বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন থেকে ‘বেকারি অ্যান্ড পেস্ট্রি’ প্রোডাকশনের উপর সাড়ে চার মাসের একটি কোর্স করেন খুশবু জাহান টিনা। অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ৪ বছর একটি বেকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি৷ এরপর আর চাকরি নয়, সিদ্ধান্ত নিলেন এবার নিজেই উদ্যোক্তা হবেন, কাজ করবেন নিজের প্রতিষ্ঠানে।
টিনার জন্ম এবং বেড়ে উঠা ঢাকায়। ব্যবসায়ী বাবার বড় মেয়ে তিনি। ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেন। ছাত্রাবস্থায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজে কিছু একটা করবেন।
সেই ভাবনা থেকে ২০০৯ সালে ঘরোয়া ভাবে ব্লক-বাটিক নিয়ে কাজ করেন। একমাত্র সহযোগী হিসেবে পাশে ছিলেন তার মা। প্রায় ৩ বছর তিনি ব্লক বাটিক নিয়ে কাজ করেছেন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় এই কাজটি আর নিয়মিত করা সম্ভব হয়নি তার।
তারপর সিদ্বান্ত নিলেন ভিন্ন কিছু করবেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন থেকে বেকারি অ্যান্ড পেস্ট্রি প্রোডাকশনের উপর সাড়ে চার মাসের একটি কোর্স করেন এবং ইন্টার্নশিপ করেন পর্যটনের হোটেল অবকাশ থেকে।
কোর্স শেষ করার পর অনলাইন ও অফলাইনে বিভিন্ন খাবারের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং সম্মাননা অর্জন করেন৷
২০১৩ সালে পর্যটনের একটি খাবারের মেলায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও জয়িতা, প্রিন্স বাজার থেকেও পিঠা মেলায় অংশ নিয়েছেন৷
২০১৬ সালে চ্যানেল আইতে “বাংলাদেশ কুকিং এসোসিয়েশন” থেকে আয়োজন করা হয় ঐতিহ্যবাহী পিঠা প্রতিযোগিতার। বাংলাদেশের সব জেলা থেকে ৫৫ জনকে টপকে ১ম হন টিনা। এরপর চ্যানেল আই, গাজী টিভি, দেশ টিভিসহ বেশ কিছু চ্যানেলে রান্নার প্রোগ্রাম করেছেন।
এরপর ২০১৭ সালে বানী’স ক্রিয়েশনে চাকরি করেন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবং নিজেকে আরো দক্ষ করে তোলার জন্য। চার বছর চাকরির পর সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই এবার উদ্যোক্তা হবেন।
মাত্র ২,০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ২০২১ সালে মাত্র একটি আইটেম দিয়ে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে ফ্রোজেন ফুড সমুচা, কাবাব, রোল, ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি, ছানার জিলাপি, রসমালাই করছেন। পিঠাপুলির মধ্যে রয়েছে বিবিখানা, ভাপা পিঠা। ডেজার্ট হিসেবে আছে কেক, পেস্ট্রি। এছাড়াও কুকিজ ও বিভিন্ন স্ন্যাকস জাতীয় খাবারের মধ্যে পিজ্জা, বার্গার, ছানার দইবড়া, হালিম, হাতে তৈরি লাচ্ছা সেমাই আছে। ক্যাটারিং সার্ভিস হিসেবে দিচ্ছেন বিফ/চিকেন বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও, ভুনা খিচুড়ি, গরুর গোস্ত ভুনা ইত্যাদি।
যেহেতু টিনা মিষ্টি নিয়ে কাজ করছেন এবং এর পাশাপাশি আরো অনেক আইটেম রয়েছে, তাই তিনি তার উদ্যোগের নাম দিলেন “মিষ্টিযোগ”।
টিনা সব সময় চেষ্টা করেন খাবারের মান ও গুণাগুণ বজায় রেখে স্বাস্থ্যসম্মত, পুষ্টিকর, ফ্রেশ, কেমিক্যাল মুক্ত ও প্রিজারভেটিভ মুক্ত খাবার গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে৷
দু’জন কর্মীর সহযোগিতায় অনলাইনে উদ্যোগ পরিচালনা করছেন তিনি। হোম মেড খাবার হওয়াতে টিনা তার পণ্য শুধু ঢাকার বিভিন্ন এলাকাতে সরবরাহ করে থাকেন। অর্ডারের ভিত্তিতে প্রতি মাসে আনুমানিক ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকার খাবার সেল হয়।
উদ্যোক্তা খুশবু জাহান টিনা উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, আমার উদ্যোগ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো আমার বিজনেসকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই এবং অফলাইনে একটি আউটলেট থাকবে। এটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন।
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তবর পরামর্শ: কেউ যেন বেকার জীবন যাপন না করে। সবাই যেন ভালো কাজ করে উপার্জন করে নিজেকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। “আমি মনে করি, অন্যের অধীনে কাজ করার চেয়ে নিজের ভেতর যে সুপ্ত প্রতিভা আছে তা দক্ষতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সমাজের মানুষের কাছে নিজের পরিচয়কে তুলে ধরতে হবে।”
সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা