ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ফাইন্যান্স নিয়ে বিবিএ শেষ করে ২০০৫ সালে চাকরিতে জয়েন করেন ফারজানা ইয়াসমিন অপরাজিতা। চাকরিরত থেকেই এমবিএ শেষ করেন। রিসার্চ এন্ড নলেজ ম্যানেজমেন্টে একটানা ৭ বছর কাজ করলেন। তারপর ডেল বাংলাদেশের এইচ আর ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই কিছু করবেন। পরিবারকে সময় দেয়া এবং নিজের মন মতো করে কাজ করার কথা ভেবেই নিজেই কিছু করবো, এমনই প্রত্যয় ছিলো তার।
২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়। মাত্র ৪০ হাজার টাকা দিয়ে মনিপুরী তাঁতের ২২টি শাড়ি কিনে ফেসবুকে ‘তাঁত কাব্য’ নামের একটি পেইজ তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেন ফারজানা ইয়াসমিন অপরাজিতা।
নিজের মোবাইল দিয়েই পণ্যের ছবি তুললেন, করলেন পেইজে পোস্ট। তখন ১৫০০ এর মতো বন্ধু ছিলো তার ফেসবুকে। সবাইকে ইনভাইট করলেন তার পেইজে লাইক দেয়ার জন্য । তারপর অপেক্ষা আর অপেক্ষা। ১৭ দিন পর ফেসবুক পেইজ থেকে এলো প্রথম অর্ডার। প্রতিদিনের পোস্টের জন্যে ছবি তোলা, পোস্ট করার পর ছবিগুলো নিয়ে সেল এবং ডেলিভারি স্ট্র্যাটিজি কেমন হবে তা নিয়ে গবেষণা করা, সবকিছু সাজালেন নিজে একাই। চার মাস পর উদ্যোক্তা বুঝতে পারলেন প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ টি শাড়ি বিক্রয় হওয়া এগিয়ে যাবার এবং সফলতার সিঁড়িতে ওঠার কথাই বলছে।
ধীরেধীরে ফেসবুক পেইজে লাইক সংখ্যা ৩০ হাজার হলো। আগ্রহও বাড়তে থাকলো তার। নিয়মিত যাওয়া আসা, সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজাইন তৈরি করা, রঙের বুনন বুঝিয়ে দেয়া, কম্বিনেশন ক্রিয়েট করা, সবকিছু নিজেই নির্দেশ দিতে থাকলেন উদ্যোক্তা।
মূল বুননকে ঠিক রেখে নিজের ডিজাইন উপস্থাপন করলেন মনিপুরী শাড়ির ওপর। সাড়া মিললো ব্যাপক।
৭০ হাজার ক্রস করে পেইজের লাইক সংখ্যা ১ লক্ষতে পৌঁছায়। প্রবল আনন্দে পণ্যের ওপর ১০% ছাড় ঘোষণা করেন তিনি। বিক্রির সাথে বাড়তে থাকে উদ্যোক্তার মনোবল। সফলতার হাসি হাসেন উদ্যোক্তা। ক্রেতাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেলেন অনেক। পেইজে ১ লক্ষ ৫০ হাজার লাইক ছাড়িয়ে যায়।
সবসময় ভেবেছেন আবহাওয়া উপযোগী পোশাকের কথা, মানের কথা, প্রোডাক্ট ডেলিভারির সময় নিয়ন্ত্রণ। সবকিছুই যেনো তাকে এনে দেয় ভীষণ সফলতা।
শাড়ি, ওড়না, মনিপুরী অঞ্চল থেকে হ্যান্ডলুম কটন এবং সলোয়ার কামিজের সাথে মনিপুরী ওড়না ফিউশন, সেই সাথে আছে শাড়ির ফিউশন, মনিপুরী শাল। সবকিছু মিলিয়ে উদ্যোক্তার এক অপরাজেয় ভুবন যেনো তাঁত কাব্য। ৪১ টি তাঁতে আজ চলে উদ্যোক্তার শাড়ি বুনন, সেলোয়ার কামিজ তৈরি। মাত্র দেড় বছরে অপরাজিতা আজ সফলতার সাথে পরিচালনা করছেন অনলাইনে ১০ লক্ষ টাকা মূল্যমানের ব্যবসা।
নিজের পথচলা সম্পর্কে অপরাজিতা বলেন, “আমি প্রায় ১১ বছর বিভিন্ন অর্গানাইজেশনে কাজ করেছি, কিন্তু একটা সময় মনে হলো, আমি যেহেতু বিজনেসের স্টুডেন্ট ছিলাম তাই নিজে থেকে কিছু একটা করি। প্রথমে একটু ভয় কাজ করছিলো, নতুন একটি সেক্টরে কাজ করতে যাচ্ছি। তেমন কিছুই জানিনা এর সম্পর্কে, তবে মনিপুরী শাড়ির প্রতি অন্যরকম এক ভালোলাগা ছিলো। সেখান থেকেই এগিয়ে চলা”