চার দশকে বিশ্বমানের ৪৫টি কৃষিযন্ত্র আবিষ্কার করেছেন বগুড়ার আমির হোসেন

0
উদ্যোক্তা আমির হোসেন

চার দশকে ৪৫টি কৃষিযন্ত্র আবিষ্কার করেছেন বগুড়ার যন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেন। স্বল্প খরচে কৃষকদের হাতে কৃষিযন্ত্র তুলে দেওয়াই তার লক্ষ্য। এসব যন্ত্র আবিষ্কারের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ২০০৪ সালে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি দিয়েছে বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়)। এছাড়া ২০০৮ এবং ২০১১ সালে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক লাভ করেছেন আমির হোসেন।

পারিবারিক সূত্রেই এ পেশায় এসেছেন তিনি। বাবা আব্দুল জব্বার পরিচিত ছিলেন ‘ধলু মেকার’ নামে। তিনি এ পেশায় এসেছিলেন তার বাবার অনুপ্রেরণায়। ১৮৮০ সালে সর্বপ্রথম বগুড়ায় অত্যাধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন ধলু মেকারের বাবা। এরপর ১৯৪০ সালে ধলু মেকার পুরোদমে কাজ শুরু করেন। ধলু মেকারের বাবার বড় সন্তান রহিমের নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ হয়েছিল ‘মেসার্স রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’।

বাবাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন ধলু মেকার। নিজ সন্তানদের দেশের জন্য কিছু করতেই হবে এমন ভাবনা থেকে মাত্র সাত বছর বয়স থেকে আমির হোসেনসহ ধলু মেকার তার সব ছেলেমেয়েকে দুই ঘণ্টা কাজ শেখা বাধ্যতামূলক করেছিলেন। অনুপস্থিত থাকলেই বরাদ্দ ছিল পাঁচটি বেত্রাঘাত। এভাবেই বাবার কাছে হাতেখড়ি। এখন  রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিপ্রাপ্ত আমির হোসেনের মেয়ে তাহিয়াও বাবার পেশায় এসেছেন। একসেপশনাল অক্সিজেন ফ্লো ইনভেনশনসহ কয়েকটি যন্ত্র আবিষ্কার করে তিনিও রীতিমতো সাড়া ফেলেছেন। বাবা মেয়ে দু’জনেই মেসার্স রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি করছেন।

আমির হোসেনের শুরু হয়েছিলো দেশে সর্বপ্রথম চিকন সেমাই তৈরির যন্ত্র আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। এরপর জমি নিড়ানি যন্ত্র, ধান-ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল মাড়াই যন্ত্র, দেশের হারিয়ে যাওয়া তেঁতুল কাঠের সরিষা তেলের ঘানি মেশিন, বিভিন্ন গাছ গাছড়া থেকে জৈব সার তৈরির মেশিন, মোটরচালিত ঢেঁকি, গো-খাদ্য তৈরির মেশিনসহ অসংখ্য যন্ত্র তৈরি করছেন আমির হোসেন। এছাড়াও কৃত্রিম হাত-পা তৈরি করছেন তিনি, যদিও এগুলোর পরীক্ষামূলক কাজ অব্যাহত আছে।

যন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “আমাদের দেশে বাইরের যে কৃত্রিম হাত-পাগুলো চিকিৎসা কাজে ব্যবহার হয়, তা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। দেশের মানুষের জন্য খরচ মেটানো খুব কষ্টসাধ্য। তাদের কথা চিন্তা করেই কৃত্রিম হাত-পা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলাম। বানাতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম এগুলো বাইরে থেকে যতো দাম দিয়ে আনা হয়, দেশে তার চেয়ে অনেক কম খরচে তৈরি সম্ভব। আমি এখনও অনুমোদন পাইনি। অনুমোদন পেলে বগুড়াতে একটা হাসপাতাল করে সেখানে বিনামূল্যে রোগিদের কৃত্রিম হাত-পা সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে।”

কৃষিযন্ত্রপাতির পাশাপাশি অন্যদিকেও নজর ছিল তার। কাজ করতে করতে একদিন চোখ যায় সামনে ঝুলে থাকা একটি ক্যালেন্ডারের দিকে। সেখানে ছিল রানী ভিক্টোরিয়ার পছন্দের একটি গাড়ির ছবি। সেটি দেখে ২০০৬ সালে দেশীয় যন্ত্রাংশ দিয়ে একটা গাড়িও বানিয়ে ফেলেন তিনি। সে ধারাবাহিকতায় তিনি এমন একটি গাড়ি তৈরির কথা জানিয়েছেন যেটা রাস্তার পাশাপাশি আকাশপথেও চলবে। ঈদুল আযহার পরপরই এই গাড়ি তিনি সকলের সামনে আনবেন বলে জানিয়েছেন।

এছাড়াও খুব শিগগিরই তার তৈরি প্রতিটি পণ্য সকলের দেখার সুযোগ করে দিতে একটি ডিসপ্লে সেন্টার চালু করার কথা জানিয়েছেন আমির হোসেন।

তার যন্ত্র তৈরির কারখানায় দুই শিফটে ৪০ থেকে ৫০ জন কাজ করছেন। যন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেনের যন্ত্রে যেমন বাংলাদেশের কৃষি উদ্যোক্তাদের বহু সমস্যা লাঘব হচ্ছে, ঠিক তেমনি তার কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে বিক্রির মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হচ্ছেন অনেক।

সারাদেশে তার তৈরি বিভিন্ন যন্ত্র যাচ্ছে। নেপাল এবং ভুটানেও যাচ্ছে তার তেঁতুল কাঠের সরিষার তেলের ঘানি মেশিন। তাতে লেখা থাকে মেড ইন বাংলাদেশ।

তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here