বাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্যের উৎসব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের উৎসব, বাসন্তী রঙের উৎসব-“বাংলা নববর্ষ”। সেই উৎসব উদযাপন উপলক্ষে আজ পহেলা বৈশাখ ১৪২৬ (১৪ এপ্রিল ২০১৯) বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে বিসিক ও বাংলা একাডেমীর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী “বৈশাখী মেলার” উদ্বোধন হয়।
মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হস্ত, কারুশিল্পী ও উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর প্রায় ২০০টি স্টল স্থান পেয়েছে। মেলায় ১০টি স্টলে কারুশিল্পীগণ তাদের বিভিন্ন পণ্য মেলার মাঠে তৈরি করে তা প্রদর্শন ও বিক্রি করছেন। মেলা উপলক্ষে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী লোকসঙ্গীতসহ অন্যান্য গান পরিবেশিত হবে।
মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী জনাব নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। প্রথমে ফিতা কেটে মেলার উদ্ভোধন করেন। পরে তিনি মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। এ সময় মাননীয় শিল্প প্রতিমন্ত্রী জনাব কামাল আহমেদ মজুমদার এম.পি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব কে এম খালিদ এম.পি, শিল্প সচিব জনাব মোঃ আবদুল হালিম, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি , বিসিক চেয়ারম্যান জনাব মোশ্তাক হাসান, এনডিসি, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয় ও বিসিকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ তাঁর সাথে ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক জনাব হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী জনাব নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি বক্তৃতা কালে বলেন “বাঙালি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও বিকশিত করে একটি শিল্পসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকার কাজ করছে। এ জন্য দেশব্যাপী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)কে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার ২০২১ সালের মধ্যে শিল্পায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে শিল্প সমৃদ্ধ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আগামী পাঁচ বছরে ১ কোটি ২১ লাখ লোকের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে”।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি বলেন, “দেশে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প খাতে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যসমগ্রীর বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিতে এদেশে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলাসহ অন্যান্য মেলার বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এদিক থেকে বিসিক ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়নে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বসবাস করছি। যে দেশের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য কম সে পণ্যই বিশ্ববাজারে প্রবেশ করছে। বিধায় উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের গুনগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ ধরণের মেলার আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস”।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় শিল্প সচিব মোঃ আবদুল হালিম বলেন, “বাঙালির আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে বাংলা নববর্ষ সুদীর্ঘকাল থেকে এক বিশাল স্থান দখল করে আছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন সামনে রেখে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমীর যৌথ উদ্যোগে বৈশাখী মেলা-১৪২৬ এর আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে”।
সভাপতির বক্তব্যে বিসিক চেয়ারম্যান জনাব মোশ্তাক হাসান এনডিসি বলেন, “বিসিক দেশের ক্ষ্রদ্র ও কুটির শিল্প খাতের উন্নয়ন ও বিকাশে নিয়োজিত সরকারী মূখ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ঢাকার বৈশাখী মেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করে আসছে। মূলত যে চিন্তাধারাকে সামনে রেখে বৈশাখী মেলার আয়োজন তা হলো: কুটির ও হস্তশিল্পজাত পণ্যের বাজার সৃষ্টি, গ্রামীণ কারুপণ্যকে শহুরে জনগোষ্ঠী ও বিদেশীদের কাছে পরিচিত করা, ক্রেতা সাধারণের চাহিদা উৎপাদকদের জ্ঞাত করানো এবং কারুশিল্পীদেরকে নতুন নতুন নকশা ও নমুনার সাথে পরিচিত করা। তাছাড়া আবহমান বাংলার লোকসংস্কৃতি ও লোকঐতিহ্যকে রাজধানীবাসীদের সামনে তুলে ধরা”।
উদ্বোধনের প্রাককালে শিল্পমন্ত্রী ১৪২৫ সনের শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী হিসেবে পরেশ চন্দ্র দাশের, সোনারগাঁও, নারায়নগঞ্জ, হাতে ‘কারুরত্ন’ পুরস্কার, একটি ক্রেস্ট ও অভিজ্ঞানপত্র তুলে দেন। এছাড়া দক্ষ কারুশিল্পী হিসেবে ১) মোঃ আনোয়ার হোসেন, পীরগাছা, রংপুর; ২) মিসেস জিং চেওময় ত্রিপুরা, উজানীপাড়া, বান্দরবান; ৩) অনুপ নাগ, শাখারী বাজার, ঢাকা; ৪) কাঁসি চন্দ্র ত্রিপুরা, রোয়াংছড়ি, বান্দরবান; ৫) সানজানা হোসেন, নারিন্দা, ঢাকা, ৬) হোসনে আরা বেগম, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ, ৭) সুবোধ কুমার পাল, বাগধানী, রাজশাহী; ৮) খন্দকার আহাদুজ্জোহা, ঝিকরগাছা, যশোর -এদের হাতে ‘কারুগৌরব’ সনদ, ক্রেস্ট ও অভিজ্ঞানপত্র তুলে দেন।
মাইক্রো, ক্ষুদ্র, কুটির, মাঝারি, বৃহৎ, হাইটেক, সেবাসহ সকল শিল্পখাতের টেকসই বিকাশে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। আজকের এ মেলাও মাইক্রো, ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতার একটি দৃষ্টান্ত। দেশে উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন ও বিপণনের জন্য মেলার আয়োজন একটি কার্যকর উদ্যোগ। এর মাধ্যমে আমাদের ক্ষুদ্র, কুটির ও কারু শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের গুনগত মান উন্নয়নের পাশাপাশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করেন উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ।
মেলা আগামী ১০ বৈশাখ (২৩ এপ্রিল ২০১৯) পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত থাকবে।
বিপ্লব আহসান