‘গোলকিপার্স গ্লোবাল গোল চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ পেয়েছেন বাংলাদেশি তরুণী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ ফাইজা বিথার।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে ফাইরুজকে গোলকিপার্স অ্যাওয়ার্ড দেয় বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
ফাইরুজ ফাইজা ‘মনের স্কুল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে।
গোলকিপার্সের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘২০২১ চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্ত বাংলাদেশের ফাইরুজ ফাইজা বিথার পরিবর্তন আনার অনুপ্রেরণায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে এবং নেতৃত্বের জায়গায় থেকে সুস্বাস্থ্য ও মানুষের ভালো থাকার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তার এ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ‘গোলকিপার্স গ্লোবাল গোল চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।’
‘২০২১ গ্লোবাল গোলকিপার্স অ্যাওয়ার্ডে’র বিজয়ী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে জাতিসংঘের নারী শাখার সাবেক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল এবং এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ফুমজিলে মলাম্বো নকুকাকে। বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ, বৈশ্বিক লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদান এবং নারীদের ওপর অতিমারির প্রভাব নিয়ে ক্রমাগত সচেষ্ট হওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর মলাম্বো নকুকাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে।
গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস বলেন, ‘অতিমারির জেরে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, এই বিষয়ে আলোকপাত করেছিলেন জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ফুমজিলে মলাম্বো নকুকা। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় স্তরের সব উদ্যোগে নারীদের প্রতি হওয়া বৈষম্য দূর করার প্রসঙ্গও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এমনটা সম্ভব হয়েছে ফুমজিলে মলাম্বো নকুকার সৌজন্যেই। সারা বিশ্বে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের এমন নেতৃত্বেরই প্রয়োজন।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছর অন্য দুটি পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে কলম্বিয়ার জেনিফার কলপাস এবং লাইবেরিয়ার সাট্টা শেরিফকে। গ্লোবাল গোলসকে পূর্ণতা দিতে তারা প্রত্যেকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এই সম্মান তাদের সেই কাজের স্বীকৃতি।
এর মধ্যে কলম্বিয়ার জেনিফার কলপাসকে দেওয়া হয়েছে ‘২০২১ প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ডিজিটাল অথবা কোনো ব্যবসায়িক উদ্যোগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নে যারা কাজ করছেন এ পুরস্কার তাদের জন্য। জেনিফার কলপাস মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জল এবং মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা পৌঁছে দেওয়ার কাজ (এসডিজি-৬) করছেন। টিয়েরা গ্রাটা নামক সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জেনিফার কলপাস। এই সংস্থার কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে রয়েছে কলম্বিয়ার নানা গ্রামাঞ্চলে।
অন্যদিকে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে কাজের (এসজিডি -৫) জন্য ‘২০২১ ক্যাম্পেইন অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়েছে লাইবেরিয়ার সাট্টা শেরিফকে। এ স্বীকৃতি দেওয়া হয় এমন কোনো প্রচারাভিযানের জন্য যা, সচেতনতা বাড়িয়েছে অথবা কোনো গোষ্ঠীকে নতুন কিছু করার, পরিবর্তন আনার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সাট্টা শেরিফ অ্যাকশন ফর জাস্টিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইট্স (এজেএইচআর) নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। যুবকদের নিয়ে তৈরি এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা লাইবেরিয়ায় মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে কাজ করে।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার বিল গেটস বলেন, ‘বিশ্বের সর্বত্র চলমান বৈষম্য কোভিড-১৯ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। তবে এই প্রতিকূলতার মধ্যেও যে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব, এই চার মহীয়সী নারী তা দেখিয়ে দিয়েছেন। তাদের স্বীকৃতি দিতে পেরে আমরা সম্মানিত বোধ করছি।’
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সিইও মার্ক স্যুজম্যান বলেন, ‘নারীরা কীভাবে উদ্ভাবনী উপায়ে আমাদের সমাজ এবং দেশগুলোর পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এই পুরস্কারের বিজয়ীরা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। আরও সুন্দর ও বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়তে, বিশ্বব্যাপী মানসিক সহযোগিতা ও সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবারের বিজয়ীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। তাদের কাজ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।’
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের ‘পঞ্চম বার্ষিক গোলকিপার্স প্রতিবেদন’ প্রকাশিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি গোলকিপার্স গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ডসের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হলো। বিল গেটস এবং মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস যৌথভাবে এ বছরের প্রতিবেদনটি লেখেন। কোভিড-১৯ সমাজে যে অসম প্রভাব ফেলেছে তা উঠে এসেছে বার্ষিক গোলকিপার্স রিপোর্টে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাইরুজ ফাইজা বিথার ‘গোলকিপার্স গ্লোবাল গোল চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ পাওয়ায় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন উপাচার্য ড. মাহমুদ হোসেন।
এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন এবং আগামীতেও তার এমন সৃজনশীল কর্মকাণ্ড খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অভিনন্দন জানিয়েছেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. হোসনে আরা, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের ডিন প্রফেসর প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমদসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা।
উল্লেখ্য, ফাইরুজ ফাইজা বিথার খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শহীদ ইকবাল বিথার এবং জাতীয় মহিলা সংস্থা খুলনা শাখার চেয়ারম্যান ও একই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অধ্যাপক রুনু বিথারের কন্যা।
উদ্যোক্তা বার্তা রিপোর্ট