উদ্যোক্তা যারিন রওনক সচি মনে করেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি নিজেই। আজ তিনি যে অবস্হানে আছেন, তার থেকে কালকের যারিন আরও ভালো কাজ করবেন; সেই চিন্তাই তিনি করেন সবসময়। শ্রম ও মেধা দিয়ে যাচ্ছেন তার উদ্যোগ কুমুদিনীর বসনে। স্বপ্ন দেখেন একদিন অনেক বড় হবে তার কুমুদিনীর বসন।
উদ্যোক্তা বড় হয়েছেন বুয়েট ক্যাম্পাসে। বাবার চাকরির সুবাদে। পরে তিনি আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইন্স এন্ড টেকনোলজি থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিএসসি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইনফরমেশন সাইন্স-এ মাস্টার্স করেছেন।
যারিনের ইচ্ছা ছিলো শাড়ি নিয়ে কাজ করার। এই ইচ্ছাটা প্রবল ছিলো ছোটবেলা থেকেই। ব্যাপারটা এসেছে শাড়ির প্রতি তার দুর্বলতা থেকে। মাস্টার্সে যখন ছিলেন, তখন পড়াশুনার পাশাপাশি নিজে থেকে কিছু করতে চাইতেন। সেই ইচ্ছা থেকেই কুমুদিনীর বসন নামে একটা গ্রুপ খোলা, তারপর ২০১৭ সালের দিকে পেইজ।
তার সবসময় মনে হতো আমাদের দেশীয় শাড়ির মতো এমন গুণগত মান আর কোন দেশের শাড়িতে নেই। তাই শুরু থেকেই মূলত তিনি দেশী শাড়ি নিয়েই কাজ করছেন।
উদ্যোক্তার নিজস্ব তাঁতী আছে। তাদের তিনি রঙ-ডিজাইন-কম্বিনেশন বলে দেন। সে অনুযায়ী তৈরি হয় শাড়ি। যারিন জানান, কুমুদিনীর বসনে তসর, সিল্ক, সুতি, খাদি, জামদানি, মনিপুরী শাড়ি পাওয়া যায়।
তার সাথে যারা কাজ করছেন তারা সবাই নারী। কেউ আছেন এখনও পড়াশুনা করছেন, আবার কেউ হোমমেকার। পড়াশুনা বা সংসার সামলানোর পাশাপাশি উদ্যোক্তার উদ্যোগে সহযোগী তারা।
যারিন তার উদ্যোগ সম্পর্কে উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, “আমি সবসময় সবার কাছে সাধ্যের মধ্যে আমার শাড়ি পৌঁছে দিতে চাই। আমি যখন বিএসসি করছিলাম, তখন বড় বড় শো-রুমে যেতাম, শাড়ি পছন্দ হতো কিন্তু দামে মিলতো না দেখে রেখে আসতে হতো। আমি জানি একজন শাড়িপাগল মেয়ের শাড়ি কিনতে না পারার কষ্টটা। তাই লাভ সীমিত রেখে রিজনেবল প্রাইসে শাড়ি বিক্রি করি। সবাই কিনে খুশি, আমিও বিক্রি করে খুশি।”
সামনে তার ইচ্ছা দাম না বাড়িয়ে উদ্যোগকে আরও বড় করার। হয়তো খুব তাড়াতাড়ি সম্ভব না, আস্তে আস্তে বড় হবে বলে আশা করেন যারিন।
তার উদ্যোগের একটি বিশেষ দিক কিস্তিতে শাড়ি কেনার সুবিধা। অনেক শিক্ষার্থী একবারে টাকা দিয়ে শাড়ি নিতে পারেন না। তাদের জন্য কিস্তিতে টাকা দিয়ে শাড়ি কেনার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
দেশের ভেতর এবং বাইরেও তার পণ্য পাওয়া যায়। বলা চলে যেখানে বাংলাদেশী আছেন, সেখানেই কুমুদিনীর বসনের শাড়ি পৌঁছে গেছে। সামাজিক বাধা-বিপত্তি পার করে আজকের অবস্থানে আসা যারিনের আশা অন্যরাও তার দ্বারা উৎসাহিত হবেন। এটাই তাকে আসল আনন্দ দেয়। কুমুদিনীর বসন নিয়ে তার অনেক বড় স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
মাসুমা শারমিন সুমি,
উদ্যোক্তা বার্তা