উদ্যোক্তা খন্দকার আহাদুজ্জুহা রুবেল

শুরুটা ২০০৩ সালে। কর্মসংস্থান খোলার তাগিদ থেকে সহপাঠীদের নিয়ে পুরানো বই-খাতা দিয়ে ঠোঙা তৈরী করে বিক্রি শুরু। তবে মনের মধ্যে লালিত ছিলো ভিন্ন স্বপ্ন। মা সিলাতেন নকশী কাঁথা। মায়ের নকশা ধরে রাখা এবং নকশা প্রতিনিয়ত দেশে যেন কমে না যায়, উদ্দেশ্য ছিলো সেটা।

ঠোঙা বিক্রি থেকে টাকা জমানোর পর শুরু করেন নকশী কাঁথার কাজ। পাশাপাশি পাঞ্জাবি এবং মেয়েদের কামিজের ওপরও কারুকাজ করেন। বরং নকশী কাঁথা ছাড়া বিভিন্ন পোশাকের উপর নকশা করে বানানো ভিন্ন ধরনের প্রদর্শন নিয়ে আসলেন। যেন মায়ের পরিশ্রমের নকশার কাঁথার উপরে শিল্পশাস্ত্র দিয়ে মাখা। এরপর ৫ জন কর্মী নিয়োগ করে নকশার প্রশিক্ষণ দেন। দিন যত যায় কাজের পরিসর বাড়তে থাকেন। এককলীন ‘দেশীদশ’র স্যাম্পল সাপ্লাই দিয়ে শুরু করেন নিজের প্রতিষ্ঠান।

বলছি যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানা নাইরা গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা খন্দকার আহাদুজ্জুহা রুবেলের জীবনগল্প। নতুনভাবে সাজিয়ে নতুন প্রজন্মের মাঝে নকশী কাজ যেন হারিয়ে না যায় সেই প্রচেষ্টা থেকে নকশীকাঁথা ব্যতিত পাঞ্জাবি, কামিজ, শাড়ি, শীতের চাদরের ওপর নকশা করে তার প্রতিষ্ঠান। যশোরের আরবপুর বিমানবন্দর রোড এস.পি বাংলোর বিপরীতে আরবপুরে অবস্থিত ‘প্রাপ্তি ফ্যাশন স্টোর’ নিয়ে গল্পটি উদ্যোক্তার।

উদ্যোক্তা খন্দকার আহাদুজ্জুহা রুবেল বলেন, ২০১৬ সালে একটি কারুশৈলী শিল্পকলা একাডেমীর মাধ্যমে মেলায় ডাক পান। যেখানে পণ্য বিক্রি করে আরো বড় প্রকল্প হাতে নেয়ার চিন্তা করেন। তার বেশ কিছু দিন পর বৈদেশিকভাবে রপ্তানি করার উদ্যোগ নেন এবং জাপান, ইন্ডিয়া, ইউরোপের বেশ কিছু দেশে কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো শুরু করেন। এছাড়াও বিভিন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠানও তার কাছ থেকে পণ্য নিয়ে থাকে।

রুবেল জানান, পরিবারের ৬ষ্ঠ সন্তান তিনি। এইচএসসি পরীক্ষার্থী সত্বেও পরিবারের হাল ধরতে হয় তাকে। গল্পের শুরুতে বলেন, একই গ্রামের দুরসম্পর্কের দুলাভাইয়ের মাধ্যমে কাজটি শুরু করেন। তিনি জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোক্তাদের নিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য ভলান্টিয়ারিংয়ের কাজ করতেন। এক সময় সেই দুলাভাই দেশে ফিরে তাকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি কি কর্মজীবী হবে নাকি ব্যবসায়ী? তিনি বলেন, নারীদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা তার। কারণ জানতে চাইলে রুবেল বলেন, গ্রামের বাড়ির আশপাশে যেসব নারীরা আছেন, তারা সংসারী হওয়ার পাশাপাশি কেন কর্মজীবী হতে পারবে না? সুযোগ থাকলে কেন বাংলাদেশের বাইরে গিয়ে চাকরি করবেন অথবা বাহিরের দেশের কর্মজীবী হবেন! গার্হস্থ্য জীবনের পাশাপাশি যেন কাজ করতে পারেন, সে জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে থেকে নারীদের জন্য কিছু করতে চান। এতে করে নারীরা আত্মবিশ্বাসী ও স্বাবলম্বী হবেন। কারণ বেশিরভাগ ব্যবসাই পুরুষ করে থাকেন। নারীদের তেমন সুযোগ নেই বললেই চলে। বিশেষ করে গ্রামের মেয়েদের কর্মসংস্থান এবং কর্মজীবী হওয়ার সুযোগ খুবই কম। এরপর দুলাভাইয়ের পরামর্শেই তার মায়ের নকশীকাঁথার কাজটি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে উদ্যোক্তা রুবেল বলেন, নকশীকাঁথার শিল্পী যেহেতু অনেকটা কমে যাচ্ছে। এ ধরনের শিল্পীদের কদর এখনো দেশের বাহিরে বাংলাদেশী মানুষের অন্তরে আছে। তাই আমি সামনে একটি নকশী কাথার মিউজিয়াম তৈরি করতে চাই যা দেশের শিল্পকে ধরে রাখবে।

উদ্যোক্তা তরুণ-তরুণীদের জন্য বলেন, হাতের কাছে এতো কিছু থাকতেও গ্রামের মানুষেরা যেন কখনোই বেকার জীবন না কাটায়। দেশি শিল্পায়ন ধরে ব্যবসা এগিয়ে যেতে হবে। ব্যবসা করতে যতই জটিলতা আসুক, ধৈর্য ধরলে কঠিন পরিস্থিতি পার হয়ে সফলতা আসবেই।

মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here