আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দক্ষিণ কোরিয়ার স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম সুবিদিত। যে সব স্টার্টআপ এশিয়াজুড়ে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়, দক্ষিণ কোরিয়া তাদের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করে থাকে। আগ্রহী স্টার্টআপদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া সরকার বেশ কয়েকটি স্টার্টআপ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এর মধ্যে ২০১৬ সাল থেকে চালু হয়েছে কে-স্টার্টআপ গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জ। ব্লুমবার্গ ইনোভেশন সূচকে ‘ কে-স্টার্টআপ ‘ চ্যালেঞ্জের অবস্থান শীর্ষে।
বর্তমানে চলছে এর ২০২১ সালের আয়োজন। যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, লজিস্টিকস, বায়োটেকনোলজি, রোবোটিকস, প্রসাধনী সামগ্রী, নগর উন্নয়নসহ নানা ধরনের সমস্যা সমাধান নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের সাহায্য করা হচ্ছে এ আয়োজনে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্টার্টআপদের জন্য উন্মুক্ত এ-আয়োজনে এখন পর্যন্ত ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইসরায়েল, জর্ডান, তুরস্ক, আজারবাইজান, নেপাল, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান, ফিলিস্তিনের স্টার্টআপরা নির্বাচিত হয়েছে। গত দুই বছর বাংলাদেশের স্টার্টআপরা অংশ নিলেও এখনো কেউ ‘ কে-স্টার্টআপ ‘-এ সুযোগ পায়নি।
এর আগে কোরিয়া আয়োজিত স্টার্টআপ প্রতিযোগিতা ইন-টু-কোরিয়ায় বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তালহা ট্রেনিং এলএলসি ও ফিশ মার্কেট লিমিটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা শফিউল তপন ও তানিয়া চৌধুরী। তাঁদের মতে, ‘আমাদের স্টার্টআপরা তাদের নিজেদের আইডিয়া ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারে না, অথবা অন্য একটা সফল আইডিয়া শুধু কপি করার চেষ্টা করে। স্টার্টআপদের অবশ্যই নিজেদের আইডিয়া, মার্কেট ও কাস্টমার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। তাহলেই কেবল এ রকম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হতে পারবে।’
তবে আশার কথা হলো এরই মধ্যে আমাদের বেশ কয়েকটি স্টার্টআপ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছে। কাজেই কোরিয়ার প্রতিযোগিতায়ও ভালো করতে পারবে বলে তারা মনে করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে শফিউল ও তানিয়া দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র টিম হিসেবে সারা বিশ্ব থেকে আসা ২২টি টিমের প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হন। এ কারণে কোরিয়ার সরকারি ইন্টারন্যাশনাল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম পাঙ্গিও টেকনো ভ্যালির স্টার্টআপ ক্যাম্পাসে ৯ মাস কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তারা।
কোরিয়ান সরকারের আইসিটি ও বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় এবং নাইপার অর্থায়নে ও সহযোগিতায় তাদের তালহা ট্রেনিং এলএলসি সেখানে নিবন্ধিত এবং পেটেন্ট সম্পন্ন করে।
এই চ্যালেঞ্জে বিজয়ীদের এশিয়ায় বিজনেস শুরু করার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাহায্য করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার অত্যাধুনিক রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট ল্যাবগুলোতে প্রোটোটাইপিং, পরীক্ষা ও বিশেষজ্ঞদের সাপোর্ট, সেরা ১০ বিজয়ীর জন্য ৩ লাখ ২০ হাজার ডলারের পুরস্কার, প্রোগ্রামের সময় অনুদান ও আনুষঙ্গিক খরচ, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ডিজিটাল পণ্যগুলোর ব্যবহারের সুযোগ, কোরিয়ার সিলিকন ভ্যালি হিসেবে খ্যাত পাংইয় টেকনো ভ্যালির কেন্দ্রে অবস্থিত গ্লোবাল স্টার্টআপ ক্যাম্পাসে কাজ করার সুযোগ, বিশেষজ্ঞদের মেন্টরশিপ, দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ সংস্থাগুলোর সঙ্গে করপোরেট পার্টনার হওয়া এবং অতিরিক্ত বিনিয়োগের সুযোগ।
চ্যালেঞ্জের অফিশিয়াল ভাষা ইংরেজি। তাই কোরিয়ান ভাষা জানার আবশ্যকতা নেই। নির্বাচিত ৬০টি দলের প্রতিটিকে সাড়ে ৩ মাস কোরিয়ায় থাকার জন্য প্রায় ১১ হাজার ১৪০ আমেরিকান ডলার করে দেওয়া হবে। এরপর ডেমো দিবসে নির্বাচিত শীর্ষ ৩০টি স্টার্টআপ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল, ২০২২ পর্যন্ত আরও ১১ হাজার ১৪০ ডলার পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হবে। এ ছাড়া রয়েছে অতিরিক্ত বিনিয়োগের জন্য স্টার্টআপগুলো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দেখা করতে পারবে।
সাধারণত ব্যবসার পরিকল্পনা, আইডিয়া, এশিয়ার বাজারে সেই সেবা বা পণ্যের মার্কেটিংয়ের কৌশল ও সম্পাদনা পদ্ধতি এবং দলের কর্মক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে প্রাথমিক নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তীকালে সাক্ষাৎকারের সময় অভীষ্ট মার্কেট, বাছাই করা সমস্যার ধরণ, প্রাসঙ্গিকতা, প্রয়োজনীয়তা ও সমাধান, কর্মী, বোর্ড ও পরামর্শদাতা, অন্যান্য প্রতিযোগীর তুলনায় এগিয়ে থাকার সুবিধা, আয়ের মডেল, এশিয়ার বাজারের জন্য উপযোগিতা এবং সর্বোপরি উপস্থাপনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বের দক্ষতা দেখেই স্টার্টআপদের নির্বাচিত করা হয়।
যেসব স্টার্টআপ তাদের ব্যবসা প্রসারণের সুস্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, দক্ষিণ কোরিয়ার বাজার ব্যবহার করে এশিয়ায় তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী, তাদেরই এখানে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ২০১৩ সাল বা তার পরে শুরু হওয়া স্টার্টআপের উদ্যোক্তা বা দলীয় সদস্যদের মধ্যে কমপক্ষে একজনের ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। নির্বাচিত হলে বিজয়ীদের আগস্ট থেকে নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত সাড়ে তিন মাস কোরিয়ায় অবস্থান করতে হবে।
‘ কে-স্টার্টআপ’-এ অংশগ্রহণের জন্য যাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য শফিউল ও তানিয়ার নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন—
১। ন্যাচারাল স্টার্টআপ হলে ভালো।
২। যেকোনো চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত থাকা এবং তা মোকাবিলায় সক্ষম হতে হবে।
৩। নিজের আইডিয়াকে ইনোভেশন পর্যায়ে নিতে পারতে হবে।
৪। আইডিয়ার কোন অংশটা পেটেন্ট করা সম্ভব, তা জানতে হবে।
৫। যেকোনো ইন্টারন্যাশনাল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা