।

স্বামী সরকারি চাকরিজীবী, পোস্টিং টাঙ্গাইল সদরে। এক ছেলে ও এক মেয়ে কহিনূর আকতার কনার। ছেলে মেয়ে দু’জনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় কোহিনূরকে টাঙ্গাইল ছেড়ে ঢাকা চলে আসতে হয়। সন্তানরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ক্লাস করতে যেত তখন কহিনূরের একা একা অবসর সময় কাটতো না। এর মধ্যে পত্রিকায় প্রকাশিত একটা বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে তাঁর। উত্তরা বিসিক অফিসে “নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন শীর্ষক প্রশিক্ষণ” নামে একটা ট্রেনিং দেয়া হবে। ৫ দিনের ১ টি কোর্স; কোর্সটি করলেন কহিনূর। কোর্স করার পর মনে তীব্র ইচ্ছা জন্মালো কোহিনূরের কিছু একটি করার।


৩ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করলেন। সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিলেন ছোট বোন। বোন ১০ হাজার টাকার ১ টি চেক দিয়ে বলেছিলেন, তুমি আজই কিছু ড্রেস নিয়ে এসো আমি বিক্রি করবো আমার সহকর্মীর কাছে, এভাবেই শুরু। আমি আগে থেকেই মা’র কাছ থেকে হাতের কাজ শিখেছিলাম সেগুলোকে পুজি করে কাজ শুরু করে দিলাম এবং নাম দিয়েছিলাম ‘ঘরোয়া ফ্যাশন’।

১০ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে শুরু করে এখন প্রায় ২ লক্ষ টাকার মত পুঁজি আছে সব রকম খরচ বাদে। সেই সাথে ৮ জনের কর্মসংস্থান করেছেন কোহিনূর। পোশাক আইটেম ছাড়াও কাঠের ও বিভিন্ন উপাদানের আর্টিফিশিয়াল জুয়েলারি তৈরি করার কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেন তাঁর মেয়ে।

প্রথমে বাটিক এবং ব্লকের কাজের পাশাপাশি কাটিং ও সেলাই, হাতের কাজ, এপ্লিকের কাজ, নকশি কাঁথা, নকশি বেডশীট, এপ্লিকের বেডশীট, বাটিকের ড্রেস, চাদর, পর্দা, টেবিল ম্যাট। এভাবে যখন যেটার অর্ডার পেতেন সেই কাজ করতে থাকতেন কোহিনূর এবং এভাবেই কাজ এগিয়ে যেতে থাকে কোহিনূরের ঘরোয়া ফ্যাশন। ঘরোয়া ফ্যাশনের পণের সর্বনিম্ন মূল্য ৮০০ টাকা, সর্বোচ্চ মূল্য ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর জুয়েলারির মূল্য ১৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত।

কোহিনূর উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, খুব বড় আকারে শুরু করতে পারছি না। কারণ পুঁজির ঘাটতি ছিল। স্বামী আমার ব্যবসা করা পছন্দ করেন না, তাই কোনো রকম সহযোগিতা তিনি করেননি। যতটুকু করেছি নিজের চেষ্টায় এবং মা-বোন ও ভাইদের সহযোগিতায় করেছি। সেই সাথে আমার দুই সন্তান আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করে।

তিনি আরো বলেন, চাকরি না করে উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনের কারণটি চিরাচরিত। স্বামী চায়নি, তাই চাকরির সুযোগ পাওয়া সত্বেও করা হয়নি। আমার ব্যবসা নিয়ে সুদূরপ্রসারী চিন্তা আছে আমাদের। আমার একটা অনলাইন শপটাকে আমি ডোমেইন হোস্টিং নিয়ে ওয়েবসাইট এ পরিণত করতে চাই।

ক্রেতাদের সাড়া খুব ভাল পাচ্ছেন বলে জানান কোহিনূর। উৎপাদন যা হচ্ছে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন তবে তিনি মনে করেন উৎপাদন যত বাড়বে ক্রেতার সংখ্যা ততো বাড়বে।

ই-কমার্সের উপরে কয়েকটি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে। ব্লক, বাটিক সেলাই এবং কাটিংয়েও ট্রেনিং নিয়েছেন উদ্যোক্তা কোহিনূর। এছাড়া তিনি মাইক্রোসফট অফিসের উপর কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন জাতীয় মহিলা সংস্থার অধীনে।

জীবনে কোনো কিছুই সহজ পথে আসেনা। প্রতিটি পথেই কাঁটা আছে আর তা উপরে ফেলার সাহস যাদের আছে, কেবল তারাই জয়ী হবেন। উদ্যোগ মানেই ঝুঁকি, তাই সাহস আর ঝুঁকি না নিলে উদ্যোক্তা হওয়া যাবে না। ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে সফল হয়েছেন কোহিনূর। সাহস ও মনোবল দু’টি আছে কোহিনূরের। তাইতো তিনি স্বপ্ন দেখে অনেক বড় হওয়ার।

 

খাদিজা ইসলাম স্বপ্না 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here