মহামারী করোনাভাইরাসে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এনে দিয়েছে। এসএমই খাত দেশের ৭৩ লাখ কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। এর বড় অংশই নারী। এর মানে নারীরা এই ব্যবসার মাধ্যমে দেশি ও বৈদেশিক বাণিজ্যে অবদান রেখে জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। করোনার নেতিবাচক প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ উদ্যোক্তারা। এরই মাঝে দেশের সকল উদ্যোক্তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন একজন, স্বপ্ন দেখেন দেশের সকল নারী উদ্যোক্তাদের এক সুতোয় গাঁথবেন। তিনি আনোয়ারা আক্তার শিউলী। যিনি শাওন ক্রাফটের স্বত্বাধিকারী ও কারুশৈলী কুটির শিল্প নারী উন্নয়ন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট।
সম্প্রতি উদ্যোক্তা বার্তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তুলে ধরেছেন কারুশৈলী মাধ্যমে নারী উন্নয়ন, নারীর উদ্যোক্তা হয়ে উঠা এবং নারীর স্বাবলম্বী হবার কথা।
কারুশৈলী কুটির শিল্প নারী উন্নয়ন সংগঠন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এটি একটি ফেসবুক কেন্দ্রিক গ্রুপ ও এটি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে রেজিষ্ট্রেশন করা একটি সংগঠন।
সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট আনোয়ারা আক্তার শিউলী জানালেন, ‘এই সংগঠন এর মাধ্যমে আমরা সবার সাথে পরিচিতি বাড়াতে ও শক্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারব। শুধু তাই নয় আমাদের সমাজে যে সকল নারীরা তাদের নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হতে চায়, পাশাপাশি নতুন কিছু জানতে ও শিক্ষতে চায় আমারা সেই সমস্ত নারীদেরকে পরিপূর্ণ গাইডলাইন ও সুন্দর কাজের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষে নিরালস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই বাংলাদেশের সব নারী উদ্যোক্তাদের একই সুতোয় গাঁথা থাকি। যার মাধ্যমে আমরা সবাই সবার সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি।’
নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন: ‘শুরুটা আধুনিক ও রুচি সম্মত ডিজাইনের লেডিস ফ্যাশন আইটেম শাওন ক্রাফটস দিয়ে। এখান থেকেই স্বপ্ন দেখি নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে সংগঠন করার। ২০১৪ সালে আমরা কারুশিল্প নামে একটা সংগঠন করি যার মাধ্যমে নারী উদ্য্যোক্তা নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারে এবং কাজ শিখতে পারে। এখান থেকে আমরা বিভিন্ন ট্রেনিং করাচ্ছি, পণ্য বাজরজাতকরণ ব্যবস্থা শিখাচ্ছি।’
নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে কারুশৈলী ব্যাপক উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে জানিয়ে আনোয়ারা আক্তার বলেন, ‘গত ছয় মাস ধরে নরসিংদী থেকে একটা মেয়ে আমাকে খুঁজছে, যে কিনা আমার কাছে কাজ শিখবে। এবং কিভাবে তার ব্যবসার আরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে। অবশেষে সে আমার দেখা পেয়েছে। তার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরো কিভাবে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যায় এসব বিষয় নিয়ে আমরা গবেষণা করছি।’
‘কারুশৈলী নারী উন্নয়ন সংগঠন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ এর সফলতা কিভাবে দেখবেন জানতে চাইলে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট বলেন: ‘এখন পর্যন্ত কারুশিল্প থেকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ নারী উদ্যোক্তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং কমপক্ষে আটশ’র বেশি উদ্যোক্তারা নিজ নিজ ব্যবসার মাধ্যমে বিকশিত করেছেন। তারা নিজেদের ব্লক, বাটিকের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। এছাড়াও আমরা নতুন করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, যাতে করে অনলাইনে উদ্যোক্তারা সফলভাবে ব্যবসা পরিচালিত করতে পারে। এছাড়াও আমরা কারুশৈলী নামের একটি ওয়েব সাইট খুলেছি; যার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছুক নারীরা সরাসরি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে।’
কারুশৈলী’র মূল উদ্যোগ জানতে চাইলে আনোয়ারা আক্তার বলেন: ‘ ঘরে বসে থাকা নারীদের জন্য কারুশৈলীর মূল উদ্যোগ। আমাদের দেশে এখনও অনেক পরিবারে পক্ষ থেকে নারীদের ঘরে বের হতে দিতে চায় না। আমরা মূলত তাদেরকে অনলাইনে কাজ শিখিয়ে দেই। প্রয়োজনে তাদের ঠিকানায় যাবতীয় উপকরণ পাঠিয়ে দেই।’
‘আমরা চাই তারা যেন সংসারের সব কাজ শেষ করে যে সময়টুকু পায় সে সময়টা দিয়ে যেন কাজে লাগিয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারে এবং টাকা উপার্জন করতে পারে। আমাদের অর্ধেক উদ্যোক্তাটাই কিন্তু বিবাহিত নারী, যারা তাদের অবসরকালীন সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আয় করছে।’
ওয়ার্ল্ড এসএমই ফোরামের তথ্য অনুসারে দেশে ৭০ লাখ ৮১ হাজার শিল্পের মধ্যে ৬০ লাখ ৮০ হাজার কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প ১ লাখ ১০ হাজার, ছোট শিল্প ৮ লাখ ৫০ হাজার, মাঝারি শিল্প ৭১ হাজার ও ৫২ হাজার বৃহৎ শিল্প রয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পঞ্চম স্থানে থাকা বাংলাদেশ এসএমই শিল্প সংখ্যায় বিশ্বে সপ্তম স্থানে রয়েছে। দেশে এসএমই খাতে কর্মসংস্থানের পরিমাণ ৭৩ লাখ।
বর্তমানে জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। ২০৪১ সালের মধ্যে তা ২৮ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ওই সময় জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান হবে ৪০ শতাংশ।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা