শিক্ষক হিসেবে ছাত্রকে বাসায় পড়াতে গেলেন, দাওয়াত খেতে কারো বাড়িতে গেলেন কিংবা কারো বাড়িতে দেখা সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে গেলেন কিন্তু অন্দরের দরজা পাবার আগে বিল্ডিংয়ের মূল ফটকেই দারোয়ান আপনাকে আটকে দিলেন। “বাড়িতে মানুষ নাই, পরে আইসেন, উনারে কল দিয়ে দেখেন” জাতীয় কথাবার্তায় আপনি খানিক বিব্রত হয়ে ফিরতি পথের যাত্রা শুরু করলেন।
বাড়িওয়ালা বা ফ্ল্যাটমালিকদের জন্য অতিথি অভ্যর্থনায় এই কমতি বেশ বড় ভোগান্তির কারন। বিল্ডিংয়ের ভিজিটর ম্যানেজমেন্ট, গার্ড মশাইয়ের ব্যবহারে চরম বিরক্তি নিয়ে মনে মনে বাড়ির মালিককে গালিগালাজ করে ফিরে আসা এমন দর্শনার্থীর সংখ্যা আজকাল গণনা করাই দায়। কেননা, ঢাকা শহরে অফিস-আদালত বা বাসাবাড়ি কেন্দ্রিক দালানের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় চার লক্ষেরও বেশি। এইসব বিল্ডিংয়ে ভিজিটর ম্যানেজমেন্টের কিছুটা নাজুক অবস্থার কারনে দৈনন্দিন জীবনে খানিক বিরক্তির সাথে আমরা প্রতিদিনই মুখোমুখি হচ্ছি।
তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নে ডিজিটাল বাংলাদেশে সমৃদ্ধির জোয়ারে নতুন কিছু যোগ করার প্রত্যয়ে তিন বন্ধু নিলেন ভিন্ন এক উদ্যোগ। দৈনন্দিন জীবনের গতিপথ সহজ ও সাবলীল করতে বিল্ডিং এর প্রবেশপথে যেন কোনো বিভ্রান্তির সম্মুখীন হতে না হয় এজন্যই কাজ করছে রক্ষী। কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়ুয়া তিন বন্ধু শান্ত, মেহেদী ও ফাহাদ নিজেদের জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর দেশের উন্নয়নে কাজ করার স্বার্থেই এই উদ্যোগটি বেছে নিয়েছিলেন। দেশ এগিয়ে যাবে অথচ পুরনো আমলের খাতাকলমে লিপিবদ্ধ সদর দরজায় মেহমানের হিসাবের দিন শেষে আসবে প্রযুক্তির ব্যবহার এই লক্ষ্য নিয়েই সেবা দেবে রক্ষী টিম। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেস্ট/ভিজিটর প্রাইভেসী লিকিং প্রব্লেম, চাইল্ড সিকিউরিটি, পার্সেল ম্যানেজমেন্ট, বিল ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল কমপ্লেইন বক্স, ভেইকল ম্যানেজমেন্ট এই বিষয়গুলোর আধুনিকায়ন ও সংযোজনের প্রয়োজনবোধ করেই তারা উদ্যোক্তা হবার দৃঢ় সংকল্প নিয়েছেন। এই উদ্যোগে একদিকে যেমন গ্রাহকের জীবনযাত্রার মান সহজ হবে ঠিক তেমনি গার্ড বা গৃহরক্ষীদের সামগ্রিক পুরনো ও জীর্ণ অবস্থার অবসান হবে বলে তাদের বিশ্বাস।
রাজধানী ঢাকাতে প্রাথমিক পরিসংখ্যান সংগ্রহের জন্য টিম রক্ষী সরজমিনে পরিদর্শন করেছে প্রায় কয়েকশ বিল্ডিং। সেখানে তারা শিক্ষিত জনতার সাথে একজন গার্ডের শিক্ষাগত ও সামাজিক কিছু বিভাজন আইডেন্টিফাই করেন। সেখানে গার্ডদের শিক্ষাগত দিক বিবেচনায় দেখা গেছে বর্তমানের প্রায় ৯০ শতাংশ গার্ড স্মার্টফোনের বিভিন্ন এপ্লিকেশন চালনায় যথেষ্ট দক্ষতা রাখেন। তাদের দক্ষতার বিবেচনায় তিন তরুণ তাদের এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট এর কাজ এগিয়ে নেয় সম্পূর্ন বাংলায়।
ফাহাদ এবং শান্ত পড়াশুনা করছেন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর মেহেদী আছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগে। একটা সময় মোহাম্মদপুর দুই রুমের একটা ছোট্ট অফিস ছিল টিম রক্ষীর। নিজেদের টিউশন খরচ থেকে বাসা ভাড়া দেওয়া, নতুন পদক্ষেপ চালিয়ে নেবার জন্য স্বপ্নের হাতছানি শতভাগ থাকলেও প্রস্তুতিতে ছিল অনেক আর্থিক সংকটসহ সুবিধার নানান সংকীর্ণতা। বুয়েটিয়ান বড় ভাই এগিয়ে এলো। নেটওয়ার্কিং, ম্যানেজমেন্ট, আর্থিক সহায়তা, অফিস স্পেসসহ নানান দিকে তাদের সহযোগিতায় আজ তারা এগিয়ে যাচ্ছেন তাদের লক্ষ্য পূরনে। দেশের হোমসার্ভিসে নতুন দিগন্তের সূচনায় শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করতে তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন বিভিন্ন ট্রেইনিং এর। এখন মোট ১৩জন তরুণের কর্মযজ্ঞে চলছে রক্ষীর পথচলা।
এছাড়াও বাসা পরিবর্তনের সময় নানান দিক খেয়াল রেখে বাসা খোঁজাখুজি, নতুন বাসায় কয়টা ঘর, কয়টা ওয়াশরুম, গুগল ম্যাপে বাসার অবস্থান, ভাড়া কেমন, বাড়িওয়ালার ব্যবহারে আগের ভাড়াটিয়ার রেটিং কত, গার্ড সিস্টেম কেমন ইত্যাদি নানান জিজ্ঞাসার সহজ উত্তরে টু-লেট প্লাটফর্ম নিয়েও আরেকটি ভিন্ন উদ্যোগ রক্ষীর ব্যানারে খুব শীঘ্রই আসছে বলে জানালেন উদ্যোক্তা আবরার মাসুম শান্ত।
সাদিয়া রশ্নি সূচনা