ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি রান্না আর আর্ট এর প্রতি আগ্রহী ছিলেন জাভিন আহমেদ ইতি। মায়ের কাছ থেকেই মেয়েদের রান্না শেখা হয়। তবে ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় তিনি মা-কে হারান, তাই রান্নাটা বলতে গেলে নিজ আগ্রহেই তার শেখা। দৈনিক পত্রিকার সাথে সাপ্তাহিক যে একটা ম্যাগাজিন দিতো, ওখান থেকে রান্নার রেসিপিগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। ওগুলো দেখে দেখে মাঝেমধ্যে শখের রান্না করতেন। এভাবেই রান্নার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। ২০২০ এর জানুয়ারিতে হোমমেইড খাবার নিয়ে তার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু হয়।
হোমমেইড ফুড ব্যবসায় সফল জাভিন আহমেদ ইতি বলেন, ‘মূলত আমার ননদ আর আমার বান্ধবীর কারণে আমার অনলাইন ব্যবসায় আসা। আমার বান্ধবী তার ব্যবসার জন্য পেইজ খুলবে, পেইজের নাম কী দেবে এটা নিয়ে কথা বলছিল। তখন আমার মনে হলো আমি কেন বসে থাকবো, আমিওতো আমার শখের রান্নাগুলো সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারি। সেই ভাবনা থেকেই অনলাইনে একটা পেইজ খুলে ফেললাম। মেয়ের নামে পেইজের নাম রাখলাম ‘মুসকান’স কিচেন’।”
পরে ননদের পরামর্শে উই গ্রুপে যোগ দিয়ে বুঝতে পারেন অনেক মেয়ে ঘরে বসে, সংসার সামলে বিভিন্ন কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছে। তারা সবাই উদ্যোক্তা । এটা দেখে তিনি আরও বেশি অনুপ্রাণিত হন। তার ভেতর উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জেগে উঠে।
‘‘মাত্র দুই হাজার টাকা দিয়ে বিজনেস শুরু করেছিলাম। প্রথম অর্ডার পেয়েছিলাম পিঠা আর আচারের। একটু টেনশন কাজ করছিল, ক্লায়েন্টের পছন্দ হবে তো? আলহামদুলিল্লাহ, ভালো রিভিউ পেয়েছিলাম। প্রশংসা পেয়ে কাজের গতি আর উৎসাহ বেড়ে গিয়েছিলো। তারপর একে একে সব ধরণের হোমমেইড ফুড অর্ডার পেতে শুরু করি। এখন মাসে ১০/১৫টার মতো অর্ডার পাই, আবার কোন কোন মাসে এর চেয়েও বেশি,” বলে জানান তিনি।
ইতি জানান, হোম মেইড আচার, পিঠা, ডেজার্ট, বিয়েবাড়ির শাহি খাবার, বেকিং আইটেম, ফ্রোজেন ফুড, চিকেন সেট মেনু, বিফ সেট মেনু, খুদের বৌয়া ভাত, বিভিন্ন রকম ভর্তা, শীতকালীন পিঠা আর হাঁস ভুনাসহ অনেক খাবারের অর্ডার পান।
উদ্যোগ শুরু করার আগে ডেলিভারিম্যান কোথায় পাবেন এ নিয়ে টেনশনে ছিলেন তিনি। তখন তার ছেলে হেল্প করেছে, বিভিন্ন গ্রুপ ঘুরে ডেলিভারিম্যানদের নাম্বার সংগ্রহ করে দিয়েছে।
‘‘আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে আমার হাজব্যান্ডেরও অনেক অবদান আছে। তিনি সাহস না দিলে আমি হয়তো সাহস পেতাম না। ঘর সংসারের কাজ সামাল দিয়ে খাবার অর্ডার নেওয়া কঠিন হয়ে যেতো। আমি পারিবারিকভাবে সবার সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি, যা হয়তো সবাই পান না।“
ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় তিনি উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান: আমার একটাই স্বপ্ন, দেশে কিংবা দেশের বাইরে আমার রেস্টুরেন্ট থাকবে। আচার থেকে শুরু করে সেখানে সব ধরণের খাবার থাকবে। থাকবে আমার নিজ হাতে বানানো কেক।
আফসানা অভি
উদ্যোক্তা বার্তা