করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ এবং ফাউন্ডেশনের নিজস্ব অর্থে গঠিত ‘রিভলভিং তহবিল’ থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের আরো ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন। একজন উদ্যোক্তা সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন উদ্যোক্তারা।
করোনা মহামারী পরবর্তী পরিস্থিতিতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৩০০ কোটি টাকা বিতরণের পর অর্থ বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক গঠিত ‘রিভলভিং ফান্ড’ থেকেও এসএমই উদ্যোক্তা, ক্লাস্টার, ক্লায়েন্টেল গ্রুপ, অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারের সদস্য ও নারী-উদ্যোক্তাদের মাঝে ২৯৪ কোটি ঋণ বিতরণ করা হয়। অর্থ বিভাগের নতুন পরামর্শ মোতাবেক এই ঋণের সুদের হার হবে মাত্র ৬%। এ লক্ষ্যে ২৩টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
১১ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন অংশীদার ১৯টি ব্যাংক ও ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীগণ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, দি প্রিমিয়ার ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আব্দুর রহমান খান এফসিএমএ। অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রণোদনা প্যাকেজ ‘রিভলভিং ফান্ড’ থেকে ঋণ বিতরণ নীতিমালার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সালাহউদ্দিন মাহমুদ।
বক্তব্য প্রদান করেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবি’র সভাপতি ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রেজা ফরহাদ হোসাইন এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম।
অনুষ্ঠানে এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। অংশীদার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে জামানতবিহীন ঋণ বিতরণের বিষয়ে উৎসাহিত করা হবে। তবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কোন জামানত গ্রহণ করা হবেনা।
গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা হবে সর্বোচ্চ ৪ বছর। গ্রাহক-ব্যাংক সম্পর্কের ভিত্তিতে ৬ মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪৮টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। মোট ঋণের ৩০% নারী-উদ্যোক্তাদের মাঝে এবং ১০% এসএমই ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। নারী-উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে মোট ঋণের ৫০% ভাগ উৎপাদন ও সেবা খাতে এবং বাকি ৫০% ভাগ ভ্যালুচেইন ও অন্যান্য খাতে বিতরণ করতে হবে। আর পুরুষ উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে মোট ঋণের ৫০% ভাগ উৎপাদন খাতে, ২৫% ভাগ সেবা খাতে এবং ২৫% ভ্যালুচেইন ও অন্যান্য খাতে বিতরণ করতে হবে। ফাউন্ডেশন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম নিয়মিতভাবে মনিটরিং করবে। ঋণ বিতরণের পর এসএমই ফাউন্ডেশনের নিজস্ব পদ্ধতি ও লোকবল দ্বারা সরেজমিন পরিদর্শন করে চুক্তি অনুযায়ী এবং সঠিক উদ্যোক্তার অনুকূলে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে কিনা তা যাচাই ও নিশ্চিত করবে। তবে অনুৎপাদনশীল খাত যেমন, মুদি দোকান, ঔষধ বিক্রেতা, হার্ডওয়্যার বিক্রেতা এবং পরিবেশ দূষণ ঘটায় এমন ব্যবসার অনকূলে এ কর্মসূচির আওতায় ঋণ প্রদান করা যাবেনা।
ঋণ প্রাপ্তির জন্য যোগ্যতা:
১. অগ্রাধিকারভুক্ত এসএমই সাব-সেক্টর, ক্লাস্টারের উদ্যোক্তা এবং ভ্যালু চেইনের আওতাভুক্ত উদ্যোক্তা;
২. রপ্তানি উপযোগী পণ্য এবং আমদানি বিকল্প পণ্য প্রস্ততকারী উদ্যোক্তা;
৩. আইসিটি ও প্রযুক্তিনির্ভর সৃজনশীল ব্যবসায়ে যুক্ত তরুণ/নতুন উদ্যোক্তা যারা এখনো ব্যাংক হতে ঋণ পাননি;
৪. পশ্চাদপদ অঞ্চল, উপজাতীয় অঞ্চল, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তা;
৫. দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ট্রেডবডি, এসএমই অ্যাসোসিয়েশন, নারী উদ্যোক্তা সংগঠন, নাসিব, উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সুপারিশকৃত উদ্যোক্তা।
উল্লেখ্য, ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির আওতায় ১০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২,১৮৬জন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার মাঝে প্রায় ১২২ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়, যাদের ২৫% নারী (৫২৪জন) এবং ৭৫% পুরুষ উদ্যোক্তা (১৬৬২জন)।
করোনা ভাইরাস মহামারির বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৩০০ কোটি টাকা ৩১০৮জন উদ্যোক্তার অনুকূলে বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ৭৮.৯২ কোটি টাকা বা ২৬.২৯% পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তারা (৭৩৬জন) এবং ২২১.২৮ কোটি বা ৭৩.৭১% ঋণ পেয়েছেন পুরুষ উদ্যোক্তারা (২৩৭২জন)। বিতরণকৃত ৩০০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৩৮% উৎপাদন খাতে, ১৭% সেবা খাতে এবং ৪৫% ব্যবসা খাতের উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়। পরবর্তীতে ৩০০ কোটি টাকা থেকে প্রত্যাবর্তনকৃত অর্থ এবং ফাউন্ডেশনের নিজস্ব অর্থে গঠিত ‘রিভলভিং তহবিল’ থেকে আরো ২৯৭৮জন উদ্যোক্তার মাঝে ২৯৩.৬৯৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। ঋণপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৫% নারী উদ্যোক্তা (৭৩৬জন) এবং ৭৫% পুরুষ উদ্যোক্তা (২,২৪২জন)।
সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তিন দফায় ৮২৮৬জন উদ্যোক্তার মাঝে প্রায় ৭১৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।