করোনা পরিস্থিতিতে এসএমই খাতের জন্য ঘোষিত প্যাকেজে ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তার জন্য ১১’শ কোটি টাকার সিড মানির জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
রোববার শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিরা ও বেসরকারি খাত) ও এসএমই খাত উজ্জীবন সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক মো. হেলাল উদ্দিন বিষয়টি উদ্যোক্তা বার্তাকে নিশ্চিত করেছেন।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিকের অনুকূলে মোট ১ হাজার একশ কোটি টাকা সিড মানি হিসেবে বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
গত ৩০ এপ্রিল শিল্প মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করেছে। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কারণে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তারা অপেক্ষাকৃত বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে শিল্প মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
চিঠিতে জানানো হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে এসএমই খাতের জন্য ঘোষিত প্যাকেজে ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তার জন্য সিড মানি হিসেবে ১ হাজার ১শত কোটি টাকা চেয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। সিড মানি দিয়ে অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন পাঁচশত কোটি ও বিসিক ছয়শত কোটি টাকার ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এসএমই খাত উজ্জীবন সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিরা ও বেসরকারি খাত) মো. হেলাল উদ্দিন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘আমরা অর্থ বিভাগে চেয়েছি, মাত্র বাজেট হয়েছে এখনো অনুমোদনের পত্র আমরা পাই নাই। শিল্প মন্ত্রণালয়, এসএমই ফাউন্ডেশন, বিসিক সবাই মিলে যোগাযোগ রাখছি যাতে করে টাকা টা পাওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়, এসএমই ফাউন্ডেশন, বিসিক টাকাটা পেলে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন। টাকটি পাওয়ার জন্য আমরা জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, এসএমই খাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সহযোগিতা প্রদান, করোনা পরিস্থিতিতে এসএমই খাতের সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ, করোনাপরবর্তী সময়ে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও কুটির এবং মাঝারি শিল্প খাতের শিল্প উদ্যোক্তা, শ্রমিক এবং সাপ্লাই চেইনের সঙ্গে জড়িতদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা এবং এ খাতসংশ্লিষ্টরা কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করার জন্য ‘এসএমই খাত উজ্জীবন সংক্রান্ত কমিটি’ গঠন করা হয়। ১৬ এপ্রিল গঠিত শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ ও সুপারিশমালা তৈরির দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
এসএমই খাত উজ্জীবন সংক্রান্ত কমিটিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ এসএমই খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ট্রেডবডিসমূহ, যেমন: বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতি (বিইআইওএ), জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ (নাসিব) ও এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ‘এসএমই খাত উজ্জীবন সংক্রান্ত কমিটি’র ১ম সভায় জানানো হয়, বর্তমানে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পখাতে প্রায় ১৫ শতাংশ উদ্যোক্তা বর্তমানে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। অবশিষ্ট ৮৫ শতাংশ উদ্যোক্তা আনুষ্ঠানিক ঋণ কার্যক্রমে জড়িত নন এবং তারা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় আনুষ্ঠানিক হিসাব সংরক্ষণে অভ্যস্ত নন।
বাস্তবিক পক্ষে অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও তাদের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন। ফলে অতিজরুরি ভিত্তিতে সিড মানি সংগ্রহ করে এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিকের উদ্যোগে বিশেষ ঋণ কর্মসূচি পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে বিশেষ ঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিসিকের অনুকূলে মোট ১ হাজার একশ’ কোটি টাকা সিড মানি হিসেবে বরাদ্দ প্রদানের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় ৩০ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি পাঠায়।
বেশ কজন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার সঙ্গে আলাপকালে তারা উদ্যোক্তা বার্তাকে জানায়, ‘কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে আমাদের ব্যবসা অনেকটাই কমে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য যে প্রণোদনা কথা বলেছেন সেটা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। আমরা যারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আছি সেই প্রণোদনার টাকাটাও যদি পাই তবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৯ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ৪৬ হাজার ২৯১টি উৎপাদন ইউনিটের মধ্যে ৮৭ শতাংশই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প। বর্তমানে দেশের উৎপাদন খাতের ৩৩ শতাংশ উৎপাদন করে থাকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং এ শিল্পের সঙ্গে ১৩ লক্ষ ৯১ হাজার শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত রয়েছেন।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা