উম্মে সালমা মৌসুমি ছোটবেলা থেকে রান্না করতে পছন্দ করতেন। মায়ের কাছ থেকেই শিখেন এবং আগ্রহ ছিল রান্নার প্রতি। বড় হয়ে সিদ্দিকা কবিরের রান্নার বই থেকে হাতে খড়ি এই উদ্যোক্তার। বিভিন্ন ধরণের দেশি বিদেশি রান্না শিখতে থাকেন বই দেখে। এর মধ্যেই বিয়ে হয়ে যায় মৌসুমির। বিয়ের পরেই মূলত তিনি ব্যবসা শুরু করেন। বিয়ের পর তিন মাসের প্রফেশনাল ট্রেনিং করেন রান্নার ওপর।এরপর কারিগরি বোর্ডের অধীনে বেকিং এবং কুকিং কোর্সও করেন এই উদ্যোক্তা। এর পরেও তিনি চিন্তা করেন তিনি আরও রান্না শিখবেন ডেজার্ট শিখবেন!
তিনি শুরু করেন কেক দিয়ে। বাচ্চারা কেক খেতে পছন্দ করেন তিনি কেক বানানোর সময় লক্ষ্য রাখেন করেন বাটার দিয়ে কেক বানালে কেকটা দুই-এক দিনের বেশি থাকে না কিন্তু দোকানের কেক অনেক দিন থাকে। নিশ্চয় ভেজাল দেওয়ার ফলেই এইটা সম্ভব। তাই তিনি সবার মাঝে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ ভাবেই শুরু হয় উদ্যোক্তা মৌসুমির পথ চলা।
২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে শুরু করেন ব্যবসা। উম্মে সালমা মৌসুমি জানান অনেকে তখন বলেছিল যে, তুমি অনলাইন পেজ খুল। পরিচিতি বাড়াতে তখন তিনি অনলাইন পেজ খুলেন “সুইট বাইট” নাম দিয়ে।
সুইট বাইট নাম দেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আপনি যখন আমার বানান কেক বা ডেজার্ট খাবেন একবার খাওয়ার পর যেন আবার খেতে ইচ্ছে হবে। ভাল লাগবে। তাই আমি সুইট বাইট নামটা দেয়। প্রয়োজনে কম বিক্রি হোক কিন্তু তিনি কেক বা ডেজার্টটা স্বাস্থ্য সম্মত। গুণগত মান বজায় রেখে রাসায়নিক কোন দ্রব্য না দিয়ে ভেজালমুক্ত খাবার বানানোই উনার উদ্দেশ্য।
উম্মে সালমা মৌসুমি’র এই পথ পাড়ি দেওয়াটা এতটা সোজাও ছিলনা, পেয়েছেন অনেক বাধা তার পরেও থেমে থাকেন নি। যখন তিনি প্র্রশিক্ষণের জন্য ৫/৬ ঘন্টা বাহিরে থাকতো তখন পরিবারের লোক বলত তুমি এমনিতেই তো ভালো পারো শেখার কি দরকার টাকা খরচ করে। কিন্তু উম্মে সালমা চাইতো ক্রেতাদের সর্বোচ্চ ভাল খাবারটা খাওয়ানোর জন্য।
আরো এক ধরণের বাধার সম্মুখীন এখন পর্যন্ত হন বলে তিনি জানান, অনেক ক্রেতা এসে জানান অন্য বেকারিতে অনেক কম দামে কেক, ডেজার্ট পাওয়া যায় কিন্তু আপনার কাছে অনেক দাম। তখন আমি তাদের বলি আপনি বাসায় করেন আমি শিখিয়ে দেব। তারপর দেখেন খরচটা কেমন হয় তখন অনেকে বোঝে আবার অনেকে বোঝে না। এইটা একটা বড় সমস্যা।
আমরা যারা ভেজালমুক্ত খাবার তৈরী করি তারা এই সব বেকারীর কাছে হেরে যাচ্ছি এবং আমাদের ভেজালমুক্ত খাবারটা সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না। ভেজালযুক্ত কম দামী খাবারটাই সবাই নিচ্ছে এবং খাচ্ছে।
উম্মে সালমা মৌসুমি এমন একজন উদ্যোক্তা যিনি কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পান। মন খারাপ থাকলে তিনি কেক বা,ডেজার্ট বানানো শুরু করেন তখন তার মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায় একই সাথে কেকটাও তৈরী হয়ে যায়।
সুইট বাইটে পাওয়া যায় কেক ও ডেজার্ট। তিনি ঝাল আইটেম না করলেও অন্য নারীদের শেখাচ্ছেন /প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, প্রফেশনাল ট্রেনিং যেভাবে দেয় ঠিক সেভাবেই আমিও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যাতে করে অন্যরাও ভালো খাবারটা নিজে তৈরী করে খেতে পারেন সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্য সম্মত বাচ্চাদের বার্গার,পিজ্জা জানান এই উদ্যোক্তা।
তিনি আরো জানান, সুইট বাইটের সাধারণ কেকের সর্বনিম্ন মূল্য ৬০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মূল্য সাইজের উপর নির্ভর করে।
ক্রেতাদের সাড়া ভালো পাচ্ছেন বলে জানান এই উদ্যোক্তা। কিন্তু যখন দামের কথা বলি তখন তারা পিছিয়ে যায়। ১০ জন জিজ্ঞেস করলে ২জন নিচ্ছে। এতেই আমি খুশি কারণ বাকী ৮জনের জন্য আমার খাবারের গুণগত মান কমাতে পারবো না। আমি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরী করি এবং করবো এতে আমার ২জন ক্রেতাই ভালো।
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন কাজটা করব, সেই কাজের প্রতি আমাকে বিশ্বাস রাখতে হবে এবং ভাবতে হবে কোন কাজটা করে আমি আনন্দ পাচ্ছি। সেই কাজটা আমি করবো তাহলে আমি সফল হব এবং গুণগত মান বজায় রেখে কাজ করতে পারব।”
তিনি আরো বলেন,”ভেজালমুক্ত শুধু আমাদের সরকার না, আমরা সবাই সচেতন হবো। আমরা সস্তা খাবার কিনে অসাধু ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করব না, সাধু ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিব। অল্প পরিমাণে কিনব, তাও ভালোটা কিনব। যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজালযুক্ত খাবার বাদ দিয়ে ভেজালমুক্ত খাবারের দিকে আসে।”
তিনি চান ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হবে ভেজালমুক্ত খাবারের দেশ। ভেজালযুক্ত খাবারের কারণেই বাংলাদেশের মানুষের এত রোগ-বালাই হয়। যদি অমরা খাবার ব্যবসায়ীরা ভেজালমুক্ত খাবার তৈরী করি তাহলে একটা সুন্দর রোগমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
খাদিজা ইসলাম স্বপ্না