ক্যাটারিং ব্যবসায় তিন স্টার্টআপ উদ্যোক্তা রিতা রহমান জুলি, সুমাইয়া রহমান জেমি ও নাবিলা রহমান। তারা তিন বোন, Curry Bakery’র স্বত্ত্বাধিকারী। বাবা ছিলেন ডাক্তার, মা গৃহিণী। গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর, কিন্তু বড় হয়েছেন ঢাকায়, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। রিতা রহমান পড়াশোনা করেছেন লালমাটিয়া মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সুমাইয়া রহমান জেমি সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছেন এবং নাবিলা রহমান বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস। রিতা রহমান একজন শিক্ষক, সুমাইয়া রহমান ব্যবসায়ী এবং নাবিলা করে ইস্পাহানী ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
কীভাবে একসাথে উদ্যোক্তা হওয়া জানতে চাইলে নাবিলা রহমান বলেন: উচ্চশিক্ষা শেষে যেহেতু তিন বোন ভিন্ন রকমের প্রফেশনে, তাই আলাদা জায়গায় ছিলাম। কোভিড শুরু হওয়ার পর আমরা একসাথে থাকা শুরু করি। বাবা বেঁচে নেই, বড় বোনের হাসব্যান্ড নেই, আমাদের মা-ও একা হয়ে গিয়েছিল। তাই সবাই মিলে মায়ের কাছে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাবার বাসায় ফিরে আসি। এসে তিন বোন চিন্তা ভাবনা করি নিজের ব্যক্তিগত প্রফেশন ছাড়া এমন আর কী করা যায় যা আমাদের তিন বোনকে এক রাখবে। যেহেতু আমরা তিন বোনই বিভিন্ন সময় বেশ কিছু কুকিং ক্লাস করেছি, শিখেছি ও রান্না করে প্রশংসিত হয়েছি; আর নিজেদেরও ছোট থেকে ইচ্ছা ছিল সবাই মিলে কিছু করব, আবার বর্তমানে বাইরের খাবারের কারণে অনেক মানুষ অসুস্থতায় ভুগছেন, তাই তিন জন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে হাইজিন খাবার নিয়ে কাজ শুরু করি। এভাবে তিন বোনের উদ্যোগ শুরু হয়। আমরা সব সময় আনন্দের সাথে কাজ করি।
রিতা রহমান জুলি উদ্যোক্তা বার্তাকে উদ্যোগের লক্ষ্য নিয়ে বলেন, ‘২০২০ সাল থেকে মূলত উদ্যোগটি শুরু করেছিলাম। যেহেতু আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হাইজিন নিয়ে ছিল, তাই পরিচিত ও আশেপাশে প্রথমে খাবার সরবরাহ করি। প্রশিক্ষণ নেওয়া ছিল বলে এমন কিছু আইটেম নিয়ে কাজ করি যা মানুষ শুরু থেকে খুব পছন্দ করলো। ভালো রিভিউ পেয়ে অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ আরো বেড়ে যায়। কাজ নিয়ে বড় পরিসরে এগোতে থাকি। সবাইকে জিজ্ঞেস করি আরো কীভাবে বেটার করলে আপনাদের ভালো লাগবে, সেই ভাবে এগিয়ে যাই। পরিচিতি বাড়তে থাকে। আর যেহেতু কোভিডের সময় কাজ শুরু করেছিলাম, তাই তেমন সহকর্মী রাখতে পারিনি। তিন বোন আর মা কে নিয়ে কাজ করছিলাম। নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগাভাগি করে নিয়ে চলতে চলতে এ পর্যন্ত আসা। আর ভাল লাগার ব্যাপার না বললে নয়, প্রায় ক্রেতারাই রিপিট।’
তিন বোন মিলে সিদ্ধান্ত নেন আর শুরু করেন ‘Curry Bakery’ অনলাইন পেজ। প্রথমে ১৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে বিশেষ তিন ধরনের আইটেম খাবার তৈরি করতন। মানে যার উপর তাদের দক্ষতা ভালো ছিল। স্ন্যাকস, সকালের নাস্তা আলু ভাজি রুটি, বাংলা খাবারের মধ্যে পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর ভুনা, টিকিয়া, জর্দা। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তৈরি করেন নাগেটস পিজ্জা, বার্গার। ডেজার্ট এর মধ্যে জন্মদিনের কেক, ব্রাউনি, ভ্যারাইটিজ কাপকেকস। এছাড়াও রয়েছে সাসলিক, পাস্তাসহ বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় সুস্বাদু খাবার আছে। আগে কোন কর্মী ছিল না। তিন বোন মিলে খাবার তৈরি করতেন। গত ৬ মাস ধরে একজন কর্মী যুক্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত শুধু ঢাকার মধ্যেই পণ্য সরবরাহ করছেন।
বিক্রি ও অন্যান্য বিষয়ে সুমাইয়া রহমান বলেন: একেক মাসে একক রকম এবং বিভিন্ন রকমের অর্ডার আসে। মাসিক আয় সম্পর্কে যেটা বলব, ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়। এভাবে সবকিছুই ভালোই যাচ্ছে। আর আমি আগের থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করি। তাই আমার বোনদের সাথে ব্যবসা করে আমি আনন্দ বোধ করি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিন বোন বলেন, তাদের একটি রেস্টুরেন্ট খোলার স্বপ্ন আছে। হোম মেইড খাবারের গুণগত মান ধরে রাখতে চান। স্বপ্ন তাদের হোম মেইড খাবারগুলো একটা বড় পর্যায়ে গিয়ে সাফল্য পাবে এবং অনলাইনে আরও প্রতিষ্ঠিত ও বিশ্বস্ত হবে।
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে রিটা রহমান জুলি পরামর্শ দেন, সবসময় গ্রাহকের প্রয়োজন অনুসারে বড় সমস্যা চিহ্নিত করার চেষ্টা করতে হবে। সমস্যার সমাধান গ্রাহকেরাই বলে দেবেন। বাজারে প্রয়োজন না থাকলে সে উদ্যোগ–পরিকল্পনা সফল না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এছাড়া পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে।
রিটা বলেন, ‘আমরা বাসসেবা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু সেটা সফল হচ্ছে না দেখে বসে থাকলে আজকের এ অবস্থানে আসতে পারতাম না।’
মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা