“রেনি’স রেয়ার কালেকশন” এর স্বত্ত্বাধিকারী খাদিজা ইসলাম রেনি। ২০১৬ সালে শারীরিক দুর্ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। ২০২০-এ আবারো একই দুর্ঘটনা ঘটে। আরো ভেঙে পড়ে মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন তিনি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কিছু একটা করার পরিকল্পনা নিয়ে নিজের জমানো ছয় হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ২০২০-এ শুরু করেন “রেনি’স রেয়ার কালেকশন”।
শুরুটা ছিলো মনিপুরী পোশাক এবং ওড়না দিয়ে। আশানুরূপ চাহিদা লক্ষ্য না করায় নতুন পণ্যের পসরা দিয়ে সাজালেন “রেনি’স রেয়ার কালেকশন”। মনিপুরীর সাথে এখন মসলিন, বলাকা, তসর মটকাসহ বিভিন্ন ধরনের সিল্ক শাড়ি এবং থ্রি-পিস নিয়ে কাজ করছেন এই উদ্যোক্তা। পাশাপাশি রেখেছেন ব্লক ও বাটিকের পোশাক এবং মেটালের গহনা। বর্তমানে মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে প্রোডাক্ট ঘরে তোলা পর্যন্ত ১০ জন কাজ করছেন উদ্যোক্তার সাথে।
খাদিজা ইসলাম বলেন, “নিজ এলাকার ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো দিয়ে ব্রান্ডিং এর বিষয়ে ‘উই’ থেকে জেনেছি। ‘উই’ গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পর নাসিমা আক্তার নিসা আপুসহ গ্রপের সকলের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখেছি। এছাড়াও আমি ‘উই’-এর মাস্টার ক্লাস, সফ্ট স্কিল ক্লাস অনলাইনে যে প্রশিক্ষণ তারা দেন– সেগুলো গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এই অভিজ্ঞতাগুলো আমার উদ্যোক্তা জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সহযোগিতা করছে।”
এছাড়াও তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাঁতিদের কাছ থেকেও ভিন্নরকম ফিউশন করা শাড়ি এনে সেগুলোর ওপরে কাজ করেন। “নিজস্ব ক্রিয়েশনগুলো আমার। ক্রেতারা মসলিনের ওপরে গর্জিয়াস এমব্রয়ডারি কাজ করা শাড়িগুলো বেশি নেন। এমনও হয়েছে আমার একই ক্রেতা আমার কাছে ৩০ বার পণ্য অর্ডার করেছেন। মাত্র এক বছরের মধ্যে একজন ক্রেতার কাছ থেকে এতবার অর্ডার নিঃসন্দেহে আমার জন্য বিরাট প্রাপ্তি।”
উদ্যোক্তা মনে করেন, উদ্যোগের মূলমন্ত্রই হচ্ছে ক্রেতার হাতে বেস্ট কোয়ালিটির পণ্য তুলে দেওয়া। প্রথম থেকেই কোয়ালিটি মেনটেইন করে এসেছেন খাদিজা ইসলাম। আর তাই এক বছরের ব্যবধানে তার রিপিট এবং রেফারেন্স ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রায় ১০০ ক্রেতা “রেনি’স রেয়ার কালেকশন” থেকে নিয়মিত কেনাকাটা করেন। ক্রেতারা পণ্য হাতে পাওয়ার পর ইনবক্সে এবং পেজে এসে রিভিউ দেন।এই রিভিউগুলো তার মতো উদ্যোক্তাদের কাজের প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয় বলে তিনি মনে করেন।
খাদিজা ইসলাম রেনির শৈশব-কৈশোর কেটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকায়। বর্তমানে স্বামীর সরকারি চাকরির সুবাদে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় বাস। তার উদ্যোক্তা জীবনে স্বামী অবিরাম সাহস যুগিয়ে চলেছেন। তিনি বলেন: আমি যেহেতু উপজেলা পর্যায়ে বসবাস করছি, কিন্তু অর্ডার আসে দেশের নানা প্রান্ত থেকে; আমার স্বামী বেশিরভাগ সময় প্রোডাক্টগুলো পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
আরও বড় পরিসরে “রেনি’স রেয়ার কালেকশন“-কে তুলে ধরার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন খাদিজা ইসলাম । পাশাপাশি সুযোগ এবং সাধ্যমতো অসহায় নারী এবং সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের নিয়ে কাজ করার ঝোঁকও রয়েছে এই উদ্যোক্তার।
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা, রাজশাহী