স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনগণনার সাথে সাথে উপকূলের ঝালকাঠি জেলার মানুষ নতুন স্বপ্নের জাল বোনা শুরু করেছেন।
জেলা সদর থেকে লঞ্চ বা বাসযোগে ঢাকা পৌছাতে সময় লাগতো ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা। কখনও ফেরীঘাটে যানজটের কারনে ১৮ থেকে ২০ ঘন্টাও লেগে যেতো। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে ছয়-সাত মিনিটে পদ্মা পার হয়ে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছানো যাবে। তাই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে দক্ষিণের জেলা ঝালকাঠির সাত লাখ মানুষের নানা স্বপ্নের গল্প নিয়ে চলছে আলোচনা। আলোচনার মূল বিষয় একটি: সেতু কিভাবে পাল্টে দিতে পারে একটি জেলার অর্থনীতি।
তারই অংশ হিসেবে ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীর প্লটের চাহিদা ও দাম দুটোই বেড়েছে। অনেক উদ্যোক্তা বরাদ্দ নেওয়া প্লটে স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।
২৫ জুন উদ্বোধনের পরদিন থেকে সেততে যান চলাচল শুরু হলে ঝালকাঠির অন্যতম কৃষিপণ্য পেয়ারা ও আমড়া মাত্র চার ঘণ্টায় সতেজ অবস্থায় পৌঁছে যাবে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলায়। এখন সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে শুধু পেয়ারা-আমড়া চাষীরা খুশি নন, খুশি লেবু ও কলা চাষীরাও।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে জেলার মানুষ কিভাবে উপকৃত হবে সেই স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মু. মনিরুল ইসলাম তালুকদার মনে করেন, ঝালকাঠির ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে লবণ, রড, সিমেন্ট ও টিন ব্যবসায় উপকৃত হবেন। ঝালকাঠিতে এক সময় ৪০ টি লবণের মিল ছিল, যার মধ্যে এখন ১০/১২টি চালু আছে। পদ্মা সেতু বাস্তব হওয়ায় লবণ মিলগুলো আবার চালু হলে ব্যবসায়ীরা খুব লাভবান হবেন।
ঝালকাঠির শীতলপাটি ও গামছার কদর রয়েছে দেশের সব জায়গায়। স্বল্প সময়ে শীতলপাটি ও গামছা ঢাকায় পৌঁছানোর কারণে এর চাহিদাও বাড়বে।
ভিমরুলী পেয়ারা বাগানের মালিক ভবেন্দ্র নাথ হাওলাদার বলেন, জেলা সদরের ১০টির মধ্যে তিনটি ইউনিয়নের (কীর্ত্তিপাশা, নবগ্রাম, গাভারামচন্দ্রপুর) বেশিরভাগ মানুষ পেয়ারা, আমড়া, কলা, লেবু ও নানা ধরনের শাক-সব্জি উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বর্ষা মৌসুমে এখানকার উৎপাদিত পেয়ারা, আমড়া, লেবু ও কলা ট্রাক বা ট্রলারযোগে ঢাকা পৌঁছাতে ১৬ থেকে ২৪ ঘণ্টা লাগতো, ফলগুলো পেকেও যেতো। এ কারণে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হতো। এখন সেটা হবে না।
প্রতিবছর ঝালকাঠি সদরের ভীমরুলী বাজারের কাছে খালে ভাসমান পেয়ারা ও সব্জির বাজার এবং পেয়ারা বাগান দেখতে হাজার-হাজার পর্যটক আসেন। পদ্মা সেতু চালুর পরে সেই পর্যটক সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যাবে। আর পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার কারণে পেয়রাঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
পেয়ারা সমৃদ্ধ তিন ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এখানে যেন জেলির কারখানা তৈরি হয়। পদ্মা সেতুর কারণে ব্যবসায়ীরা এখন জেলি কারখানায় বিনিয়োগ করতে পারেন।
ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা