লেই জুন

বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম স্বপ্ন খুঁজে পায় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু সেই স্বপ্ন দেখার শুরু যদি হয় বই থেকে কেমন শোনাবে! অনেকেই হয়তো বলবেন মোবাইলেই স্বপ্ন খুঁজে পাই না আর বইয়ের গল্প পড়ে আর কি করব। তবে বইয়ের গল্প পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশাল এক স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানির মালিক ‍লেই জুন। আসুন জেনে নেই তাঁর সেই গল্পটিঃ

লেই জুন ১৯৬৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর চীনের হুবাই জিয়ানতাওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালে উহান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বইয়ের মধ্যে মি. স্টিভ জবসের জীবনী পড়ে এতটাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যে, জবস’র মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।

১৯৯২ সালে পড়াশোনা শেষ করার পরে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে একটি চীনা সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে ( কিংস্টফট) কাজ শুরু করেন। মাইক্রোসফ্টের কথা যারা জানে না তাদের সকলের জন্য কিংসফট এমন একটি সংস্থা যারা ওয়ার্ড প্রসেসিং (এমএস ওয়ার্ডের মতো), অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার, গেমিং এবং ই- কমার্সের কাজগুলো করে। নিজের প্রতিভা এবং দক্ষতা দিয়ে ১৯৯৯ সালের মধ্যেই কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন।

২০১০ সালের দিকে লেই জুন ব্যবসা করার ইচ্ছা পোষণ করেন ফলে মোবাইল ফোনের জগতে প্রবেশ ঘটে তাঁর। ব্যবসা চলাকালীন সময় তিনি আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন। তবে হংকংয়ের বিলিয়নিয়ার চ্যান যা মর্নিং এর সহায়তায় তিনি মূলধনের ঘাটতি মেটাতে সক্ষম হন এবং ২০১০ সালের এপ্রিলে শাওমি প্রতিষ্ঠা করেন।

পরবর্তী তিন মাসের কঠোর পরিশ্রমের পরে শাওমি তাদের প্রথম অ্যান্ড্রয়েড ভিত্তিক ফার্মওয়্যার চালু করে যার নাম দেয়া হয় ‘এমআইএমউ’। এটির স্যামসং ফোনের ‘টাচউইজ’ এর মত ছিল।

প্রথম সংস্করণের অসাধারণ সাফল্যের পর এমআই-২ বাজারে নিয়ে আসা হয় । সেটিও বিস্তর পরিসরে বিক্রি হয়েছিল এবং ওয়্যারলেস ফোন বিক্রেতা মুবিসিটির সহায়তায় শাওমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডসহ পশ্চিমা দেশের বাজার দখল করতে সফল হয়েছিল। এ রকম উন্নয়নের কারণে বছরের শেষের দিকে শাওমি চীনের পঞ্চম সর্বাধিক ব্যবহৃত স্মার্টফোন ব্র্যান্ডে পরিণত হয়।

২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে বিক্রির প্রথম ২৪ সেকেন্ডে তারা মোট ৪০,০০০ স্মার্টফোন বিক্রি করেছিলো এবং শেষ পর্যন্ত ই-কমার্স কোম্পানী অ্যামাজন এবং স্ন্যাপডিলের সাথেও অংশীদারিত্বে যেতে হয়েছিল।

বর্তমানে এই সংস্থাটি এমন এক যায়গায় গিয়েছে যেখানে তাদের বিশ্বব্যাপী ৪০ মিলিয়নেরও বেশী ব্যবহারকারী রয়েছে।

স্মার্টফোন বিক্রির ক্ষেত্রে শাওমি একটি অন্য কৌশল ব্যবহার করে যা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান করে না। তাদের ফোনের উৎপাদন মূল্যের সাথে সম্পৃক্ততা রেখে দামগুলো নির্ধারণ করা হয়। পণ্যের গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রাখা এবং ভাল পারফরম্যান্স দিতে কখনও আপস করা হয় না। তাই দামে কম আর ভাল পারফরম্যান্স এর জন্য ফোনটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই শাওমি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পৃথিবীর স্মার্টফোন বাজারে স্থান করে নিয়েছে।

বর্তমানে লেই জুন ৬০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে নিযুক্ত আছেন এবং তিনি  চীনের ‘স্টিভ জবস‘ নামে খ্যাত।

মো.হৃদয় সম্রাট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here