১৯৮৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার পূর্বেই মোঃ রেজাউল করিমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মিসেস রোজিয়া করিম। ছোটবেলায় দাদী ও মায়ের হাত ধরে সেলাইয়ের কাজের হাতেখড়ি।
দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জননী রোজিয়া করিম বাসায় বসে ছেলে-মেয়ের পোশাকের টুকটাক কাজ করতেন। ১৯৯৬-৯৭ সালে স্বামীর পরিচিত এক ভদ্রলোক নাদিম সাহেবের মারফতে সিল্ক ইন্ডাস্ট্রি থেকে শাড়ীতে কিছু ময়ূর নকশার কাজের অর্ডার পেলেন। কাজ করে জমা দিলে তাঁর কাজের সৌন্দর্য ও গুণগত মান দেখে বেশ প্রশংসা পেলেন।
পরবর্তীতে প্রত্যয় গার্মেন্টস’র পাঞ্জাবির উপর হাতের কাজের নকশার কাজ পেলেন। এভাবে টুকটাক কাজ চলতে থাকল। সংসারে কাজের ব্যস্ততার মাঝে সেজ ও ছোট মেয়েকে নিয়ে তাদের কোচিং ক্লাশে যেতেন। ২০০১ সালে একদিন সেজ মেয়ের তৈরি পোশাক দেখে কোচিং সেন্টারে আগত অন্যসব অভিভাবকের মাঝে বেশ সাড়া মিলে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ডার পেতে থাকেন; সেই থেকেই বুটিকের কাজের প্রতি আগ্রহ তৈরী হয় রোজিয়া করিমের।
২০০২ সালে নিজের ও স্বামীর অনুপ্রেরণায় পঞ্চাশ জন কর্মী ও পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। ২০০৪ সালে সেতু বুটিক ফ্যাশন এর প্রতিষ্ঠাতা মিসেস রোজিয়া করিম স্বামীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠান এর নামে ট্রেডলাইসেন্স করলেন। কাঁটাখালি, হাজরাপুকুর, বুধপারা, রামচন্দ্রপুর, কাসিয়াডাঙ্গা, সৈয়দপুর অঞ্চলের হাতিখানা, বাঁশবাড়ি, মিস্ত্রীপাড়াসহ পাবনা, শাহাজাদপুর, উল্লাপাড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ২৭০০ থেকে ৩০০০ কর্মী নিয়ে কাজ করে চলেছেন। রাজশাহী অঞ্চলের কাজের মান ও সেলাই ভাল হওয়ায় তিনি এ অঞ্চল থেকে বেশিরভাগ কাজ করিয়ে থাকেন। মেয়েদের ওয়ান-পিস, টু-পিস, থ্রী-পিস, গায়ের চাদর, শাড়ী, বাচ্চাদের থ্রী-পিস, বেডসীট, কুশন কভার, শো-পিচ ও ছেলেদের পাঞ্জাবী, কোটি ইত্যাদি তৈরি করেন। তন্মধ্যে ওয়ান-পিস, টু-পিস, শাড়ী ও কুশন কাভার উল্লেখযোগ্য।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খুচরা ও পাইকারী মূল্যে পণ্য সরবরাহ করেন। বর্তমানে প্রায় পঁচিশ থেকে ত্রিশ লক্ষ টাকার ব্যবসার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন কোন প্রকার ঋণ ছাড়াই। নিজ বাসায় তিনি তাঁর উদ্যোগের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কোন ট্রেনিং ছাড়াই নিজ প্রচেষ্টা ও মেধায় তিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন এক ভিন্ন মাত্রায়। গড়ে তুলেছেন নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। তাঁর এই কর্মযজ্ঞে তাঁকে সার্বিক সহযোগিতা করছে তাঁর সেজ মেয়ে রুখসানা পারভীন রাখী।
ভবিষ্যতে নিজের বাসাতেই বড় পরিসরে শো-রুম দিতে চান এই সফল উদ্যোক্তা। একই সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণে অবদান রাখতে চান তিনি।
রাজশাহী থেকে
মোঃ মোজাফফর হোসেন মাসুম