নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল,কোটি মানুষের কর্মসংস্থান

0

সম্প্রতি কক্সবাজারে দেশের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিল্পায়নের জন্য সারা বাংলাদেশে আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। এছাড়া টেকনাফ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মানের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাঁশখালীতে অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩ গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তিনি।

২০১০ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন প্রণীত হয়। এই আইনের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) গঠিত হয়। ৭৫ হাজার একর জমিতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাই এই কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য।

কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেজার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী চেয়ারম্যান হরিপ্রসাদ পাল। জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে বেজা। শুধু তাই নয়, এর ফলে বছরে অতিরিক্ত চার হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পণ্যও রপ্তানি হবে।

বিনিয়োগের জন্য বিশ্বমানের সেবা প্রদান এবং সবধরণের বিনিয়োগ হয়রানি বন্ধে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’- এর মাধ্যমে বিনিয়োগবান্ধব বাংলাদেশ গড়ে তোলাই বেজার প্রধান লক্ষ্য।

১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি তৈরি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরত্বে। বর্তমানে মহাসড়কের সংযুক্তির জন্য সংযোগ সড়কের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র ৭৯ কিলোমিটার দূরে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ছাড়াও টেলিযোগাযোগ, পানিসহ শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সব সুযোগ সুবিধা ও অবকাঠামো বিদ্যমান। এই অঞ্চল গার্মেন্ট ও গার্মেন্ট উপকরণ, টেক্সটাইল, মোটরসাইকেল ও গাড়ীর যন্ত্রপাতি, জাহাজ নির্মান, স্টিল এবং হাই-টেক শিল্পের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

দেশের প্রথম পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ শ্রী হট্ট ইকোনমিক জোন। মৌলভীবাজারের শেরপুরে ৩৫২ একর জমি নিয়ে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে এটি আকর্ষণীয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাছেই, সিলেট শহর থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে এটি। রেল যোগাযোগের দিক থেকেও এই অঞ্চলটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কুশিয়ারা নদীর কাছেই অবস্থিত এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি। এখান থেকে ওসমানী আর্ন্তাতিক বিমানবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। বর্তমানে এখানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ সুবিধাসহ টেলিযোগাযোগ ও গ্যাস সুবিধা আছে।

এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি টেক্সটাইল (স্পিনিং, ওয়েভিং এবং ডাইং) সিরামিক পেইন্টিং গ্লাস তৈরী ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপে আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুুদ্র বন্দর মংলার কাছেই। ২০৫ একর জমির উপর নির্মিত এই অঞ্চলটি এখন প্রস্তুত। রেডিমেড গার্মেন্টস, পাটজাত শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প, এলপিজি এবং শিপইয়ার্ডেও জন্য মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

আগামী ১৫ বছরে এই কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হবে বলেও জানান হরিপ্রসাদ পাল। যার মধ্যে ১৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরুও হয়েছে। এসবের কোথাও মাটি ভরাটের কাজ চলছে, কোথাও গ্যাস বা বিদ্যুত সংযোগের কাজ চলছে। আবার কোথাও সংযোগ সড়ক নির্মানের কাজ চলছে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চতুর্থ ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চল হলো জি টু জি। সম্পূর্ণ নতুন উদ্ভাবনী এই উদ্যোগের নাম জি টু জি। এই উদ্যোগের আওতায় দুই রাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগ, ঐ রাষ্ট্রের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠিত হবে। যেখানে শুধু মাত্র ঐ দেশের বিনিয়োগকারীরা শিল্প স্থাপন করবেন।

বেজা ইতিমধ্যে বাগমারা, ভেড়ামারা এবং মংলায় এরকম অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এজন্য বাংলাদেশ – ভারত সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে। শুধু সরকারি উদ্যোগে নয়, বেসরকারি উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজেরও সমর্থন ও সহযোগিতা দিচ্ছে বেজা। এমন ৭টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ঢাকার কাছেই।

বেজা’র অনবদ্য এবং উদ্ভাবনী একটি উদ্যোগ হলো বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। বিশেষায়িত শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা ও বিকশিত করার লক্ষ্যে এরকম উদ্যোগ্ সাবরং পর্যটন পার্ক হলো বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

কক্সবাজারে ১০২৭ একর জমির উপর, প্রাকৃতিক নৈসর্গিক পরিবেশ, পাহড় আর সমুদ্রের মেলবন্ধনে গড়ে উঠছে এই অঞ্চল। পর্যটনের আকর্ষণ নাফ নদীতে অবস্থিত জালিয়ার দ্বীপ, যার একপাশে মায়ানমার, আর অন্যপাশে বাংলাদেশ। এখানে পর্যটনের জন্য অত্যাধুনিক সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন নগরী।

প্রস্তাবিত পর্যটন অঞ্চলটি টেকনাফ শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে। কক্সবাজার বিমানবন্দরও কাছেই। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন এখান থেকে নৌ বিহারে সময় লাগবে মাত্র এক ঘন্টা।

এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারী ডেভেলপাররা পাবেন: ১২ বছরের আয়কর সুবিধা, স্থানীয় ক্রয় থেকে ভ্যাট মওকুফ, কাস্টমস শুল্ক সুবিধা, জমি রেজিস্ট্রেশন ফি ও স্ট্যাম্প ডিউটি মওকুফ এবং ডিভিডেন্টে ট্যাক্স মওকুফ। এখানে বিনিয়োগকারী শিল্প উদ্যোক্তারাও পাবেন অনেক সুযোগ-সুবিধা। তারাও পাবেন, ১০ বছরে আয়কর সুবিধা, কাঁচামাল আমদানীতে ডিউটি অবকাশ, যেকোন পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ সুবিধা এবং জমি রেজিস্ট্রেশন ফি ও স্ট্যাম্প ডিউটি মওকুফ।

অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশের উন্নত দেশ হওয়ার পথ গতিশীল করবে। যার ফলে সরকারের ভিশন ২০২১ এবং উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্ন ২০৪১ এর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

গত মার্চ মাসে এ সংক্রান্ত এক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম বলেন, দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেজা প্রথম থেকেই কাজ করে আসছে। গত ৫ বছরের তুলনায় আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতেও সাহায্য করে এসেছে। জিডিপির বৃদ্ধির হার এখন ৭.০৫ শতাংশ।

সেমিনারে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ। গুণগত মানসম্মত সেবা দিলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন, তা দেখিয়ে দিয়েছে বেজা।

জানা গেছে, তিন অর্থনৈতিক অঞ্চলে আড়াই হাজার একর জমি সরাসরি বরাদ্দ দেবে বেজা। প্রাথমিকভাবে মিরসরাই, শ্রীহট্ট ও সাবরাং ট্যুরিজম অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তাদের এ প্রক্রিয়ায় জমি বরাদ্দ দেওয়া হবে।

ভূমি সংকটের কারণে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী বৃহৎ কারখানা স্থাপনে ৫০ থেকে ৫০০ একর জমি চেয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরুর পর এমন আগ্রহী কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২০০ একর জমি সরাসরি বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ অঞ্চলে প্রথম ধাপে ৫৫০ একর জমি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যৌথ কোম্পানি গ্যাসমিন, পাওয়ারপ্যাক ও ইস্টওয়েস্টকে। এ ছাড়া বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ জোন অথরিটিকে (বেপজা) ১ হাজার ২০০ একর জমি ইডেজ উন্নয়নের জন্য দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ধাপে বেজা নিজস্ব উদ্যোগে উন্নয়ন করে সরাসরি উদ্যোক্তা বরাদ্দ দেবে।

অন্যদিকে, সিলেটের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে উন্নয়ন থেকে সরে এসে সরাসরি বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে বেজা। এ জন্য ৩৫২ একরের এ অঞ্চল উন্নয়নের জন্য ৩৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সংস্থাটি।

অপর অর্থনৈতিক অঞ্চল কক্সবাজারের ৯৪৩ একর জমিতে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক উন্নয়ন করা হচ্ছে। শিগগির ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই অঞ্চলের জমি বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ ইজেডগুলোর ডেভেলপারদের মাধ্যমে জমি ভাড়ার ভিত্তিতে সরাসরি বরাদ্দ দেবে বেজা।

বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী সম্প্রতি বলেছেন, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে যারা বৃহৎ শিল্প স্থাপন করতে চান, তাদের বেজা বরাদ্দ দেবে। ছোট বা মাঝারি শিল্পের জন্য নয়। চলতি মাসে এ জন্য আবেদন চাওয়া হবে। তিনি বলেন, চলতি মাসের মাঝামাঝি শ্রীহট্ট ইজেডের জমি সরাসরি বরাদ্দের আবেদন চাওয়া হবে। এ অঞ্চলে মাঝারি ও বড় উদ্যোক্তারা সুযোগ পাবেন। পরে সাবরাং ইজেডের আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

পবন চৌধুরী বলেন, স্টিল কারখানা, এলপিজি, জাহাজ নির্মাণ ও কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণসহ বিভিন্ন বৃহৎ শিল্পে সরাসরি বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাদের আবেদন প্রস্তাব পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে তালিকা প্রকাশ করা হবে।

শিল্প উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরিতে যে প্রক্রিয়ায় ইজেড উন্নয়ন কাজ করছে বেজা, এগুলোর মধ্যে রয়েছে, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে যৌথভাবে ইজেড উন্নয়ন। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে এ দেশের সরকারের যৌথ চুক্তিতে জি টু জি ভিত্তিতে ইজেড উন্নয়ন। বেজা ডেভেলপার নিয়োগের মাধ্যমেও নিজস্ব উদ্যোগে উন্নয়ন করে সরাসরি শিল্প উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেবে। এ ছাড়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন করা হবে।

গত জানুয়ারিতে বেজার গভর্নিং বোর্ড সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমির ইজারা মূল্য ঠিক করেছে। এসব অঞ্চলে এককালীন ৫০ বছরের ক্ষেত্রে উন্নয়ন করা হয়নি এমন জমির ইজারা মূল্য বর্গমিটার প্রতি বছরে শূন্য দশমিক ৩০ ডলার এবং উন্নয়ন করা জমির মূল্য শূন্য দশমিক ৬০ ডলার। বিশেষায়িত অবকাঠামোর জন্য ইজারা মূল্য শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ ডলার হবে। তবে বছর ভিত্তিতে কোনো বিনিয়োগকারী জমি নিতে চাইলে তাকে প্রতি বর্গমিটারে ভাড়া দিতে হবে শূন্য দশমিক ৯০ ডলার থেকে ১ দশমিক ৫০ ডলার পর্যন্ত।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া যাবে। ইজেডের নির্মাণসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ভ্যাটমুক্ত এবং শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা দেওয়া হবে। লভ্যাংশ কর, রয়েলটি ও কারিগরি ফি থেকে অব্যাহতি পাবেন উদ্যোক্তারা। স্থানীয় সরকারের কর, ভূমি উন্নয়ন কর ও ভূমির মালিকানা হস্তান্তরে নিবন্ধন ফি’র ক্ষেত্রেও অব্যাহতি দেওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here