নড়াইলে দারুন সম্ভাবনাময় মসলা চুইঝাল

0

অন্য ফসলের তুলনায় মসলা জাতীয় পণ্য চুইঝালের আবাদে পরিশ্রম কম, রোগবালাইও নেই বললেই চলে। সেই সঙ্গে চাষাবাদের জন্য আলাদা জমিরও প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আঙিনা কিংবা বাগানের যেকোনো গাছের সঙ্গে সহজেই চাষ করা সম্ভব। এককথায়, স্বল্প ঝামেলা ও স্বল্প ব্যয়ে উৎপাদন করে চাহিদা থাকায় বিক্রিতেও ঝামেলা পোহাতে হয় না। এসব সুবিধার কারণে নড়াইলে চুইঝালের আবাদ বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ভৌগোলিক কারণেই জেলাটির মাটি মসলা জাতীয় এই পণ্য চাষের জন্য বেশ উপযোগী।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে চুইঝাল চাষে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার পরই নড়াইলের অবস্থান। জেলার ৩টি উপজেলায় বর্তমানে ৭ হাজার ৪৩৭টি পরিবার চুইঝাল চাষ করছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় মোট ১২ হেক্টর জমিতে ৩০ টন চুইঝাল উৎপাদিত হয়। আগের অর্থবছরে উৎপাদিত হয়েছিল ২৫ টন। এক বছরে আবাদ বেড়েছে পাঁচ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জেলাটিতে চুইঝালের উৎপাদন ছিল মাত্র ৯ টন। অর্থাৎ ৬ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ২১ টন। সদর উপজেলার উজিরপুর গ্রামে সাড়ে তিন একর জমিতে চুইঝাল চাষ করছেন নাজমুল মোল্যা ও স্বর্ণা ইয়াসমিন দম্পতি। স্বর্ণা ইয়াসমিন ২০২১ সালে চার থেকে পাঁচটা গাছ লাগিয়েছিল। সেই গাছ থেকে ডগা কেটে আবার রোপণ করেন। এভাবে বাড়তে বাড়তে বাগানে এখন প্রায় তিন হাজারের মতো চুইগাছ আছে। ইতিমধ্যে বিক্রিও শুরু করেছেন। খরচের তুলনায় বাজারে মসলাটির দাম অনেক বেশি।

 

চুইঝাল চাষে আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না তাই তেমন কোনো খরচ নেই। এটা থেকে বেশি লাভ করা সম্ভব। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেলে–দোআঁশ মাটিতে চুইঝালের চারা রোপণ করলে সবচেয়ে ভালো ফলন পাওয়া যায়। একটি গাছ থেকে কাটিং পদ্ধতিতে নতুন করে চারা উৎপাদন করা যায়। ফলে বারবার চারা কেনার প্রয়োজন হয় না। গাছ রোপণের পর জৈব সার ও পর্যাপ্ত পানি দিলেই হয়। বাড়তি তেমন কোনো যত্নের প্রয়োজন নেই। দুই বছর পর থেকে গাছ বিক্রি করা যায়। গাছের ওজন হিসেবে এর দাম নির্ধারণ হয়। গাছের বয়স যত বাড়ে, দামও বাড়তে থাকে। ১০ বছরে একেকটি গাছ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়।

আগে চুইঝালের চারা নড়াইলের নার্সারিতে উৎপাদিত হতো না। মালিকেরা খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া থেকে চারা এনে খুচরা বিক্রি করতেন, তবে দিন দিন চাহিদা বাড়ছে। দুই বছর ধরে নড়াইলে চুইগাছের চারা উৎপাদিত হচ্ছে। শহরের ভাদুলিডাঙ্গা এলাকায় আল্লাহর দান নার্সারি অ্যান্ড পলিনেট হাউসে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অন্য গাছের চারার সঙ্গে ব্যাপক পরিসরে চুইঝালের চারার উৎপাদন করা হচ্ছে। নার্সারির স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দিন যত যাচ্ছে, নড়াইলের চুইঝালের চারার চাহিদা ততই বাড়ছে। এক বছর আগে যে পরিমাণ চারা বিক্রি করছি, এখন তার চেয়ে চার গুণ বেশি বিক্রি হচ্ছে। যা উৎপাদন করছি, তা দিয়ে চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশেক পারভেজ বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে চুইঝালের ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। বাজারে এর চাহিদা অনেক। এ অঞ্চলের যে কয়টা জেলায় চুইঝালের চাষ হয়, তার মধ্যে নড়াইল অন্যতম। স্বল্প খরচ ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষক এটি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষকের সঙ্গে থেকে চুইঝালের চাষ বাড়াতে কাজ করছি।’

ডেস্ক রিপোর্ট,উদ্যোক্তা বার্তা 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here