কয়েন থেকে গহনা বানিয়ে উদ্যোক্তার বাজিমাত

0
উদ্যোক্তা তাসমিনা নিশাত

এক সময় মানুষ শখের বসে পুরোনো কয়েন সংগ্রহ করতেন। তাই একটু ভিন্ন কিছু করবার জন্য এই কয়েনকেই বেছে নেন উদ্যোক্তা৷ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানের অব্যবহৃত কয়েন দিয়ে বিভিন্ন রকম গয়না তৈরির মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের দুই বন্ধু মিলে শুরু করেন একটি উদ্যোগ। উদ্যোগের নাম দেয়া হয় “দ্বৈত”।

পুরোনো কয়েনের তৈরি নেকলেস, আংটি, মালা অনেক প্রশংসা পেয়েছিল ক্রেতা মহলে। বন্ধু- বান্ধবের সহযোগিতায় এবং নিজেদের প্রচেষ্টায় দুই বন্ধুর “দ্বৈত” এর পথচলা শুরু হয় ২০১৪ সালে।

পড়াশুনা শেষ করে চাকরি করতে চান নি কেউই। সবসময় চেয়েছিলেন নিজেরাই কিছু করবেন। আর সেই ভাবনা থেকেই পড়াশুনা চলাকালীন সময়ে ছোট্ট উদ্যোগের মাধ্যমে উদ্যোক্তা জীবনে পা রাখেন বাধন মাহমুদ এবং তাসমিনা নিশাত।

কিন্তু পুরোনো কয়েন সংগ্রহ করে তা দিয়ে গয়না তৈরির প্রক্রিয়াটি বেশ সময় সাপেক্ষ। ছাত্র অবস্থায় স্বল্প লাভে প্রোডাক্ট সেল করে খুশি থাকা গেলেও অধিক সময় ব্যয় করে স্বল্প লাভে প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

এছাড়াও দ্বৈত এর কাজ চলাকালীন সময়, সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে উদ্যোক্তা দেখলেন ঐ সময়টায় মেয়েদের প্রোডাক্ট বেশি সেল হচ্ছে অনলাইনে। তাই মেয়েদের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে হবে আর সেই ভাবনা থেকেই মাত্র ১২৫০ টাকা বিনিয়োগ করে একটি কাতান শাড়ি তৈরি করেন উদ্যোক্তারা এবং সেই শাড়ি বিক্রি করেন ৪৫০০ টাকায় আর এভাবেই ২০১৫ সালে শুরু হয় তাঁদের নতুন উদ্যোগ “কইন্যা”।

বর্তমানে প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, সুইং ফ্যাক্টরি এবং নিয়মিত ৮ জন তাঁত নিয়ে প্রায় ১৫ জন কর্মী নিয়ে কাজ করছে “কইন্যা”।

উদ্যোক্তা বাধন মাহমুদ বলেন, “কইন্যা সব সময় চেষ্টা করে লোকাল মেটারিয়ালস নিয়ে কাজ করতে। যেহেতু আমরা স্টুডেন্ট অবস্থায় কাজ শুরু করেছি, তাই আমরা চেষ্টা করি- প্রোডাক্ট টা যেন একজন স্টুডেন্ট নিতে পারে। এছাড়াও পোশাকের ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ থেকেই বিভিন্ন ডিজাইনের ড্রেস তৈরি করে থাকি আমরা।”

ক্রেতাদের স্বাচ্ছন্দ্যবোধকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে “কইন্যা”। তাই নিত্য নতুন ডিজাইনের ড্রেস কালেকশনের ক্ষেত্রে অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও বেশ সাড়া পাচ্ছেন তারা। ব্যক্তিগত জীবনে ড্রেসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যাকে সমাধান করতেই কইন্যাতে যুক্ত হয় বিভিন্ন ডিজাইনের ড্রেস।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর জেনেটিক প্লাজায় একটি শোরুম চালু করে কইন্যা কিন্তু তার কিছুদিন পরেই মহামারী করোনায় প্রায় ৯ মাস বন্ধ ছিল কইন্যার অফলাইন প্লাটফর্ম। কিন্তু উদ্যোক্তা মোটেও ভেঙ্গে পড়েননি। অনলাইনে চালিয়ে গেছেন তাদের উদ্যোগ। ক্রেতা মহলে বেশ সাড়া পেয়েছিল কইন্যার নিত্য নতুন ভিন্ন ধরনের কালেকশন যা কিনা দেশীয় ঐতিহ্যকে তুলে ধরছে সব সময়।

উদ্যোক্তা তাসমিনা নিশাত জানান, তিনি নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে ম্যাটারনিটি ওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং চেষ্টা করেন ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ঢিলেঢালা কমফোর্টেবল ম্যাটারনিটি ওয়্যার ক্রেতাদের পোঁছে দিতে। তিনি আরো বলেন, অনেক সময় বাজারে একই ডিজাইনের লার্জ সাইজের ড্রেস পাওয়া যায় না। আমরা সেই সুবিধাটাও দিয়ে থাকি। এছাড়াও বিভিন্ন ডিজাইনের কুর্তি, সালওয়ার-কামিজ, স্টিচ-আনস্টিচ পাওয়া যায় কইন্যাতে। যার সব কিছুই দেশীয় ম্যাটারিয়ালস দিয়ে তৈরি। আধুনিক ডিজাইনের বিভিন্ন ড্রেস ডিজাইনের মাধ্যমে সর্বস্তরের সকল বয়সের নারীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে “কইন্যা”।

বন্ধুকে নিয়ে পথ চলা শুরু, জীবন সঙ্গী হয়ে দেশের সর্বস্তরের নারীদের মানবিক এবং সামাজিক সেবা নিশ্চিত করতে পারলেই, হবে কইন্যার সফলতা – এমনটাই বলছিলেন উদ্যোক্তা বাধন মাহমুদ।

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here