অভিজাত এলাকায় পয়ঃবর্জ্যের অবৈধ সংযোগ দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। ঢাকা উত্তর সিটি স্যানিটেশন ট্রেড ফেয়ার ২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
গুলশান-২ এর বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ পার্কে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ইউনিসেফের সহযোগিতায় ০৯-১০ মার্চ ‘দুই দিনব্যাপী ঢাকা উত্তর সিটি স্যানিটেশন ট্রেড ফেয়ার-২০২৩’ শুরু হয়েছে। এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই মেলা চলবে।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকালে ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি।
স্যানিটেশন ফেয়ার উদ্বোধন শেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এবং ডিএনসিসি মেয়র প্রতিটি স্টল ঘুরে দেখেন এবং আধুনিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা নেন।
নিরাপদ ও টেকসই পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক ও উন্নত পরিষেবা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় আধুনিক পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রায় ২৫টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। আধুনিক পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এই মেলায় রয়েছে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমাধান ও পণ্যের ডেমোনেস্ট্রেশন, কস্ট, অপারেশন এবং ম্যানেজমেন্ট। ভবন-ইমারতে কার্যকর সোক ওয়েল, সেপটিক ট্যাংক ব্যবস্থা স্থাপন নিশ্চিত করার জন্য ভবনের মালিকদের অনুরোধ জানানো হয় স্যানিটেশন ফেয়ার থেকে। পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা (অনসাইট স্যানিটেশন) সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ ভবন, ইমারতে কার্যকর সোক ওয়েল, সেপটিক ট্যাংক ব্যবস্থা স্থাপন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই আয়োজনের মাধ্যমে সচেতনতা গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে আয়োজকরা আশা করছেন। পাশাপাশি নিরাপদে অন-সাইট স্যানিটেশনের জন্য সঠিক, উপযুক্ত সেভ স্যানিটেশন টেকনোলজি ক্রয়ের সুযোগ রয়েছে স্যানিটেশন ট্রেড ফেয়ারে।
স্টল পরিদর্শন শেষে অতিথিরা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় নিরাপদ ও টেকসই পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি, ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম, ঢাকায় নিযুক্ত কিংডম অব নেদারল্যান্ডস এর রাষ্ট্রদূত এ্যানে ভ্যান লিউয়েন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো: আনিছুর রহমান মিঞা, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, ইউনিসেফ-বাংলাদেশ এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সেলডন ইয়েট, নগর ও পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব, সাবেক সচিব হেদায়েতুল্লাহ মামুন এবং বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. মোঃ মুজিবুর রহমান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘গুলশান, বনানী ও বারিধারা অনেকটা ম্যানহাটন শহরের মতোই অভিজাত ও ব্যয়বহুল। কিন্তু এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এসব এলাকায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি বানালেও সুয়ারেজের ব্লাক ওয়াটারের সংযোগ আমাদের সারফেস ড্রেনে দিয়ে রেখেছে। অভিজাত এলাকায় পয়ঃবর্জ্যের অবৈধ সংযোগ দুঃখজনক। এমনও অনেক বাড়ি আছে দুটি বা তিনটি বিএমডব্লিউ গাড়ি রয়েছে। কিন্তু অল্প টাকা খরচ করে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করেনি।’
মেয়র বলেন, ‘আমরা চাই একটি সুন্দর শহর, একটি দূষণমুক্ত শহর। আমরা চাই শহরের খালগুলো হবে দূষণমুক্ত। এজন্য আমাদের সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে, দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাসা-বাড়ির পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ সারফেস ড্রেন (স্ট্রম ড্রেন) অথবা খালে দেওয়া যাবে না। পয়-বর্জ্যের লাইন খালে গিয়ে প্রতিনিয়ত খালকে দূষণ করছে। দূষণের ফলে খালে মাছের চাষ না হয়ে সেখানে মশার চাষ হচ্ছে। সেটি আর হতে দেয়া যাবে না।’
মেয়র আরও বলেন, ‘পয়ঃবর্জ্যের অবৈধ সংযোগ বন্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। কয়েকটি এলাকায় সুয়ারেজ লাইনে কলাগাছ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু আমরা অভিযান করবো, কলাগাছ দিয়ে বন্ধ করবো এটি সমাধান হতে পারে না। আমি অনুরোধ করছি আপনারা সচেতন নাগরিক হিসেবে, সচেতন ভবন মালিক হিসেবে, বিভিন্ন সোসাইটির সচেতন নেতা হিসেবে, হাউজিং প্রতিষ্ঠানের সচেতন মালিক হিসেবে অন সাইটে সঠিক পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থা করুন। এই ফেয়ার থেকে সমাধান পাবেন। এখান থেকে কারিগরি সহায়তা পাবেন। পছন্দ অনুযায়ী ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করে বাড়িতে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করুন। শহরকে দূষণমুক্ত করতে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন।’
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ সালের উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নগরায়ন হতে হবে। বাসযোগ্য ঢাকার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পয়ঃনিষ্কাশন, খোলা জায়গা, খেলার মাঠ থেকে শুরু করে জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যত্রতত্র, খেয়ালখুশিমত স্থাপনা তৈরির সংস্কৃতি থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে। সেসময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী নাগরিকদের ইতিবাচক মনোজাগতিক পরিবর্তনের উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, আইন ও নিয়মকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিকরাই উন্নত ও স্মার্ট নগরের প্রধান কারিগর। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নাগরিকদের সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার বিষয়ে সচেতন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবার সচেতনতা এবং সহযোগিতা থাকলে বাসযোগ্য ঢাকা গড়া সম্ভব।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালে পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ঢাকা শহরকে পাঁচটি ক্যাচমেন্ট এলাকায় ভাগ করেন। কারণ দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বাসযোগ্য ঢাকার অন্তরায়। আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ার সাথে সাথে ভোগ করার প্রবণতা বাড়ছে যার ফলে দৈনিক প্রচুর বর্জ্য এবং আবর্জনা তৈরি হচ্ছে। ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৬ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এ বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনা না গেলে বাসযোগ্য ঢাকার স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী উন্নত বিশ্বের উদাহরণ দিয়ে বলেন, জাপান, সিঙ্গাপুরের মতো দেশও একসময় এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল এবং তারা সফলভাবে তা মোকাবেলা করে স্মার্ট নগর গড়তে পেরেছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকতা মোঃ সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহঃ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা