চাকরির বাজারের বর্তমান যে অবস্থা ছোটখাটো একটি চাকরি পাওয়াও এখন সোনার হরিণের মতো, আর অন্যের অধীনে চাকরিতে নিজের মনের চিন্তাধারা পুরোপুরিভাবে প্রকাশও করা যায় না; যার কারণে ব্যবসা করতে আগ্রহী হয়েছেন সাবা ও কিরন।
শুরুটা খুব একটা ভালো ছিল না। এইচএসসি পাস করার পর বাসা থেকে হাত খরচের টাকা চাইতেও লজ্জা লাগতো কিরনের। সব সময় চাইতেন কিছু করে বাবা-মা কে সাহায্য করতে। মূলত এই চিন্তাধারা থেকেই ব্যবসার উদ্যোগ নেওয়া কিরনের।
কিরন রাজধানীর একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইন্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। ব্যবসা করার জন্য যখন উদ্যোগ নেন তখন পার্টনার হিসেবে পাশে পেয়েছেন সাবরিনা সাবাকে। দু’জন মিলেই ব্যবসাটি শুরু করেন। নাম দেন ‘স্টাইল ডিলাইট’ বাই কিরন।
পুঁজি বলতে বাংলালিংক সিমের ৩০ টাকায় ১৫০ এমবির দুইটি কার্ড ছাড়া কিছুই ছিল না। প্রথম দিকে অনেক গ্রুপে রিসেলার হিসেবে কাজ করেছেন কিরন। কিছুদিন কাজ করার পর ১০ হাজার টাকার মত জমিয়ে নিজেই কিছু টাকা দিয়ে ২২ টি থ্রি-পিস কিনেন এবং তা বিক্রয় করে ভালো মুনাফা পান; এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বলে জানান কিরন।
স্টাইল ডিলাইটে বর্তমানে প্রধানত টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, নরসিংদীর শাড়ি, ঐতিহ্যবাহী মনিপুরী শাড়ি, জামদানি শাড়ি, থ্রি-পিস পাওয়া যায়। যার সর্বনিম্ন মূল্য ৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মূল্য ৫ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
কিরন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, যেহেতু আমি খালি হাতে ব্যবসায় এসেছিলাম তাই মূলধন বলতে তেমন কিছু ছিল না। ফলে চাইলেও অনেক কিছু করতে পারতাম না। এছাড়া মাত্র দু’জন মানুষ মিলে একটি ব্যবসা দাঁড় করানো অনেক কঠিন বিষয়; কারণ আমাদের অভিজ্ঞতা ছিল না। পড়াশোনার চাপের জন্য ব্যবসায় সময় দেওয়াটি কঠিন হয়ে যেত এবং এখন কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ে অনলাইন ব্যবসা করছি দেখে অনেকে হাসাহাসি করতো।
পরিবার থেকে ফুল সাপোর্ট পেয়েছেন দুজনেই। যখন যেমন সাহায্য প্রয়োজন ছিল দুজনের পরিবারই সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছেন। ভবিষ্যতে ব্যবসাটাকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে সারাদেশে পরিচিত করাতে চান এবং প্রতিটি জেলায় একটি করে শো-রুম দিতে চান কিরন।
সাবা বলেন, বর্তমানে অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি। সরাসরি তাঁতিদের থেকে শাড়ি তৈরি করার কারণে দাম ও গুণগত মান ঠিক করাটা তুলনামূলক সহজ। যার ফলে ক্রেতাদের সাড়া ভালো পাচ্ছি ।
সাবা আরো বলেন, সব সময় চাইতাম মানুষের উপকার হয় এমন কিছু করতে। তাই রিসেলার গ্রুপ চালু করি। আমাদের বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ নারী রিসেলার আছে, যারা ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে আয় করতে পারছেন।
দুই উদ্যোক্তার কাছেই উদ্যোক্তা বার্তার প্রশ্ন ছিল, কেন চাকরি না করে ব্যবসায় এলেন? জবাবে দুজনেরই হাস্যোজ্জ্বল উত্তর চাকরির জন্য অনেক লেগে থাকতে হয়, ভালো চাকরি পাওয়া শুধু কঠিনই নয় দুরূহ বটে। তাই আমরা সময় নষ্ট করি নাই, লেখাপড়া শেষ করে সরাসরি ব্যবসায় নেমে পড়েছি। তাছাড়া অন্যের অধীনে চাকরিতে নিজের মনের চিন্তাধারা পুরোপুরিভাবে প্রকাশ ও করা যায় না যার কারণে ব্যবসা করতে আরো বেশি আগ্রহী হয়েছি।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য একটাই পরামর্শ দিয়েছেন কিরন ও সাবা। তা হলো, একটি কাজে লেগে থাকলে একদিন না একদিন সফলতা আসবেই। প্রথম দিকে লাভ যেমনই হোক, লেগে থাকতে হবে। চেষ্টা আর সদিচ্ছা থাকলে অনেক কিছুই করা যায়। মূলধনের চেয়ে বেশি প্রয়োজন ইচ্ছা। ইচ্ছা থাকলে অনেক কিছুই করা যায়।
খাদিজা ইসলাম স্বপ্না