সকাল কিংবা বিকেলের অবসর সময়ে বাড়ির উঠানে খোশ গল্পে মেতে উঠেন কয়েকজন নারী। তবে তাদের কেউই অনর্থক সময় কাটান না। সবার হাতেই রয়েছে সুঁই, সুতা ও কাপড়। গল্পের মাঝেই নান্দনিক নকশা আর কারুকাজে সুঁই-সুতোয় নিপুণ হাতে বানানো হচ্ছে টুপি। এটি মূলত ওমানের জাতীয় টুপি ‘কুপিয়া’।
প্রায় এক যুগ আগে ফেনী থেকে ১১জন এসে এই টুপি বানানোর প্রশিক্ষণ দেন গ্রামের নারীদের। তখন থেকেই শুরু হয় টুপি তৈরির কাজ। বিশেষ ধরনের এই টুপি বানানোর কর্মযজ্ঞ চোখে পড়বে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায়। এখানকার ভালাইন, মধুবন, কুঞ্জবন, সুলতানপুর, খাজুর, গোয়ালবাড়ি, তাতারপুরসহ অন্তত ৬০টি গ্রামে বিভিন্ন বয়সী নারীরা এসব টুপি তৈরি করছেন। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁর প্রায় ১১টি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে টুপি তৈরির কাজ।
বোতাম, চেইন, দানা ও মাছকাটা নামে চার ধরনের টুপি সেলাই করা হয়। কয়েকহাত বদলের পর পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় একটি টুপি। উদ্যোক্তারা কারিগরদের সব ধরনের উপকরণ সরবরাহ করে থাকেন। ওমান ছাড়াও পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এসব টুপি রপ্তানি হয়ে থাকে। এই কাজ করে মাসে ৩-৪ হাজার টাকা রোজগার হয় একেক জন নারীর।
টুপি তৈরির শুরুটা নওগাঁর ইসমাইল হোসেনের হাত ধরে। একসময় তিনি ওমানে থাকতেন। ২০০৪ সালে দেশে ফিরে নিজেই টুপি বানানো শুরু করেন। তার অধীনে বর্তমানে কাজ করেন দুইশ কর্মী। নকশাভেদে তিনি এক একটি টুপি বিক্রি করেন সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। প্রতিমাসে দেড় হাজার পিস টুপি বিদেশে রপ্তানি করে থাকেন তিনি।
তার মাধ্যমেই মহাদেবপুর উপজেলায় অনেকেই টুপি নিয়ে কাজ শুরু করেন। এতে গ্রামের নারীরা তাদের অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করার সুযোগ পাচ্ছেন।
টুপি তৈরি করে নওগাঁর নারীরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন, একই সঙ্গে রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-এর আরও একটি সৃজনশীল পণ্য।
টুপি তৈরির কারিগর এবং উদ্যোক্তাদের যদি সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়, তাহলে টুপি তৈরির কাজটি সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে এবং প্রত্যেকে ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে উদ্যোক্তারা আশা করছেন।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা