কর্মঠ মেয়েরা জন্মগতভাবেই উদ্যোক্তা, এমনটাই ছিল বিশ্বাস। বিশ্বাসের সেই গুণটাই ধারণ করেছেন ছোটবেলা থেকে। সখের বসে গয়াল গাছের ফুলে মালা গাঁথার সাথেই হয়তো গেঁথে নিয়েছেন নতুন কিছু করার আকাঙ্খা, উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন। সেই ছোট্টবেলায় গয়াল ফুলের মালা দুই টাকায় বিক্রি করেছিলেন প্রথমবার, প্রতিবেশী এক বন্ধুর কাছে। বন্ধুটি এখন আমেরিকায় থাকে। সেই দুই টাকা কোনোদিনই নেয়া হয়নি। তবুও সেইদিন একটা অদ্ভুত আনন্দ পেয়েছিলেন। টাকার নেশা আগেও ছিলোনা, আজও নেই। নেশা ছিলো ব্যতিক্রমধর্মী কিছু করার।
গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসে ভর্তি হন স্বনামধন্য মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজে। নতুন পরিবেশ, নতুন একটা গোলকধাঁধা যেন! কোনোদিন আশাহত হননি কোনো কাজে, ভুল করেছেন, ভুল থেকেই শিখেছেন, নিজেকে গড়ে তুলতে চেয়েছেন সেই ভুলটাকে শুধরে নিয়ে। কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন কলেজ অব হোম ইকোনোমিকস এর “শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা” বিভাগে। মূলত নতুন কিছু করা ও সৃষ্টির সৃজনশীলতার স্বাদ নাকি মিলেছিল এখানেই। শেখার আগ্রহ নিয়ে সামনে যা আসতো কাদামাটিকে নিয়ে তাই করার চেষ্টা করতেন খোশনূর। রাতদিন সৃষ্টির চেতনা, উদ্যোক্তা হবার প্রচেষ্টা, সবাইকে নিয়ে ভাল থাকার তাড়নায় ডুবে থাকা।
নিজের সৃষ্টিশীল মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে ২০১৫ সালে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মধু সংগ্রহ করে যাত্রা শুরু করেন Beeland এর। খোশনূর ইসলাম বনি বলেন, “শুরুর পর অনেকেই বলেছিলো তুই মেয়ে, মধুর কি বুঝবি? মানুষের এমন কথায় আমি হাল ছেড়ে দেইনি। বর্তমানে আমার নিজস্ব ৩০০ টা মৌমাছির চাক আছে। আরো প্রায় ২০০০ চাক আমি বিভিন্ন স্থানে পরিচালনা করি। আমি চেয়েছি, মেয়ে মানেই শুধু জামা কাপড়, জুয়েলারি বা কসমেটিক্স এর ব্যবসা করবে, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে।”
শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা বিভাগে পড়ার সুবাদে শিল্প ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের উপর চিরন্তন ভালোলাগা থেকে Athena এর যাত্রা শুরু করেন উদ্যোক্তা। উদ্যোগে নিজের অনুপ্রেরণা সম্পর্কে তিনি বলেন “আমি মৌমাছিকে অনুভব করি, ওদের বাক্সের পাশে বসে থাকি, ওরা দূর থেকে মধু নিয়ে আসে। একটা আসে তো একটা যায়। এ যেনো নিরন্তন কাজ করার এক নিঃস্বার্থ প্রতিযোগিতা। “Athena is the brand of Art and Crafts” এবং “BeeLand is the brand of honey” এই ব্রতকে নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়া।”
এই পথচলায় ব্যর্থতা কিংবা সফলতা, সবকিছুতেই বাবা পাশে থেকেছেন, সাহস জুগিয়েছেন তার মেয়েকে। খোশনূর বলেন, “সারাজীবনে আমার সব কাজের হাতিয়ার বাবা। আমি কোন কাজ বুঝি না, করতে পারছি না, বলতে দেরি হয়েছে কিন্তু বাবার উৎসাহ নিয়ে সাহায্য করতে দেরি হয়নি। পাশাপাশি সকল কাজে পাশে থাকছেন পরিবারের সদস্যরা।” পরিবারের নিরন্তর উৎসাহ, উদ্দীপনা ও সহযোগিতায় উদ্যোক্তা এগিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
যেখানে ভালবাসা থাকে, সেখানে কোন বাধাই চোখে ধরা পড়ে না। এই ভাবনায় অবিরাম কাজ করে চলেছেন তরুণ উদ্যোক্তা খোশনুর। বর্তমানে Beeland এবং Athena তে ৩০ জন কর্মী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত থেকে এগিয়ে নিচ্ছেন উদ্যোক্তার উদ্যোগকে।
সাদিয়া সূচনা