অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগের নাম ‘Fashionmanic’। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রাণশক্তি বলতে যা বোঝায় তার সবটুকুই যেন বিদ্যমান সুমাইয়া রহমানের। ১৩ বছরে ধীরে ধীরে পেয়েছেন সাফল্য।
তাই নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০০৭ সালে একজন উদ্যোক্তা হওয়ার ভীত তৈরি করেছিলেন। দেশীয় কাপড় আর স্বতন্ত্র ডিজাইন ও কারুকাজের জন্য জনপ্রিয় করে তুলছেন নিজের অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান।
ছোটবেলা থেকেই অনেক বেশি ফ্যাশন সচেতন ছিলেন সুমাইয়া। তাঁর মা ছিলেন অত্যন্ত আধুনিক মন মানসিকতার মানুষ, তিনি সবসময় বিভিন্ন আধুনিক ডিজাইনের ড্রেস কিনে দিতেন। তাই পোশাক ডিজাইনের আধুনিক শৈল্পিকতার বিষয়টি কৈশোর বয়সেই মাথায় পোকার মতো ঢুকে পড়েছিল সুমাইয়ার। বলা যায় মায়ের নীরব অনুপ্রেরণা এবং নিজের একটি আত্মপরিচয় তৈরি করার সুপ্ত ইচ্ছা থেকেই ফ্যাশন ডিজাইনে চলে আসা।
সুমাইয়া রহমান উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, শুরুর গল্পটা যদি বলি মোটামুটি হুট করেই একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন সেই কলেজ পড়ার সময় থেকেই। কমার্সের স্টুডেন্ট হিসাবে সবসময়ই ইচ্ছা ছিলো চাকরির বাইরে নিজ উদ্যোগে কিছু করার। দেশীয় কাপড় নিয়ে কাজ করার টান থেকেই একই চেতনার ৬ জন বন্ধু মিলে ব্যবসা শুরু করলাম।
দেশের আনাচে- কানাচে ছড়িয়ে থাকা মানসম্পন্ন কাপড় এনে। নিজেদের করা ডিজাইনে কামিজ, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শাড়ি বানিয়ে বিক্রি শুরু করলাম। প্রচার- প্রসারের জন্য কিছু প্রদর্শনীর আয়োজন করলাম। এক সময় অন্যদিন, সাপ্তাহিক -২০০০ এর মতো নাম করা পাক্ষিক পত্রিকাগুলোয় প্রতিযোগিতা অংশগ্রহন করে, কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরষ্কারো জিতেছিলাম। আমাদের ডিজাইন করা পাঞ্জাবি, ফতুয়া, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে স্বীকৃতি ও সুনাম কুড়িয়েছিল।’
সুরাইয়া ব্যবসার শুরুর সময় মিরপুর, নিউমার্কেট, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজ পেতেন। এছাড়াও জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লাতে অন্যান্য কারিগরদের দিয়ে হাতের কাজের এমব্রয়ডারি, ব্লকবাটিক, কারচুপি, স্ক্রিনপ্রিন্ট এসব নিজে যেয়ে করিয়ে নিয়ে ফিরতেন ঢাকায়। বন্ধুদের সাথে মিলে ১৫ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করেন। প্রথম পণ্য হিসেবে অর্ডার পেয়ে নিজেদের করা ডিজাইনের কামিজ, ফতুয়া,পাঞ্জাবি, শাড়ি বিক্রি করে সেই লাভ দিয়ে উদ্যোক্তা হন। ছয় জন কর্মী রয়েছে।
কারখানা নেই তবে অন্যান্য কারখানা অথবা কারিগরের সহযোগিতা নিয়ে অর্ডার সম্পূর্ণ করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। বিদেশে এখনো রপ্তানির সুযোগ না হয়ে উঠলেও দেশের ভেতর সব বিভাগে তার পণ্য সরবরাহ হয়। বর্তমানে মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করেন ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী।
একজন নারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কেমন বাধার সম্মুখিন হয়েছেন জানতে চাওয়া হলে সুমাইয়া রহমান জানান, অসংখ্যবার বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি। কেননা আমাদের সমাজের সবকিছুতে এবং সবচেয়ে বড় বাধাই হলো সামাজিক এবং পারিবারিক বাধা। আমি পরিবার থেকে খুবই ভালো সাপোর্ট পেয়েছি। কিন্তু সমাজে পেয়েছি অনেক ধরনের বাধা। কিন্তু সব কিছু পেরিয়ে আজ আমি আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছি। নিজেকে স্বাবলম্বী করতে সক্ষম।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার Fashionmanic একটা জায়গা দিতে চাই। যেখানে সারাদেশ ও দেশের বাইরে এক নামে চিনবে। সবসময় পণ্যের মান ভালোটা দিয়ে আমি ক্রেতাদের সেবা করে যেতে চাই জানান সুমাইয়া রহমান।’
ব্যক্তিগত জীবনে সুমাইয়া রহমান তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বাবা একজন ডাক্তার মা হলেন গৃহিনী। বাবা যেহেতু ডাক্তার ছিলেন তাই পরিবার সহ লিবিয়ায় ছিলেন। এরপর স্কুল ও কলেজ জীবন শেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন এবং সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেন। পড়াশোনা শেষে চাকরি করেন একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে এবং পরে একটি বায়িং হাউজে চাকরি করেন।
মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা