ছোটবেলায় স্কুলে পাট সম্পর্কে রচনা লিখেননি এমন মানুষ বঙ্গদেশে পাওয়া মুশকিল। পাট কেবল আমাদের সোনালী আঁশ নয়, আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের এক সোনালী অধ্যায়। পাট বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। রপ্তানি শিল্পে বাংলাদেশে উৎপাদিত বিশ্বমানের বহুমুখী পাটপণ্যের চাহিদা ইউরোপিয়ান দেশগুলোসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিশেষ করে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, কোরিয়ায় নান্দনিক ও পরিবেশ অনুকূল পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেও অর্জন করেছে প্রশংসা।
সম্প্রতি ২০১৮ সালের জুলাই মাসের একটি পরিসংখ্যান মতে বিশ্বের অনেকগুলো দেশ একযোগে পলিথিন পণ্য বর্জন করেছে। তাদের এই পরিবেশ উপযোগী সিদ্ধান্ত আমাদের দেশের পাট শিল্প ও পাটপণ্য উৎপাদনকারী উদ্যোক্তাদের জন্য এক সম্ভাবনার আলো হয়ে আসবে। কেননা বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি ও মাটি পাট উৎপাদনের জন্য বিশেষ উপযোগী। এছাড়াও “পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক আইন ২০১০” গৃহীত হবার পর থেকে দেশেও বেড়েছে পাটের ব্যবহার। দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার আমার আমাদের সকলেরই দায়িত্ব নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে পাটপণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করা। ক্রেতা হিসেবে আপনি যখন নান্দনিক পাটপণ্য খুঁজছেন তখন আপনার সমাধান হতে পারে জেডিপিসি অর্থাৎ জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার। ঢাকার বুকে তেজগাঁওস্থ এই পাটশিল্প উদ্যোক্তা সেবাকেন্দ্র একই ছাদের নিচে একসাথে এনেছেন ৬৩৬ জন উদ্যোক্তার পণ্য।
“দেশীয় পাটপণ্য, কিনে হও ধন্য”, “পাটের ব্যবহার বাড়বে যত, বাংলাদেশ হবে উজ্জ্বল তত” এমন সব মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে প্রায় ২৫০টি ক্যাটাগরির হাজারো পণ্য নিয়ে সাজানো জেডিপিসি আপনাকে পাটপন্যের নান্দনিকতায় মুগ্ধ করতে বাধ্য করবে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউরোপিয়ান কমিশনের অর্থায়নে প্রচলিত পাটপণ্যের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উন্নত বহুমুখী পাট পণ্যকে পরিচিত করতে ২০০২ সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশ জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার। এলবাম, এপ্রোন, হ্যান্ড ব্যাগ, পার্স, ওয়ালেট, জুতো, কোট, স্টাইলিশ কটি, বেল্ট, লেইস, ক্যাপ, কার্ড হোল্ডার, কার্পেট, ক্রিসমাস ডেকোরেটর এক্সেসরিজ, সিলিন্ডার বাস্কেট, ডেকোরেটেড ফেব্রিক অন লিভিং, ডেকোরেটেড ফ্রুটস, জুট ফ্লাওয়ার স্টিক, ফ্লাওয়ার ভ্যাজ, ওয়াল ম্যাট, টয় এনিম্যাল, ডায়েরী কভার, কুশন কভার, ডোর হ্যাঙিং, ডোর ম্যাট, ড্রেস, জুয়েলারি, ইনভাইটেশন কার্ড, উইশিং কার্ড, চেজ বোর্ড, ফাইল কভার, ফাইল ফোল্ডার কি নেই এখানে! পরিচ্ছন্ন রূচির যেকোনো ব্যক্তিই এধরনের পণ্যসামগ্রীতে তার ঘরবাড়ি কিংবা কর্পোরেট অফিস সাজাতে প্রথম দর্শনেই লুফে নেবেন এসব পাটপণ্য। ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে জেডিপিসি উদ্যোক্তার পণ্য প্রসারে বিশ্বমানের পণ্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি ক্রেতাদের জন্যও নিশ্চিত করছে পণ্যের সুলভ মূল্য।
জেডিপিসির নির্বাহী পরিচালক এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব, জনাব রীনা পারভীন বলেন, “বাংলাদেশের উদীয়মান তরুণ সমাজ এবং সেইসাথে বহু আগে থেকেই যারা পাটজাত পণ্যের সাথে সম্পৃক্তত ও অভিজ্ঞ এই দুইয়ে মিলে আমরা এখন পাটকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে প্রস্তুত।”
দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে কেবল পাটজাত ব্যাগের চাহিদা ১০ কোটি থেকে ৭০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। দেশে অন্যান্য পাটপণ্যের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭১৬.৫২ কোটি টাকার। সিনথেটিকের পরিবর্তে আমাদের পরিবেশবান্ধব জুট জিও টেক্সটাইল বাড়াতে প্রতিনিয়ত কাজ করছে আমাদের উদ্যোক্তা ও তাদের কর্মীরা। আসুন আমরা যে যার অবস্থান থেকে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি করি, অংশ নেই দেশীয় শিল্প রক্ষায়।
সাদিয়া সূচনা
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা