চাকরির জন্য না ছুটে কিভাবে স্বাবলম্বী হয়ে অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায় সেই চিন্তা-চেতনা নিয়ে যুবকদের গড়ে ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাতীয় যুব পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “অন্যের পেছনে না ছুটে কিভাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যাবে, অন্যের দুয়ারে চাকরি ভিক্ষা না করে নিজে কিভাবে চাকরি দিতে পারি- সেই ভাবনা, চিন্তা-চেতনা নিয়ে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে।
“আমরা যে বহুমুখী সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।”
যুবকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সব সময় এটা চিন্তা করতে হবে, আগে দেখতে হবে যে আমি নিজে কি করতে পারি। নিজে কতটুকু কাজ করতে পারি। মানুষকে কিছু দিতে পারি কিনা সেটাই বড় কথা… আমি চাকরি করব কেন, আমি আরো দশটা চাকরি দেব।”
বাংলাদেশের যুবকদের মেধার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী। পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েরা মেধাবী। একটু পদক্ষেপ নিলেই অনেক বড় বড় কাজ তারা করতে পারে এই বিশ্বাস আমার আছে।
“চাকরি না করে চাকরি দেব, চাকরি দেবার সক্ষমতা অর্জন করব বা চাকরি দিতে পারব এই চিন্তাটা মাথায় থাকতে হবে এবং আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আত্মমর্যাদাবোধ থাকতে হবে। সেটা থাকলে আমার তো মনে হয় বাংলাদেশে কেউ আর বেকার থাকবে না।”
মুজিববর্ষকে ঘিরে কেউ যেন বেকার না থাকে সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
কিছু মানুষের চাকরি নিয়ে চিরায়ত ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের মানুষের আবার একটা চিন্তা আছে। সেটা হল চাকরি না করলেই বেকার। ঘটনা কিন্তু তা না।”
ডিজিটাল বাংলাদেশে সারাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছে জানিয়ে তাদের কাজ নিয়ে ‘কিছু মানুষের’ মানসিকতা বদলাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“এখানে একটা মজার ঘটনা বলি। এক জনের বিয়ের একটা কথা হচ্ছে। মেয়েপক্ষ জিজ্ঞেস করছে ছেলে কি করে। বলে ফ্রিল্যান্সার। বলে.. এটা তো আর চাকরি হল না। বলে আমিতো মাসে ২/৩ লাখ টাকা কামাই করি। বলে.. তাতে কি হবে চাকরি তো হল না। এই মানসিকতাটা বদলাতে হবে।”
এক ফ্রিল্যান্সার বাবার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “স্কুলে জিজ্ঞাসা করছে আপনার মেয়েকে যে স্কুলে ভর্তি করবেন আপনার ইনকামটা কি? বলে আমি ফ্রিল্যান্সার। বলে সেটা আবার কি জিনিস। আমিতো ৩/৪ লাখ টাকা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছি। আমার মেয়ের বেতন দিতে পারব আপনি ভর্তি করবেন না কেন। স্কুল থেকে বলে- না এটা তো চাকরি হল না। আমাদের দেশের মানুষের মাথার মধ্যে ঢুকে আছে চাকরি ছাড়া যেন আর কিছুই করা যায় না।”
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি প্রতিহত করতে যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “একটা সমাজের শান্তি এবং একটা নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে এবং দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।”
যুবকদের উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজকে যদি তিনি বেঁচে থাকতেন আর যদি তিনি পাঁচটা বছর হাতে সময় পেতেন বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারত।
“তিনি আমাদের মাঝে নেই। তার আদর্শ আছে। কাজেই তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা এটাই আমাদের লক্ষ্য।”
তরুণ সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞা নিতে হবে যে এই বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করব।”
অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, যুব মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.আখতার হোসেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ জামান খান কবিরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা