তানবিনা আফরোজ, যশোর এমএম কলেজ থেকে ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেন ইডেন কলেজ থেকে। বাবা ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে রিটায়ার্ড করেছেন।
তানবিনা আফরোজের পড়ালেখা শেষ করার পর চাকুরি করার খুব ইচ্ছা ছিল। তাই পড়াশোনা শেষ করে Fast Track Education Service অফিসে কাজ শুরু করেছিলেন। চাকুরী করেছেন এক বছর ২ মাস। কিন্তু সন্তানের জন্য চাকুরীটা ছেড়ে দিতে হয়েছে। তারপরও থেমে থাকেনি কিছু একটা করার তাগিদ সবসময় ছিল।
ব্লকের কাজ খুব ভাল লাগতো তানবিনার। তাই চাকরি ছাড়ার পর ২০১০ সালে ব্লকের কাজ শুরু করেন। অনেক সাড়াও পান তিনি। বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে সেটা আর করা হয়নি। এরপর আরও কয়েক বছর পর আবারও শুরু করি। ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়তে থাকে। তখন দেশের বাইরেও তার পণ্য যায়। বিসিএস দিয়ে কলেজে চাকুরী করার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সন্তানের এর কারণে চাকুরী আর করতে পারেননি তাই উদ্যোক্তা হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
২০১০ সালে ব্লকের কাজ দিয়ে শুরু করলেও পরবর্তীতে বাটিক পণ্য নিয়ে কাজ করেন। সেই সময় ১০,০০০ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেছিলেন। বর্তমানে ব্লক,বাটিকের থ্রিপিস,শাড়ি ও পাঞ্জাবী, ভিসকস ব্লকের শাল, নকশীকাঁথা, বাটিকের ব্লাউজ, শিশুদের বাটিকের জামা আরো আছে উদ্যোক্তার হাতে তৈরি গহনা। এখন যুক্ত করেছেন লেদার পণ্য। নিজের কারখানা না থাকলেও অন্যান্য কারখানার কর্মী দিয়ে কাজ করিয়ে থাকেন। যদিও গহনাগুলো তিনি নিজেই তৈরি করেন। আরো চাহিদা বাড়লে কর্মী দিয়ে কাজ করার চিন্তা আছে এমনি জানান তানবিনা আফরোজ।
চাকুরী না করে গড়ে তোলেন তার উদ্যোগ ‘ঝুমকো জবা’। সময় গড়িয়েছে ১২ বছর। মেধা ও পরিশ্রমের সুফল হিসেবে পেয়েছেন সাফল্য। তার পণ্যের চাহিদা এখন জার্মানি, অস্ট্রেলিয়াতেও। তিনি প্রতিটি পণ্য এমন সূক্ষ্মভাবে তৈরি করেন যেন ক্রেতাদের আকর্ষণ তার পণ্যের থেকেই কখনো না সরে। আর দেশে স্থানীয় পণ্যের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। এর ফলে বহু উদ্যোক্তা, যারা আগে বিদেশী পণ্য নিয়ে কাজ করতেন তারাও এখন দেশী পণ্যের প্রতি ঝুঁকছেন। সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছেন উদ্যোক্তা তানবিনা আফরোজ।
তানবিনা আফরোজ বলেন, প্রথম বিক্রি পণ্য ছিল ব্লকের থ্রিপিস। বেক্সিভয়েল দিয়ে করেছিলাম, সাথে প্রাইডের ওড়না। প্রথম বিক্রি পণ্যের মূল্য ছিল ১১৫০ টাকা। আমার মেয়ের বান্ধবীর মা নিয়েছিল থ্রিপিসটি।
গামছা ফিউশন গহনাগুলো সবাই খুব পছন্দ করে। গামছার সাথে কড়ি, পুঁতি, মেটাল দিয়ে কাজ করছি। আমার উদ্যোগে প্রতিমাসে প্রায় ২৫,০০০ টাকা শুধু গহনা বিক্রি করে আয় হয়। অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমেই অর্ডার নিয়ে থাকি। আমার অফলাইন ক্রেতা অনেক।
ঝুমকো জবা অনলাইনভিত্তিক পেজে জলরঙ গ্রুপের সদস্যদের কাছ থেকেও অর্ডার পেয়ে থাকেন এবং তাদের পরিচিতরাও অর্ডার করেন।
নকশীকাঁথা, হাতের কাজের থ্রিপিস, হাতে তৈরী গহনাগুলো অস্ট্রেলিয়াতে পাঠাচ্ছেন। এছাড়াও জাপানে পাঠানোর জন্য কথা চলছে। দেশের ভেতর ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল কম বেশি সব ধরনের পণ্য সরবরাহ করেন। তবে, ঢাকা ও ঝিনাইদহে সবচেয়ে বেশি পণ্য ডেলিভারি হয়।
মাসে থ্রিপিস, শাড়ি, নকশীকাঁথা, গহনা মিলে প্রতিমাসে প্রায় ৬০/৭০ পিস পণ্য উৎপাদন করে। মাসে দেড় লক্ষ টাকার পণ্য বিক্রি হয়।
তানবিনা জানান, একটা সময় এসে মনে হলো দেশীয় পণ্যগুলো অনেক কোয়ালিটিফুল, গুণে মানে সেরা এবং এই পণ্যগুলোর প্রচারের অভাবে বিদেশী পণ্যগুলো বাজার দখল করে ফেলছে। সেই সাথে দেশের তাঁতীরাও এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেক খারাপ সময় পার করছে। তাই দেশী পণ্যের উদ্যোক্তা হয়ে উঠা।
তানবিনা আফরোজ বলেন,‘সাফল্যের জন্য পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় প্রয়োজন। আমি যখন ব্যবসা শুরু করি তখন প্রথম বেশ বহুদিন লোকসান দিয়েছি। লাভ না হওয়ায় পুঁজি থেকে অন্য কারখানা কর্মীদের সম্মানি দিয়েছি। কিন্তু আমি হতাশ হইনি। আমি জানি পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই। আমার অদম্য ইচ্ছা আর বাবা মায়ের অনুপ্রেরণায় আমি এখন পুরোপুরি নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।’
ভবিষ্যতে তিনি দেশীয় পণ্যের প্রচার করতে চান এবং দেশের বাইরে রপ্তানি করতে চান। বর্তমানে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে ঘরে বসেই নানা দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। তাই আরো দক্ষতা অর্জন করে পুরো বিশ্বের ছড়িয়ে যেতে চান উদ্যোক্তা তানবিনা আফরোজ।
মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা