উদ্যোক্তা - মোঃ সাইদুর রহমান

মিষ্টি খেতে কে না পছন্দ করে? ছোট থেকে বড় সব বয়সী মানুষ কম বেশী মিষ্টি খায়। এমনকি অতিথী সেবাও হয় মিষ্টিতে। তাছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিষ্টি থাকা যেন বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে আর খুশির খবরে মিষ্টি না হলে চলেই না। পরীক্ষার রেজাল্ট থেকে বিয়ে পর্যন্ত সব রকম শুভ কাজেই মিষ্টি লাগে। আর এই বিভিন্ন জেলার মিষ্টি নিয়ে ব্যবসা করে সফল হয়েছেন উদ্যোক্তা মোঃ সাইদুর রহমান। উদ্যোক্তা সাইদের  উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প চলুন জানিঃ 

এক দিন গ্রামের বাড়িতে ই-কমার্স নিয়ে আলোচনা করছিলেন কালাম নামের এক ভাইয়ের সাথে সাইদ ও সাইদের পার্টনার হাসান। সাইদ ও হাসানের কাছে কালাম জানতে চায়, ভাই অনলাইনে অনেক কিছু বিক্রি হয় শুনেছি; আম বিক্রি করা যাবে? দুই উদ্যোক্তা জানালেন কেমিক্যাল ফ্রি ও ভাল আমের চাহিদা ঢাকাতে অনেক বেশী। এরপর কালামের সহযোগিতায় সাইদ ও হাসান একটি নিদিষ্ট পরিমাণ আম বিক্রি করেন এবং ক্রেতাদের কাছে খুব ভাল সাড়া পান।

মোঃ সাইদুর রহমান পড়াশোনা করেছেন একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন এন্ড টেলিকমিউনিকেশন নিয়ে। চাকরি করছেন ‘অরেঞ্জ বিজনেস সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠানে; এসিস্টেন্ট ম্যানেজার হিসেবে।

সাইদ কিছু দিন অনালাইন ঘাটাঘাটি ও খালাতো ভাই হাসানের সহোযোগীতায় ২০১৬ সালে তিন হাজার একশত টাকা নিয়ে শুরু করলেন অনলাইন ব্যবসা। অনলাইনে খাবার, মিষ্টি ও মসলা জাতীয় আইটেম নিয়ে অনলাইন বাজার যার নাম দিলেন মসলামার্টডটকম (www.moshlamart.com)

মেহেরপুরে জন্ম ও বেড়ে ওঠার সুবাদে ভাল পণ্য খুঁজে বের করার জন্য হাসান ও সাইদের কাছে মেহেরপুরকে ভাল জায়গা মনে হয়েছে কারণ সেখানে তাদের বড় হওয়া এবং অনেকেই পরিচিত আছেন।
প্রথম দিকে মেহেরপুরের বিখ্যাত মিষ্টি সাবিত্রী, মধু, ঘি, মৌসুমি ফল, খেজুর গুড় নিয়ে কাজ শুরু করলেও ভবিষ্যতে অনলাইনে মেহেরপুরের অর্গানিক সবজি, ফল, মাছ ও মাংস নিয়ে কাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানান উদ্যোক্তা সাইদ।

সাইদ উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, ‘গত মৌসুমে ২০,০০০০ পিচ লিচু ও ১২,০০০ কেজির মত আম বিক্রি করেছেন অন্য সব ব্যবসার পাশাপাশি। প্রতি মাসে বিক্রয়ের পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ টাকা এবং আম ও মৌসুমি ফলের সময় প্রায় ১২-১৫ লাখ টাকা।’

মশলামার্টে পাওয়া যায় মেহেরপুর সহ বিভিন্ন জেলার মিষ্টি, বিভিন্ন রকম ডাল, চাল, কুমড়াবড়ি, খেজুর গুড়ের পাটালি, সরিষার তেল, ঘি, বিভিন্ন মসলা, কালোজিরার তেল, আম, মাল্টা, লিচু, ড্রাগন ফল ইত্যাদি পণ্য। যার সর্বনিম্ন মূল্য ৬০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মূল্য ১৮০০ টাকা পর্যন্ত। মেহেরপুরের বিখ্যাত সাবিত্রী মিষ্টি সপ্তাহে তিন দিন ডেলিভারি দেন এই উদ্যোক্তা।

ব্যবসা করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানান সাইদ ‘খাবার ও ফল জাতীয় আইটেমের ডেলিভারিতে বড় সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় এবং পুঁজি কম হবার কারণে বাইক বা বড় কোনো ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন না। রেন্টাল সার্ভিস ব্যবহার করা অনেক ব্যয়বহুল, যা আমরা ক্রেতার কাছে ডেলিভারি চার্জ হিসেবে চাইতে পারি না। এছাড়া পণ্য প্যাকেজিং একটা বড় খরচ ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এছাড়া দক্ষ লোকবলের অভাব, ই-কমার্স নিয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাব প্রতিনিয়ত অনুভব করছেন বলে জানান সাইদ।’

ব্যবসার শুরু থেকে যে মানুষ সব চেয়ে বেশি সাহস যুগিয়েছেন তিনি খালাতো ভাই হাসান। পাশে থেকে ব্যবসা শিখিয়েছেন এবং এখন এক সাথেই ব্যবসা করছেন দুই ভাই।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, অর্গানিক ফুড নিয়ে বৃহৎ ভাবে কাজ করা ইচ্ছা আছে। এছাড়া ফুড ডেলিভারিতে সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করাই মূল লক্ষ্য।

সবাই যখন ভেজাল খাদ্যের ব্যবসা করে বড় হতে চায় ঠিক তখনি মশলামার্টের উদ্যোক্তারা চায় নির্ভেজাল খাবার, টাটকা ফল ছাড়াও ভেজালমুক্ত পণ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। যাতে করে এইগুলো খাওয়ার পর কেউ অসুস্থ হয়ে না পড়ে। সততা এবং বুদ্ধি দিয়ে কাজ করে সফল হয়েছেন সাইদ ও হাসান।

 

খাদিজা ইসলাম স্বপ্না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here